
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারে ছিলেন সরব। ছিলেন রাতের ভোটের কারিগর। এসব গুরুতর অভিযোগে প্রশাসনিক শাস্তি হওয়ার কথা থাকলে তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বলছি বিতর্কিত উপসচিব মো. ইমরান আহমদ ও যুগ্ম সচিব এজেডএম নুরুল হকের কথা। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিচারের পরিবর্তে তাদের এখন পুনর্বাসন করা হচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে।
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে ইমরান আহমদ আচরণবিধি ভেঙে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চেয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। আর নুরুল হক ছিলেন আলোচিত ‘রাতের ভোটের’ একজন কারিগর। অথচ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং দেওয়া হয়েছে ‘সেফ চেয়ার’ ও প্রজেক্ট পরিচালনার দায়িত্ব। আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরও তাদের ‘সেফ জোনে’ বহাল থাকা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিতর্কিত এসব কর্মকর্তাকে রক্ষা করতে মন্ত্রণালয়ের ভেতরের শক্তিশালী একটি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলেও জানা গেছে।
সম্প্রতি বদলি বাতিল নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা দেখা দিলে মন্ত্রণালয়ে এসব আওয়ামী আমলার ঘাপটি মেরে থাকার বিষয় সামনে আসে। সূত্রমতে, গত ১৩ জুলাই উপসচিব মো. ইমরান আহমদকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি আপিল বোর্ডে বদলির প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ২০ তারিখের মধ্যে বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় আগামী ‘উল্লিখিত তারিখ অপরাহ্ন’ হতে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হবেন। ১৭ তারিখে তার বদলির আদেশ বাতিল করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠালেও এর আগের দিন ১৬ তারিখে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে তার বদলির আদেশ বাতিল করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালে জামালপুরে জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন এই ইমরান আহমদ। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর মাদারগঞ্জ পৌরসভার নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য দেন। এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য’ পুনরায় নির্বাচিত করে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এটা হবে আমাদের প্রত্যেকের অঙ্গীকার। এ সময় তিনি আগামীতে জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমকে মন্ত্রী হিসেবে দেখার আশা ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, এটা প্রত্যেককে অঙ্গীকার করতে হবে। আপনারা এ সরকারের (আ.লীগ সরকারের) এত উন্নয়ন নিজের চোখে দেখে সরকারের প্রতি অকৃতজ্ঞ হবেন না।
তার এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে ১৪ সেপ্টেম্বর জামালপুরের জেলা প্রশাসক পদ থেকে প্রত্যাহার করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী এই কর্মকর্তা বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) এবং পরিচালক (তথ্য প্রযুক্তি, গবেষণা ও পরিকল্পনা) পদে দাপটের সঙ্গে বহাল আছেন। তাছাড়া প্রমোশন দায়িত্ব হিসেবে তাকে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে ডায়াস্পোরা প্রকল্পের পরিচালকেরও (পিডি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দিনের ভোট রাতে করায় সাবেক ৩৩ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ওএসডি করা হয়। তারা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেখানে রয়েছেন বর্তমানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এজেডএম নুরুল হক। যিনি ওই সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
অন্যদিকে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, ‘সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না; অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপসচিব ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমার কোথায় বদলি হলো বা না হলো, তা জেনে আপনাদের সাংবাদিকের কী কাজ। মন্ত্রণালয় মনে করছে, তাই আমার বদলি বাতিল করেছে। তাছাড়া এসব নিয়ে লিখলে আমি সর্বোচ্চ ওএসডি হব। রিজিক তো আর যাবে না। কিন্তু এতে তো আপনি আমার চেয়ারে এসে বসবেন না। আমার চেয়ারে আমার পদবির কেউ এসে বসবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, আপনারা এত না খোঁচালে কি হয় না। এখান থেকে চলে গেলে অন্য কোথাও বসব।’
যুগ্ম সচিব এজেডএম নুরুল হকের বক্তব্য জানতে চাইলে তার অফিসিয়াল টেলিটক নম্বরে ফোন দিলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।