Image description

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার প্ল্যান্টে শুক্রবার দিবাগত রাতে সংঘটিত হয়েছে দুর্ধর্ষ ডাকাতি। বাস্তা ইউনিয়নের গলগলিয়া গ্রামে সেতুর টোল প্লাজার পাশে অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাতভর তাণ্ডব চালিয়ে ২০ জনের একটি ডাকাত দল প্ল্যান্টের ১০ নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মচারীদের হাত-পা বেঁধে জিম্মি করে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেরানীগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সিকদার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান পাওয়ারপ্যাক হোল্ডিংস লিমিটেডের। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইনচার্জ কবির জানান, শিকদার গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে গতকাল রাত সাড়ে ৭টার দিকে ২০ জনের একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা কৌশলে অস্ত্রের মুখে নিরাপত্তাকর্মীসহ ১০ জন কর্মচারিকে জিম্মি করে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে।

তিনি জানান, পরে প্ল্যান্টে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও জিম্মি করে একটি ভবনে আটকে রাখে। এরপর রাতভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লুটপাট চালায় ডাকাতরা। এ সময় প্ল্যান্টের ভেতরে থাকা কয়েকটি কন্টেইনার থেকে মূল্যবান ক্যাবল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ লুট করে তারা। অফিস রুমগুলো থেকে মূল্যবান উপকরণ, ল্যাপটপ, মোবাইল, কম্পিউটার ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।

তিনি আরও জানান, তিনটি বড় ট্রাকে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ, ক্যাবল, ল্যাপটপ, মনিটর, ব্যাটারি, মুঠোফোন ইত্যাদি লুট করা হয়। প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে মালামাল ট্রাকভর্তি করে নেওয়ার পর ডাকাতরা প্লান্টের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

শুক্রবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে যাত্রাবাড়ী থেকে কর্মস্থলে পৌঁছালে সিকিউরিটি গার্ড তামিমকে গেটের সামনে কয়েকজন ব্যক্তি জোরপূর্বক হাত বেঁধে ফেলে। চিৎকার করার চেষ্টা করলে পিস্তল দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। তামিম বলেন, “আমি গেটের ভেতরে দুই ভাগে ছয়জনকে দেখতে পাই, যাদের বয়স ২৫-৩০ বছরের মধ্যে।”

ইমাম শফিকুল ইসলাম জানান, এশার নামাজ পড়াতে পাওয়ার প্লান্টে এলে অপরিচিত একজন গেট খুলে দেয়। ভিতরে প্রবেশ করতেই ৪/৫ জন তাকে ধরে আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়, যেখানে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় অন্যান্যদের রাখা হয়। তার মতে, ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা অন্তত ২০ জন এবং সবার হাতে ছুরি ও কয়েকজনের হাতে পিস্তল ছিল।

প্লান্টের কর্মী করম আলী বলেন, “আমরা ভেতরে ১০ জন দায়িত্বে ছিলাম। ডাকাতরা খুঁজে খুঁজে আমাদের ধরে আনে, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং সিসিটিভির এক্সেস জানতে চায়।”
অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট একরামূল হক জানান, তার রুমে ঢুকে পড়া ৩/৪ জনকে ঠেকানোর চেষ্টা করলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। তিনি বলেন, “কমপক্ষে তিনজনের কাছে পিস্তল ছিল, কথা বললেই তারা শরীরে আঘাত করছিল।”

স্টাফ আবু নাইম বলেন, রাত ১২টার পর তিনটি বড় ট্রাকে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ, ক্যাবল, ল্যাপটপ, মনিটর, ব্যাটারি ইত্যাদি লুট করা হয়। প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে মালামাল ট্রাকভর্তি করে নেওয়ার পর ডাকাতরা প্লান্টের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

প্লান্ট ইনচার্জ কবির জানান, ঘটনার সময় ভেতরে সিকিউরিটি গার্ডসহ ১০ জন কর্মী ছিলেন। শনিবার স্থানীয় থানা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রধান কার্যালয়ের হিসাবের পর লুট হওয়া মালামালের সঠিক মূল্য জানা যাবে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মোহাম্মদ আক্তার হোসেন জানান, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর বাহিরে এই বিষয়ে এখন মন্তব্য করার কিছু নাই। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন আটক নেই বলে তিনি জানান।

সূত্র জানায় সশস্ত্র ডাকাতরা নদীপথে - ট্রলার ব্যবহার করে - এবং ট্রাকে করে সড়কপথে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছেছিল। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন যে ডাকাতরা স্থানীয় হতে পারে, কারণ তাদের মুন্সিগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে।

বেসরকারী উদ্যোগে নির্মিত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কেরাণীগঞ্জ উপজেলাধীন বাস্তা ইউনিয়নের অন্তর্গত ১ম-ধলেশ্বরী সেতুর টোল প্লাজার পাশে (গলগলিয়া গ্রামে) অবস্থিত। এটি গত ০২ ডিসেম্বর, ২০১২খ্রি: তারিখে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে।

শীর্ষনিউজ