Image description
 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রদলের কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন হত্যা মামলার পলাতক তিন আসামি। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন সময় মাদক ও ছিনতাইয়ের কারণে বহিষ্কার হওয়া অনেককে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। 

শুক্রবার কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৭০ সদস্যের বর্ধিত কমিটির তালিকা ঘোষণা করা হয়। একই দিন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ১১ ছাত্র হল, ৬ ছাত্রী হল, একটি অনুষদসহ ৮৮ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 
 

কমিটিতে হত্যা মামলার তিন আসামি 

ক্যাম্পাসে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লাকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আটজনের নাম উল্লেখসহ আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ২০ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা করে। ওই মামলার তিন পলাতক আসামি ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারও করেছিল প্রশাসন।

শামীম মোল্লা হত্যার পর দিন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, অভিযুক্তরা ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবু ৮ আসামির মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান, রাজু আহমেদ ও মোহাম্মদ রাজন মিয়া নতুন কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। এর মধ্যে হামিদুল্লাহ সালমান বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সভাপতি ও বর্ধিত কমিটির সদস্য, রাজু আহমেদ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মোহাম্মদ রাজন মিয়া সদস্য হয়েছেন। হামিদুল্লাহ সালমানের বাবা আব্দুর রহিম চাঁদপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ছিলেন।

শামীম মোল্লা হত্যা মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে। তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান বাপ্পী জানান, এ মামলায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন জাবি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান রায়হান ও সাইফুল ইসলাম ভুইয়া। এছাড়া আতিক নামে একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। বাকিরা এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ছাত্রদলের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কী এ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না–এমন প্রশ্নে ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘না, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় তদন্তে কোনো প্রভাব ফেলেনি। তদন্ত চলমান রয়েছে, কোনো শৈথিল্য দেখানো হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন নাসির বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন বাবর বলেন, ‘তিনজনের দীর্ঘদিনের ত্যাগ, শ্রম ও মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।’

ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে 

শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অনেকেই ছাত্রদলের কমিটিতে পদ পেয়েছেন। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ছবিও সমকালের হাতে এসেছে।

ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রোকেয়া হলের সভাপতির পদ পাওয়া কাজী মৌসুমী আফরোজ, ফজিলাতুন নেছা হলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া সাবরিনা সুলতানা সুরভী, ২১ নম্বর ছাত্র হলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া ফিরোজ আহমেদ রিমন, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে সিনিয়র সহসভাপতি পদ পাওয়া খায়রুল ইসলাম নাহিদ, ১০ নম্বর ছাত্র হলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া ইমন মোল্লা, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া মো. রাকিব মাওলা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। 

বর্ধিত কমিটির সদস্য আল আমিন, মো. তানভীরুল আরেফিন কবির পাপন, শাবাব সবুজ অর্ণব, শিপন হোসাইন ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া মো. শাকুর বাপ্পী ও সুমন খান জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে। 

ফজিলাতুন নেছা হলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া সাবরিনা সুলতানা সুরভী বলেন, ‘আমার পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমি সেই আদর্শে বিশ্বাস করি। কয়েকটা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ জোর করে আমাকে নিয়ে গেছে।’ 

বর্ধিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া মো. শাকুর বাপ্পী জানান, ‘প্রথমবর্ষে ছাত্রলীগের কয়েকটা প্রোগ্রামে বাধ্য হয়ে যেতে হয়েছে, এরপর আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’

রোকেয়া হলের ছাত্রদলের সভাপতির পদ পাওয়া মৌসুমি আফরোজ বলেন, ‘ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমার যেসব ছবি রয়েছে তা সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে একটি মিটিংয়ের ছবি। আমি সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবেই সেখানে যাই।’ তবে তাঁর ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাওয়ার ছবিও সমকালের কাছে রয়েছে। 

ছিনতাই, মাদকের কারণে বহিষ্কৃত হয়েও কমিটিতে

থার্টিফার্স্ট নাইটে মাদকসহ আটক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিপন হোসাইন ও সতীর্থ বিশ্বাস বাঁধন সদস্য হিসেবে বর্ধিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। গত বছরের ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা স্কুলশিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগে বহিষ্কার হয়েছিলেন ইমরান নাজিজ। তাঁকেও রাখা হয়েছে কমিটিতে।

জানতে চাইলে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর সমকালকে বলেন, ‘যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে কমিটি করা হয়েছে। এরপরও বিতর্কিত অনেকে হয়তো রয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’