
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সরকারের মূল লক্ষ্য এখন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। সরকারের ‘দ্বিতীয় অধ্যায়’ শুরু হয়েছে, যার প্রধান ফোকাস হলো নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে, প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারের মূল লক্ষ্য ইতিহাসের সর্বোত্তম একটি নির্বাচন উপহার দেওয়া। গতকাল সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৮ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হবে। যার মধ্যে ৬০ হাজার সেনাসদস্যও থাকবেন। প্রয়োজন হলে আরও বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করাও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আলজাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদনের বরাতে বিশ্ববাসী এখন জানে, শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেই দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হবেন এমনটি সরকার আশা করে। এ ছাড়া তিনি বিগত এক বছরে সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। যেমন খাদ্য মজুত বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং প্রশাসন ভেঙে পড়ার অভিযোগের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় অপরাধ ও খুনের সংখ্যা আসলে কম। প্রশাসন ভেঙে পড়লে গত এক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত অর্জন সম্ভব হতো না। পুলিশকে প্রতি মাসে অপরাধের চিত্র প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা এবং সাংবাদিকদের সেই তথ্য যাচাই করার আহ্বান জানান প্রেস সচিব।
তিনি সরকারের অর্জনের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনার পালানোর সময় ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুত ছিল, যা এখন বেড়ে ২১ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এবং ব্যাংক পরিস্থিতি ও রিজার্ভের উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব অর্জন আমলাতন্ত্রের মাধ্যমেই হয়েছে এবং আমলাতন্ত্র ভেঙে পড়লে ছয়টি বন্যা মোকাবিলা করা সম্ভব হতো না। পুলিশ সক্রিয় হলে সেনাবাহিনী কেন মাঠে নামছে—এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, এ ধরনের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সেনাবাহিনী মাঠে নামানো একটি সাধারণ প্রক্রিয়া।
প্রেস সচিব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে বৃহস্পতিবার অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তার সূচনা বক্তব্যে বলেছেন, গত ৫ আগস্ট আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু। এ লক্ষ্যে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর থেকে কমিশনকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য বলা হয়েছে।
বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের তারিখের বিষয়টা নির্বাচন কমিশন দেখে। এটা তাদের দায়িত্ব, তারাই আপনাদের জানাবে। নির্বাচনের বিতর্ক এড়াতে এসপি ওসিদের লটারির মাধ্যমে নিয়োগ হবে। সেক্ষেত্রে ডিসি নিয়োগে বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শিগগির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল অংশ নিতে পারবে কি না বা এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। সরকারের তরফ থেকে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যতদিন না পর্যন্ত তাদের লিডারদের বিচারটা শেষ হচ্ছে।