
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে গোসলে নেমে ডুবে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘সি-সেফ লাইফগার্ড’। যাদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে সৈকতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫। প্রকল্পের কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, দাতা সংস্থার সহায়তা না পেলে আগামী সেপ্টেম্বরে ১০ বছর ধরে চালু থাকা এই উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সি-সেফ লাইফগার্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৯৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ’ (সিপিআইআরবি) জানিয়েছে, প্রকল্পটি শুরুর ১৪ বছরে সাগরে ভেসে যাওয়া মোট ৭৯৫ জন পর্যটককে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজারের হিমছড়ি জাদুঘর সংলগ্ন সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে ডুবে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানকে নিখোঁজের এক মাস পার হলেও উদ্ধার করা যায়নি। গত ৮ জুলাই সকালে বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণে গিয়ে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে তিনি নিখোঁজ হন। একই ঘটনায় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের আরও দুই শিক্ষার্থীকে এম সাদমান রহমান সাবাব ও আসিফ আহমেদ মারা যান।

ঘটনার দিনই ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা সাবাবের মরদেহ উদ্ধার হয়। পরদিন সকালে সমিতিপাড়া উপকূলে ভেসে আসে বগুড়ার আসিফ আহমেদের লাশ। তবে বগুড়ার সম্ভাবনাময় তরুণ অরিত্রকে এখনও ফিরিয়ে দেয়নি সাগর। নিখোঁজের পরপরই ট্যুরিস্ট পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযান শুরু হয়। প্রতিদিন সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চালানো হলেও ব্যর্থ হতে হয়েছে উদ্ধারকারী দলকে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছি। ফলাফল না এলেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া আছে খোঁজ অব্যাহত রাখার জন্য।’
উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন সি-সেফ লাইফগার্ড প্রকল্পের কর্মীরাও। তাদের একজন, মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘অরিত্রের ভাগ্য কী হয়েছে, তা কেবল আল্লাহই জানেন। গভীর সাগরে যাওয়া জেলেদেরও সতর্ক করা হয়েছে, যেন কোনো মরদেহ দেখতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়।’
অরিত্র নিখোঁজের পরপরই কক্সবাজার চলে আসে তার পরিবার। ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার আশায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ উদ্ধার দলের সঙ্গে টানা দুই সপ্তাহ সৈকতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটেছেন অরিত্রের বাবা-মা। ঢাকায় একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেন অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান, ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েননি তিনি।
অরিত্রের বাবা সাকিব বলেন, ‘অরিত্র আমার একমাত্র সন্তান। যতদিন বেঁচে থাকব, তাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব। যেকোনো অবস্থাতেই হোক, আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।’