Image description
 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রক্সি জালিয়াতির অভিযোগে ৩ জনকে আটক করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আটক ব্যক্তিরা হলেন ত্রিশালের ওবায়েত হাসান আফিক, মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরের পনির উদ্দিন খান পাভেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় ঘটনাটি প্রকাশ পায়। ওইদিন ত্রিশালের চরপাড়ার বাসিন্দা ওবায়েত হাসান আফিক (গুচ্ছ ভর্তি রোল ২০১৬৯৭) ভাইভা বোর্ডে নিজের স্বাক্ষর সঠিকভাবে দিতে ব্যর্থ হন, প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে তার চেহারার মিল পাওয়া যায়নি এবং বিজ্ঞান বিভাগের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় শিক্ষকদের সন্দেহ হয়।

পরে অভিভাবক পরিচয়ে পাভেল নামে একজনকে ডাকা হলে, তাদের কথাবার্তায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে। শিক্ষকরা আফিকের ফোন চেক করে পাভেলের সঙ্গে ভর্তির লেনদেন ও স্বাক্ষর করার নির্দেশনা সংক্রান্ত হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পান। পাভেলের ফোন তল্লাশি করে অসংখ্য ভর্তি ও চাকরিপ্রার্থীর এডমিট কার্ড ও ছবি উদ্ধার হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আফিক শেষ পর্যন্ত প্রক্সি জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন।

এ সময় পাভেলের ফোনে ‘সিয়াম’ নামের একজন কল করলে অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায়, “ভর্তির কি অবস্থা ভাই?”।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেসে খুঁজে দেখা যায়, ওই সিয়াম আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম।

সিয়ামকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায়, তিনি লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হওয়া কৌশিক কুমার চন্দের হয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন (গুচ্ছ রোল ২০৪৩৯৩)। এ প্রক্সি পরীক্ষার জন্য পাভেল তাকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিয়ামের ফোনে শান্ত ভূইয়া নামের এক শিক্ষার্থীর কল আসে, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সিয়ামের বন্ধু। শান্তর মাধ্যমেই পাভেলের সঙ্গে সিয়ামের পরিচয় হয়েছিল বলে জানা যায়।

তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, সিয়ামের ফোনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সদ্য ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর ওএমআর-এর ছবিও পাওয়া গেছে। সেই শিক্ষার্থীর নাম পুনিয়া দে মৃদু।

পাভেল স্বীকার করেন, তিনি ‘বাবু’ নামে আরেক ব্যক্তির নির্দেশে এসব কাজ করেন এবং ভর্তি সংক্রান্ত সব বিষয় বাবুই তদারকি করেন। কৌশিককে ভর্তি করানোর জন্যও বাবু সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

এ ঘটনায় এখনও জানা যায়নি, ওবায়েত হাসান আফিকের হয়ে ঠিক কে পরীক্ষা দিয়েছিল। তবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আফিক ও কৌশিক — দুজনের প্রক্সি পরীক্ষাই জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ঘটনার পর গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষাকেন্দ্রে অসচ্ছতা এবং জামালপুর কেন্দ্রকে ঘিরে সক্রিয় জালিয়াতি চক্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে রবিবার কমিটি গঠন করা হবে এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুরো চক্রের সন্ধান বের করার চেষ্টা চলবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি জামালপুরে ঘটেছে, কিন্তু এখানে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত চেষ্টায় ধরা পড়েছে। তদন্ত করলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।’

শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তদন্তে যেন পুরো জালিয়াতি চক্রের তথ্য প্রকাশ্যে আসে।