Image description

পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই ভয়াবহ রকমের অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি অর্থের অপব্যয় ও আত্মসাত হয়েছে। সরকারের নিরীক্ষা প্রতিবেদনেই এর কিছুটা চিত্র বেরিয়ে এসেছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ১৩ হাজার ৩ শত, ৬১ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। তারমধ্যে ‘গুরুতর অনিয়ম’ অর্থাৎ যেগুলো মোটেই ‘মীমাংসা যোগ্য নয়’ এ রকমের অনিয়ম রয়েছে ৯ হাজার ৬ শত ৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু মীমাংসা যোগ্য না হলেও এগুলো ক্রমেই ধামাচাপা পড়ে যাবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, এই প্রকল্পের শুরু থেকেই যিনি দুর্নীতির মূল হোতা বা নাটের গুরু হিসেবে ছিলেন সেই মো. আফজাল হোসেন এখন খোদ রেল বিভাগেরই মহাপরিচালক অর্থাৎ সর্বোচ্চ পদে। সবকিছু তারই নিয়ন্ত্রণে, এমনকি দুদকও। দুদকের একজন কর্মকর্তাকে আফজাল হোসেনের অলিখিত ব্যবসায়িক পার্টনারও বলা হয়ে থাকে। আফজাল হোসেন এখন একেতো অগাধ অবৈধ অর্থের মালিক, তার ওপর আবার মহাপরিচালকের মতো ভিআইপি পদে। তাছাড়া ছাতা হিসেবে রয়েছেন খোদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আর দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার সরাসরি দায়িত্বে রয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অডিট বিভাগ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা। এ কাজের জন্য তাদের হাতে বরাদ্দ আছে বড় অংকের ফান্ডও।

শুধু ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এই প্রতিবেদনই নয়, ইতিপূর্বে প্রকল্পটির শুরু থেকেই প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার অডিট আপত্তি হয়েছে। যার অনেকাংশই মো. আফজাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সদস্যরা ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন। সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের হাতে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের শুরুতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ২৯টি অডিট আপত্তি হয়েছে। এরমধ্যে ছিল উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই বিভিন্ন মালামাল ক্রয়, চুক্তি অপেক্ষা কম পরিমাণ গ্যালভানাইজ এইচ বিম স্টিল স্লিপার সরবরাহ, জরুরি না হওয়া সত্ত্বেও সীমিত দরপত্রের মাধমে মালামাল ক্রয়, অস্বাভাবিক ব্যয় প্রভৃতি বাবদ ক্ষতি ও অর্থ আত্মসাত। পরবর্তীতে অডিট অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে এবং রেল বিভাগের জবাবের মাধ্যমে এগুলো অনেকাংশই ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। পরের বছরগুলোতেও এ রকমেরই চিত্র ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রথমদিকে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান নিজে উদ্যোগী হয়ে এ প্রকল্পের ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়েছেন। অবশ্য ছাত্র-জনতার দাবি এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্তও ছিল এ বিষয়ে। গত সেপ্টেম্বরে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির পদ্মা রেল সেতু এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্পটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অত্যন্ত হতাশা ব্যক্ত করেন। মনে করা হয়েছিল যে, বহুল আলোচিত এ প্রকল্পটির অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন উপদেষ্টা। এর কিছুটা তৎপরতা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পরবর্তীতে সবকিছুই উলট-পালট হয়ে যায়। সবাইকে চমকে দিয়ে দুর্নীতিবাজ মো. আফজাল হোসেন রেলওয়ের সবচেয়ে শীর্ষ পদ বাগিয়ে নেন। আর এর মধ্য দিয়ে পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সকল সম্ভাবনা ভেস্তে যায়। 

শুধু তাই নয়, ডিজি আফজাল হোসেন এখন উল্টো এ প্রকল্পের ব্যয় কমানোর কৃতিত্বও দাবি করছেন। এবং এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। যদিও প্রকল্পটির অস্বাভাবিক ব্যয়ের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি হয়েছে তাঁর হাত দিয়েই। তিনি প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে এ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি থেকে প্রকল্পের অনুমোদন এবং পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধির সকল কার্যক্রমও নিজের হাতে সম্পন্ন করেছেন। বস্তুত, ৫ আগস্টের পরে ছাত্র-জনতার দাবি, উপদেষ্টার পদক্ষেপ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কয়েক স্তরের আলোচনার ফলাফল হিসেবে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয় কমানো হয়। আদতে এই ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের সুযোগও ছিল না। কারণ, যেসব খাতে ব্যয়গুলো ধরা হয়েছে তাতে ব্যয়ের কোনো প্রয়োজনীয়তাও ছিল না। শুধুমাত্র লুটপাটের জন্যই ডিপিপি-তে এসব অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল।  

সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত যে অডিট প্রতিবেদন এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে ঠিকাদারকে অবৈধ সুবিধা দেয়ার জন্য মূল চুক্তির বাইরে BOQ- তে ৫৫৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণে মূল নকশার চেয়ে গড়ে ১.৭ মিটার কম উচ্চতায় (সংশোধিত নকশা অনুযায়ী) মাটি ভরাটসহ অন্যান্য আইটেমের পরিমাণ কমে যাওয়া সত্ত্বেও ঠিকাদারদের অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এ রকমের ভয়াবহ অনিয়মের মাধ্যমে ২,১৩০ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণে মূল স্পেসিফিকেশনের চেয়ে বালির স্তরের পরিমাণ গড়ে ২০০ এমএম কম প্রদান করা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিল প্রদান করা হয়েছে ২১৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রগ্রেস রিপোর্টের তুলনায় কাজ বেশি দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১০১১ কোটি টাকা। পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের কাজকে ‘বিশেষায়িত’ কাজ দেখিয়ে প্রাক্কলনের ১৭.১৫% উচ্চমূল্যে (ইপিসি/টার্নকি) চুক্তি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে আত্মসাত হয়েছে ৩,৬০৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এভাবে নানা অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের ১৩ হাজার ৩শ’ ৬১ টাকা আর্থিক ক্ষতি ও আত্মসাত করা হয়েছে। এসব টাকা ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। অবশ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়েও এই টাকার ভাগবাটোয়ারা গেছে।

প্রকল্পটির নজিরবিহীন উচ্চ ব্যয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, দুর্নীতি-লুটপাট সবকিছুই হয়েছে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেনের পরিকল্পনায়। এই প্রকল্পের সুবাদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গেও আফজাল হোসেনের যোগাযোগের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কৌশলগত কারণে মাঝে কিছুদিন এ প্রকল্পে না থাকলেও প্রকল্পের ওপর পুরো প্রভাব তাঁর বরাবরই বজায় ছিল। প্রকল্পের সাব-কন্ট্রাক্টররা প্রায় সবাই ছিল তাঁর নিয়োজিত। পরবর্তীতে পিডি পদেরও দায়িত্ব পান তিনি। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ২০২১ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত তিনি এই পদেই ছিলেন। বর্তমানে এই প্রকল্পের পিডি পদে আছেন নাজনীন আরা কেয়া। আফজাল হোসেনই তাঁকে এ পদে বসার ব্যবস্থা করেছেন। পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই আফজাল হোসেনের রানিং মেট হিসেবে সকল অপকর্মের সহযোগী ছিলেন এই নাজনীন আরা। শুরুতে আফজাল হোসেন ছিলেন প্রধান প্রকৌশলী, নাজনীন আরা কেয়া অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এরপরে নাজনীন আরা প্রধান প্রকৌশলী হন, এখন প্রকল্প পরিচালক। নাজনীন আরা কেয়ার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। বিগত আমলে আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে দাপট দেখিয়ে চলেছেন। এখন ডিজির দাপটে চলছেন। আফজাল হোসেনের শ্বশুর বাড়ি ফরিদপুরে। সেই হিসেবে উভয়ের সম্পর্ককে শ্যালিকা-দুলাভাইও বলে থাকেন অনেকে। অবশ্য অন্য সম্পর্ক যা-ই থাকুক, পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের বেপরোয়া দুর্নীতি-লুটপাট হয়েছে উভয়ের নেতৃত্ব ও সমঝোতায়। আর এ কারণেই আফজাল হোসেন নিজে ডিজি পদে পদোন্নতির পাওয়ার পর নাজনীন আরা কেয়া- কে এই পদে পদায়নের ব্যবস্থা করেছেন। যাতে দুর্নীতি-লুটপাট সবকিছু সহজভাবে ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হয়, পাশাপাশি আরো কিছু টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এ প্রকল্পের দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার কাজে ডিজি আফজাল হোসেন বড় অংকের অর্থ বরাদ্দ করেছেন এবং একটি টিমও গঠন করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।  

এই টিমে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা- যুগ্মসচিব (অডিট ও আইসিটি) মীর আলমগীর হোসেন এবং উপসচিব (অডিট-২) হোসনে আরা, পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পের উপপরিচালক (ব্রিজ বায়াডাক্ট) শামীমা নাসরিন (বিথি), উপপরিচালক (ইলেক্ট্রিক) ফারহানা সুলতানা এবং প্রধান পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। ফারহানা সুলতানা এবং শামীমা নাসরিন উপপরিচালক হেডকোয়ার্টার পদেও আছেন। ফারহানা সুলতানা প্রকল্প পরিচালকের পিএস’র ভূমিকায়ও ছিলেন। চুক্তিপত্রসহ অনেক কিছু তাঁর হাত দিয়েই হয়েছে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেনদেনও। অন্য উপ-পরিচালক শামীমা নাসরিন বিথি নানা কারণেই অত্যন্ত প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তিনি ডিজি আফজাল হোসেনের একান্ত আস্থাভাজন। পদ্মা প্রকল্পের আগে আফজাল হোসেন ঢাকা-টঙ্গী প্রকল্পে থাকাকালে শামীমা নাসরিন তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। সেই ঘনিষ্ঠতার ধারাবাহিকতায় আফজাল হোসেন যখন পদ্মা প্রকল্পে পিডি হয়ে আসেন এখানেও পদায়নের ব্যবস্থা করেন শামীমাকে। পদ্মায় উপপরিচালক (ব্রিজ বায়াডাক্ট) এবং উপপরিচালক, হেডকোয়ার্টার বা একান্ত সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। পিডির হয়ে তিনি সকল চুক্তিপত্র, অডিট রিপোর্ট, সভা, যোগাযোগসহ প্রায় সকল কাজে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। মাঝে তাকে বদলি করা হলেও আফজাল হোসেন তাকে আবার এখানে পদায়নের ব্যবস্থা করেন। নাজনীন আরা কেয়া আসার পরও একই পদে বহাল আছেন। অনিয়ম-দুর্নীতি, অডিট আপত্তি ধামাচাপা দেয়ার অঘোষিত এই টিমের প্রধান পদে যিনি আছেন, মীর আলমগীর হোসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়েই প্রায় ৮ বছর ধরে বিভিন্ন উইংয়ে কাজ করছেন। রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনেকটা ভাই ভাই সম্পর্ক তাঁর। আনসার ক্যাডারের এই কর্মকর্তা দুর্নীতিতে অত্যন্ত পটু। আর এ কারণেই আফজাল হোসেন তাঁকে এ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন আনঅফিসিয়ালি। আফজাল হোসেন এবং আলমগীর হোসেন উভয়ের বাড়িও একই জেলা, টাঙ্গাইল-এ। উপসচিব হোসনে আরা রেল ক্যাডারেরই অফিসার। তিনি বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প অডিটের দায়িত্বে রয়েছেন। কীভাবে এসব ভয়াবহ দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়া যায় সেই কলাকৌশল এরা তৈরি করছেন। আফজাল হোসেন যেহেতু ডিজি পদে আছেন এবং উপদেষ্টার গুডবুকে রয়েছেন তাই অডিট বিভাগকে ম্যানেজসহ সবকিছু তাদের জন্য সহজ হচ্ছে। দুদক ম্যানেজ করার দায়িত্বে আছেন আফজাল হোসেন নিজেই সরাসরি। দুদকের একজন কর্মকর্তাকে তিনি অঘোষিতভাবে নিজের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন বলে জানা হেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর একই পথে আবার পদ্মা রেল সেতু নির্মাণের প্রয়োজন ছিল না। তারপরও প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে শুধুমাত্র সরকারি অর্থ আত্মাসাতের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই। বাস্তবে হয়েছেও তাই। চীনা দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে এবং তাদের পরামর্শে অনেকটা হঠাৎ করেই এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, ডিপিপি তৈরি, একনেক অনুমোদন প্রভৃতি কাজগুলো হয়েছে অত্যন্ত দ্রুততা এবং গোপনীয়তার সঙ্গে। এমনকি একনেক অনুমোদনের পরও অনেক কিছুতে রাখঢাক ছিল। দুর্নীতিবাজ বলে চিহ্নিত চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। চীন সরকারের উচ্চহার সুদের ঋণে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল।

যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের যেসব ভুয়া হিসাবকে সামনে রেখে এই বৃহৎ প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে তা আদৌ কখনো বাস্তবায়িত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ সক্ষমতা অনুযায়ী কাক্সিক্ষত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন কখনোই সম্ভব হবে না। অদূর ভবিষ্যতেও সেই পরিমাণ যাত্রী বা মালামাল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ২৪ জোড়া যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সবেমাত্র ৫ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারছে। তাও রেল পরিচালনা বাবদ প্রতি মাসে বড় অংকের লোকসান দিতে হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষকে। মালবাহী ট্রেন এখনো শুরুই করা যায়নি। পদ্মা সেতুর কারণে সড়ক পথেই এখন সবাই মালামাল পরিবহনে আগ্রহী। একেতো অস্বাভাবিক ব্যয় দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। তারওপর যা কিছু নির্মাণ হয়েছে সেটাও সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি দেখেই গত সেপ্টেম্বরে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান অত্যন্ত হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু এসব অপকর্মের মূল হোতা যিনি সেই মো. আফজাল হোসেনকেই উপদেষ্টা শাস্তির পরিবর্তে পরবর্তীতে পুরস্কৃত করলেন ডিজি পদে পদোন্নতির মাধ্যমে। এখন আবার হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি-অডিট আপত্তি ধামাচাপা দেয়ারও সুযোগ করে দিচ্ছেন তাকে ডিজি পদে বহাল রেখে।
শীর্ষনিউজ