Image description
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন

রাষ্ট্র সংস্কারে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হতে যাওয়া জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে- সে পথ খুঁজছে সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এজন্য বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ধরনের বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে তা স্পষ্ট করেনি কমিশন। আবার জুলাই সনদ কতদিনের মধ্যে স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হবে সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে স্পষ্ট বার্তা নেই। তাদের ভাষায়- বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন।

এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নানা ধরনের শর্ত দেওয়া শুরু হয়। কোনো কোনো দল জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি জানায়। আবার কোনো দল রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পরিবর্তন হলে সনদে স্বাক্ষর করা হবে কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে বলে বার্তা দেয়। এদিকে সরকারের মেয়াদপূর্তির দিন শুক্রবার এসব নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কমিশন। সেখানে সাংবাদিকদের জানার মূল আগ্রহের বিষয়বস্তু ছিল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ কী হবে। এনিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হন কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদদের কাছে মতামত নেওয়ার কথা বলেন। আলী রীয়াজ জানান, মূলত জুলাই সনদ বাস্তবায়নেরর পথ খুঁজছে কমিশন। এ ধরনের সনদ নিয়ে বৈশ্বিক অবস্থা কী তা জানতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সফলতা নিয়েও।

আলী রীয়াজ বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের ‘সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া’ দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এ নিয়ে ঐকমত্য হলে সনদ সইয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে, অন্য মত পেলেও বিবেচনা করা হবে। তিনি জানান, এখন ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার পথ কী হবে তা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলের দিকে। তাদের মতামত পেতেই আগামী সপ্তাহে স্বল্পমেয়াদে তৃতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হবে। সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের সময় হবে নাকি আগামী সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না ঐকমত্য কমিশন। আলী রীয়াজ বলেন, কোনো পূর্বনির্ধারিত অবস্থান থেকে বাস্তবায়নের কোনো পথই ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ করছে না। কমিশনের সফলতা নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, সাফল্যর বিষয়টা সব সময় পারসপেকটিভের ওপর নির্ভর করে। আমাদের দিক থেকে যে লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছি, সেটা সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা। আমরা সে অর্থে জুলাইয়ের মধ্যে করতে চেয়েছিলাম। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে উপনীত হতে পেরেছি- প্রথমে ৬২টিতে ঐকমত্য হয়। পরবর্তীতে ১৯টির মধ্যে ১০টিতে একমত হয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেয়। পরে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। পরে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি অংশে ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে বাকি পাঁচটি কমিশনের ১৬৫টি ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশ। এগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আরেকটি অংশে ছিল ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ। এগুলো নিয়ে প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা হয়। প্রথম পর্বে ঐকমত্য না হওয়া ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ৩০টি দলের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। যেসব সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। ইতোমধ্যে এ সনদের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। বিএনপি এ বিষয়ে একমত। তবে শুধু এমন অঙ্গীকার করা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কিছু দলের আপত্তি আছে। তারা জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার এবং সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি ঠিক করার দাবি করছে। কমিশন জানিয়েছে, প্রথম পর্বের আলোচনায় ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৯টিতে নোট অব ডিসেন্টসহ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ জানান, নোট অব ডিসেন্ট বিষয়ে আইনি দিক থেকে এবং সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব। আসলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাটা কী। জাতীয় সনদ তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশিত ১৬৬টির সবগুলো বিষয়ে একমত হবে আশা ছিল। সেটা হয়নি, হবেও না। প্রথম বিষয় হচ্ছে- সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না জানি। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে আমরা চাপিয়ে দিতে চাচ্ছি না। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট আসছে। যেমন ২৫টি বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় দলগুলোর মতপার্থক্য এতটাই বিশাল, এগুলো দ্বিতীয় ধাপে মাসের পর মাস আলাচনা করলেও একমতে আসতে পারব না। তাই বাদই দিয়ে দিলাম। ফলে বাস্তব বিবেচনায় যে জায়গায় ঐকমত্য তৈরি করা যাবে সে চেষ্টাই করা হয়েছে।