Image description
♦ পাচ্ছে মামলা পরিচালনার ক্ষমতা ♦ শেয়ারবাজারের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ বাড়ছে

পুঁজিবাজারে মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত, নথি পরিদর্শন এবং মামলা পরিচালনার ক্ষমতা পাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শুধু তাই নয়, মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত আইন-২০১২ অনুযায়ী এ-সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে পরিপালনীয় বিভিন্ন শর্ত, নীতিমালা ও নির্দেশনাও প্রদান করবে সংস্থাটি। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন, ২০২৫-এর খসড়ায় এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ১০ জুলাই আইনের খসড়াটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।

মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, মানি লন্ডারিং অপরাধ এখন আর শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলে সীমাবদ্ধ নেই। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারীসহ ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং অপরাধের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বাড়ছে। অর্থ পাচারের জন্য এখন পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করছেন অনেকে। এ কারণে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় পুঁজিবাজারসংক্রান্ত মানি লন্ডারিং অপরাধ প্রতিরোধে তদন্ত, মামলা পরিচালনাসহ নীতি প্রণয়নের বিষয়গুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত মামলার তদন্ত ও কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এটি পুঁজিবাজার, ব্যাংকিংসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সন্দেহমূলক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত ও মামলা পরিচালনা করে। এ ছাড়া সিআইডি, দুদক এবং ডিরেক্টরেট অব কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ও ডিরেক্টরেট অব নারকোটিক কন্ট্রোলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজ নিজ ক্ষেত্রের মানি লন্ডারিং মামলা তদন্ত করে। প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর হলে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত মামলা তদন্ত ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে বিএসইসি। সূত্র জানান, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে তদন্তকারী বিভিন্ন সংস্থা যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, পুলিশ এবং সিআইডির মতো সংস্থাকে সহায়তা করতে বর্তমানে বিএসইসির অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং এবং কাউন্টারিং ফাইন্যান্সিং অব টেররিজম উইং রয়েছে। এ উইংটি মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কাজের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক চিফ ইকোনমিস্ট ও বিআইডিএসের মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, ‘মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্ত ও মামলা পরিচালনার জন্য যে ধরনের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক দরকার, বিএসইসির সে সক্ষমতা রয়েছে কি না সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সক্ষমতা না থাকলে আইন করে যতই ক্ষমতা দেওয়া হোক, তাতে মানি লন্ডারিং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে মামলার তদন্ত ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে আইন সংস্থাটির ক্ষমতা বাড়িয়েও সুফল পাওয়া যাবে না।’ প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় মানি লন্ডারিং ছাড়াও বিএসইসির কার‌্যাবলির মধ্যে রয়েছে সিকিউরিটিজ মার্কেটের বাজার মধ্যস্থতাকারী, সিকিউরিটি ইস্যুকারী এক্সচেঞ্জ, ডিপজিটরি, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোম্পানি বা আত্মনিয়ামক সংগঠন বা অধস্তন বা সিকিউরিটিজ মার্কেট সম্পর্কিত যে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য তলব, নিরীক্ষা এবং তদারকি, নজরদারি, পরিদর্শন, অনুসন্ধান ও তদন্ত; ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন সম্পদ মূল্যায়নকারীর দ্বারা সিকিউরিটিজ মার্কেটের মধ্যস্থতাকারী, আত্মনিয়ামক সংগঠন, ইস্যুয়ারসহ সিকিউরিটিজ মার্কেটের অন্য সব ব্যক্তির সম্পদ মূল্যায়ন কার্য সম্পাদন এবং ওই সম্পদ মূল্যায়নকারীর কার্য নিরূপণ ও নিয়ন্ত্রণ; দেশিবিদেশি কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম এবং সিকিউরিটিজ সম্পর্কিত সহায়তা ও তথ্য বিনিময় চুক্তি সম্পাদন; সিকিউরিটিজ ইস্যুকারীর আর্থিক কর্মকা সম্পর্কিত কর্মসূচি সংকলন, বিশ্লেষণ ও প্রকাশন; সিকিউরিটিজ মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগ সুরক্ষা তহবিল বা অন্য কোনো তহবিল গঠন, ব্যবস্থাপনা ও এর সব কার্যক্রম নিরূপণ ও নিয়ন্ত্রণ; সিকিউরিটিজ মার্কেট বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদানসহ অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সব কার্যক্রম নিরূপণ ও নিয়ন্ত্রণ; কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ও এর কার‌্যাবলি নিরূপণ ইত্যাদি।