Image description

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এতবড় একটা অভু্যত্থান হলো, এত মানুষ জীবন দিল, এখানে যে আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, তা পাহাড়সম। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশের মানুষ অসহায় হয়ে খুনি হাসিনার কাছে জিম্মি ছিল। ক্ষমতার পিপাসার কাছে জিম্মি হয়েছে, গোপালগঞ্জ নামক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়েছে।

এত কিছুর পরে যখন মানুষের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তখন মানুষ মুক্তির আশায় জীবন দিতে পর্যন্ত কার্পণ্য করেনি। তিনি আরও বলেন, মানুষ বছরের পর ধরে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা, তার রেজিম, তার দোসর ও তার বিভিন্ন দল এগুলোর মাধ্যমে নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছে, জেল খেটেছে, গুম হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে চাঁদাবাজি হচ্ছে, সিন্ডিকেট হচ্ছে, কারা করছে? তাদের কথা কেন বলতে পারছি না। প্রত্যেকটা বাজারে চাঁদাবাজির জন্য পণ্যের দাম বাড়ছে। এতে সরকারকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই।

শনিবার সন্ধ্যায় টাউন হল তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে ও ২০২৪-এর গণ-অভু্যত্থানে শহিদদের স্মরণে আয়োজিত জুলাই বিপ্লবোত্তর আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সারজিস আলম।

এ সময় প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান না চালানো সরকারের বড় ব্যর্থতা উলে্লখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক জ্বালানি উপদষ্টো ও দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শেখ হাসিনা জনগণের যে অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আর কেউ জনগণের অধিকার যেন ছিনিয়ে নিতে না পারে, এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো বিদেশি শক্তিকে আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আবার ভারতের মতো কুক্ষিগত হতে দিতে পারি না।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, খুনি হাসিনা হাজার হাজার পরিবারকে গত ১৬ বছরে উত্খাত করেছেন, যাকে টার্গেট করেছেন তাকেই মেরেছেন। শেখ হাসিনা যা করেছেন তার ফলাফল ২৪-এর অভু্যত্থান। কেউ যদি ভুল পথে হাঁটেন তাদেরও পরিণতি এমন হবে। আমরা কাউকে ছাড়ব না। তাই বুক টান করে প্রতিবাদ করতে হবে। আমদের এ লড়াই বাংলাদেশকে সামনে রেখে হোক, মানুষের জন্য হোক।

সারজিস আলম বলেন, খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ এখনো দেশ দোসরমুক্ত হয়নি। দেশের অনেক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দোসরকে মদদ দিচ্ছে। আমরা সংস্কারের কথা বলি কিন্তু যারা এমন করছে তাদের বিরুদ্ধে কেন কথা বলছি না। তাদের বিরুদ্ধে কথা না বলতে পারলে অভু্যত্থানের কোনো সফলতা আসবে না।

ড. মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশে আমাদের ইসলাম রক্ষা করতে হবে। আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অব্যাহত লড়াই চালাতে হবে। আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর সব রকম চষ্টো চলতে থাকবে, এটা মনে রাখতে হবে। যে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে তারা এত সহজে মেনে নেবে না। তারা তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাবে, যাচ্ছে। সেটা গত পঁাচ মাসে আপনারা দেখেছেন।

সেমিনারে আস-সিরাজের উপদষ্টো অধ্যাপক মুফতি মুহিব্বুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম ফজলুল হক ভুইয়া, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সমমনা পেশাজীবী গণতানি্ত্রক জোটের প্রধান সমন্বয়কারী সাইদুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য লুত্ফর রহমান, অ্যাডভান্স রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, সাদমান ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান ড. হাসানুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও মাদরাসাতু লিসানিন কুরআনের পরিচালক মাহমুদুল হাসান জুনাইদ। আলোচনা শেষে জাগরণী সংগীত পরিবেশিত হয়।

জুলাই ঘোষণাপত্রে হাসিনার বিচারের কথা দেখতে চায় জনতা : চরফ্যাশন দক্ষিণ (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, সারজিস আলম বলেছেন, জুলাই অভু্যত্থানের ঘোষণাপত্রে সবার আগে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার বিচারের কথা দেখতে চায় বাংলার জনগণ। শুক্রবার মাগরিবের নামাজ শেষে ভোলার চরফ্যাশনের খাসমহল মসজিদে এ কথা বলেন তিনি।