Image description
যুগান্তরকে আবু সাঈদের বাবা-মা

আমাদের ছেলে বৈষম্য দূর করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে লড়াই করে জীবন দিয়েছে। কিন্তু সমাজ থেকে এখনো বৈষম্য দূর হয়নি। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে বর্তমান সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে-এটাই বড় বাধা। তাই কোনো কিছু ঠিকমতো করতে পারছে না সরকার। দেশটা এখন ভালো যাচ্ছে না।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আবু সাঈদের পৈতৃক নিবাস পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামের জাফরপাড়ায় সোমবার যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এ কথা বলেন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম। বাড়ির পাশে আবু সাঈদের কবরের কাছে বসে কথা বলেন তারা। মায়ের চোখ তখন অশ্রু ছলছল করছিল।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তাদের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা এসব কথা বলেন।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ জালিম সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। আর দেশের মানুষ, যাদের আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হতো, বিনাবিচারে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল, তারা মুক্তি পেয়েছে। পরিবারের কাছে ফিরে গেছে। যখন এসব ভাবি, তখন সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে যাই। তাদের হাসিমুখগুলো আমার দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। আন্দোলনের স্রোতে রেহাই পায়নি স্বৈরশাসক। পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছে।

তিনি আন্দোলনে তার ছেলের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ছেলেরা পড়াশোনা করে বৈষম্যহীন সমাজে চাকরি পাওয়ার জন্য আন্দোলন করেছে। এটা ন্যায্য দাবি ছিল। আবু সাঈদের হত্যাকারীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, যে পুলিশ সদস্য আমার ছেলের বুকে গুলি চালিয়েছে, যারা এখনো গ্রেফতার হয়নি, তাদের আইনের আওতায় এনে এই হত্যার জন্য ফাঁসি দেখতে চাই।

মানোয়ারা বেগম বলেন, এখনো আবু সাঈদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আমি চাই আমার সন্তানের যে স্বপ্ন ছিল, সমাজের সব বৈষম্য দূর করা, তা যেন বর্তমান সরকার আমার জীবদ্দশায় বাস্তবায়ন করে। তা হলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাব। আমার সন্তানের আত্মাও শান্তি পাবে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমার সন্তানের সঙ্গে যারা লড়াই করে দেশ থেকে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়েছে, তারা কখনো আপস করবে না। সমাজের সব বৈষম্য দূর করার লড়াই চালিয়ে যাবে।

সরকারি সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে বাবা মকবুল হোসেন সন্তানের নানা স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, এক বছর পার হলেও সরকারিভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো সাহায্য পাইনি। সবাই আসে আর শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়। কোনো কাজ হয় না। তবুও আমার সান্ত্বনা-ছেলে জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আন্দোলনের কারণে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এখনো তার ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ভারতে বসে সে দেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তার দোসররা হাসিনার নির্দেশে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করছে। দেশটা এখন ভালো যাচ্ছে না। দেশের ভেতর একটি অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। তাই সরকারের সব ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আমি চাই আমার সন্তানের যে স্বপ্ন ছিল, সমাজের সব বৈষম্য দূর করার লড়াই, তা যেন বর্তমান সরকার আমার জীবদ্দশায় বাস্তবায়ন করে যায়। তা হলে আবু সাঈদের স্বপ্ন পূরণ হবে।