
দেশের জন্য মাদক একটা বড় ধরনের সমস্যা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এখন ইয়াবা ধরা পড়ছে অনেক বেশি। ধরা পড়লেও, রুই-কাতলাগুলো ধরা পড়ছে না, ওই পুটি আর ট্যাংরা, এইগুলো ধরা পড়ছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা সাধারণত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি এবং এইটার ভেতরে যেহেতু আইন-শৃঙ্খলা, দুইটা ওয়ার্ড কিন্তু এইটার অনেক বড় ব্যাপ্তি, অনেক বড়। এই জন্য এমন কোনো কিছু নেই, আলোচনার ভেতরে আসে না। মোটামুটি দেশের সব কিছুর ব্যাপারে আলোচনা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে কি ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে এই ব্যাপারেও আলোচনা হয়। আমরা এইগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করছি।
তিনি বলেন, স্পেশালি আমরা মাদকের ওপরে বেশি জোর দেই। যেহেতু মাদক আমাদের দেশে একটা বড় ধরনের সমস্যা। এইটার জন্য আমরা সবসময় বেশি জোর দেই। আপনাদের রিপোর্টও দেখছি।
৫ আগস্ট ঘিরে নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে কি না? সাংবাদিকদের এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার চলে যাওয়ার পরে, মানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ওই সময় যে রকম ছিল, আজকে ৪ আগস্টে এইটা কি উন্নতি হয়েছে? কি হয়নি? এটা আপনারা আমাদের থেকে আরও ভালো বলতে পারবেন। আমরা যে সময় এই দায়িত্ব নেই, সেই সময় আমাদের এই পুলিশ বাহিনীর পরিস্থিতি কি ছিল? অন্যান্য বাহিনীর অবস্থাটা কি ছিল এবং দেশের অবস্থাটা কি ছিল? ওর থেকে কি উন্নতি হয়েছে কি হয়নি এটা আপনারা বলেন।
তিনি বলেন, এখন আপনারা বলছেন যে কাঙিক্ষত উন্নতি হয়েছে কি হয়নি, এরপর? ওইরকম একটা উন্নতি হয় তো আমরা করতে পারিনি। আর আমি একটা কথা সবসময় বলি, আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৪ বছর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে খুব ভালো, এই ৫৪ বছরে আমাদের কোনো মিডিয়ায় বা কোনো কিছুতে বা সাধারণ পারসেপশন আছে কোথাও? যে আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো।
তিনি আরও বলেন, ওই (উন্নত দেশের) স্ট্যান্ডার্ডে আমরা কোনো সময় যেতে পারিনি। আমরা দোয়া করবো, আমরা না পারি ভবিষ্যতে যারা আসবেন তারা যেন পারে। আমরা স্ট্যান্ডার্ড দিতে পারি। তবে আমরা আমাদের লেভেলে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি যতটা উন্নতি করা যায়।
মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক আছে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে উপদেষ্টা বলেন, ৩ আগস্ট সম্বন্ধে একটা আতঙ্ক ছিল। ৫ আগস্ট সম্বন্ধে কোনো ধরনের আতঙ্কের কোনো কারণই নেই। আল্লাহ দিলে সব কিছু, সব প্রোগ্রাম হবে এবং সব ভালোভাবে হয়ে যাবে। এতে আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার। আপনারা বিভিন্ন জায়গা কাভার করবেন। আপনারা দেখবেন যে সবকিছু ভালোভাবে হয়ে যাবে।
সতর্কতাও তো আছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেই সতর্কতা। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকারের তো সব কিছু ব্যাপারেই সতর্ক থাকতে হয়। এই সতর্কতার জন্যই তো আমরা এই মিটিংগুলো করি এবং আপনাদেরও বলি যে আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন।
এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয় ৮ আগস্ট পর্যন্ত একটা বিশেষ অভিযান চলছে। উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিশেষ অভিযান পুরা দেশেই চলছে। এটা ইলেকশনের আগ পর্যন্ত চলতে হবে। যেহেতু…অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের যে পরিমাণ হাতিয়ার চলে গেছে, আমরা তো সব উদ্ধার করতে পারিনি। এগুলো উদ্ধার করার জন্য তো আমাদের চেষ্টা সবসময় জারি আছে। চেষ্টা করতে হয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান হতে গেলে অন্যান্য ক্রাইমগুলো…। যেহেতু বাহিনী একটা, আপনার একটা কাজে লাগালে অন্যান্য জায়গায় যেতে পারছে না। বাহিনীগুলো একদিকে কনসেন্ট্রেট করলে আরেকদিক দিয়ে আবার এইটা বেড়ে যায়। আরেকটা জিনিস হচ্ছে যে আপনারা দেখছেন আমি গত শনিবার মোহাম্মদপুর… ওখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরা। তারা আসছে। আমি বললাম তুমি কেন চাপাতি নিয়ে মারতে গেলা, বললো- স্যার ও যাওয়ার সময় আমাকে পা দিয়ে ল্যাং মারছিল। এখন এইগুলো, মানে আগে কিন্তু এরকম ছিল না। একটু ল্যাং মারছে দেখে সে যাচ্ছে চারজন নিয়ে চাপাতি দিয়া মারার জন্য। সামনাসামনি পাইলে হয়তো কোপ দিয়ে দিতো। এইগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের জনগণেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনও তাদের বুঝাতে হবে এইগুলো যেন না হয়।
মব ভায়োলেন্স নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মব ভায়োলেন্স আগের থেকে কমছে। এটা আস্তে আস্তে একেবারে এলিমেনেট হয়ে যাবে। মবের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় আমরা দেবো না।
নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কে অংশ নেবে, কে অংশ নেবে না এটা আমার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশ্ন না। আমার হলো নির্বাচন যে সময় হবে, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন ভালো থাকে এই জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর আগেও আমরা বলেছি যে আমরা কিন্তু ট্রেনিং করাচ্ছি এবং সরকারও ফোর্সের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য স্যাংশন দিয়ে দিয়েছে।
কোনো দলকে আপনারা বেশি পুলিশ প্রোটেকশন দিচ্ছেন, কোনো দলকে কম দিচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠছে, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাইকে সমান প্রোটেকশন দিচ্ছি। এই জন্য যে বেশি ভালনারেবল তার একটু বেশি প্রোটেকশন দেওয়া হয়। যে একটু কম ভালনারেবল তাদের একটু কম প্রোটেকশন দেয়। যেমন- আপনারা আল্লায় দিলে কেউ ভালনারেবল না, আপনার কোনো প্রোটেকশন দরকার হয় না।
ভালনারেবল সিদ্ধান্তটা কীভাবে হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বরেন, এটা তো বিভিন্ন এজেন্সি আছে, প্লাস আপনারও বলেন এই এলাকাটা ভালনারেবল। আপনাদের থেকে এই ইনফরমেশন পায়।