
গাজায় আটক ইসরাইলি বন্দিদের জন্য আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিকে (আইসিআরসি) খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের অনুমতি দিতে পারে বলে জানিয়েছে হামাস। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানানোর পর হামাসের পক্ষ থেকে এমন অবস্থান জানানো হয়।
সোমবার (৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
এই বিবৃতিগুলো এমন এক সময় এসেছে, যখন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো সম্প্রতি দুজন চরমভাবে ক্ষীণদেহী ইসরাইলি বন্দির ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওগুলো গাজায় চরম খাদ্যসংকটের মধ্যে বন্দিদের ভয়াবহ পরিস্থিতির আভাস দেয়। গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ ইসরায়েলি অবরোধ ও আক্রমণের কারণে দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।
রোববার এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ইসরাইলে আইসিআরসি প্রধান জুলিয়ান লারসনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং গাজায় বন্দিদের জন্য জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দিতে সংস্থার ‘তাৎক্ষণিক সম্পৃক্ততা’ চেয়েছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, হামাস গাজায় ‘দুর্ভিক্ষের মিথ্যাচার’ চালাচ্ছে, অথচ ‘আমাদের জিম্মিদের ওপরই বাস্তবে একটি পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
এর জবাবে, হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেন, গাজায় আটক ইসরাইলি বন্দিরা ‘আমাদের যোদ্ধা এবং জনগণ যা খায়, তার বাইরে কিছুই পায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়মিত ও স্থায়ীভাবে গাজা উপত্যকার সকল এলাকায় খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশের জন্য মানবিক করিডোর খোলা হলেই আমরা রেড ক্রসের যে কোনো সহায়তা পৌঁছানোর অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিতে প্রস্তুত।’
তবে আবু ওবায়দা শর্তসাপেক্ষে জানান, ‘প্যাকেজ গ্রহণের সময় সব ধরনের ইসরাইলি আক্রমণ বন্ধ থাকতে হবে।’
রেড ক্রস এক বিবৃতিতে জানায়, গাজায় আটক বন্দিদের ভিডিও দেখে তারা ‘মর্মাহত’ এবং বন্দিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য পুনরায় আহ্বান জানায়।
‘এই ভিডিওগুলো প্রমাণ করে বন্দিরা প্রাণনাশকারী পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন,’ বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।
রেড ক্রস তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে, তারা ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পর থেকে ইসরাইলে আটক কোনো ফিলিস্তিনির সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। সংস্থাটি বলছে, বন্দিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সকল পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
একই দিনে আইসিআরসি আরও একটি বিবৃতি দেয়, যেখানে তারা জানায়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) একটি ‘সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত’ ভবনে এক কর্মী নিহত হয়েছেন। যদিও পিআরসিএস বলেছে, এটি ইসরাইলি বাহিনীর হামলা ছিল, তবে রেড ক্রস তাদের বিবৃতিতে হামলার জন্য কাউকে দায়ী করেনি।
নারী ও শিশুদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে
এদিকে, গাজায় আটক ইসরাইলি বন্দিদের পরিবার রবিবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর ‘সামরিক সমাধানের’ ওপর জোর দেওয়াকে তাদের সন্তানদের জীবনের জন্য ‘সরাসরি হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
তারা বলে, ‘২২ মাস ধরে জনগণকে বোঝানো হয়েছে যে, সামরিক চাপেই বন্দিদের মুক্ত করা যাবে। অথচ আজ, একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি না হতেই বলা হচ্ছে, আলোচনায় কোনো লাভ নেই।’
বর্তমানে আনুমানিক ৫০ জন ইসরাইলি গাজায় বন্দি রয়েছে, যাদের অর্ধেকের কম এখনও জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গাজার সরকারবিষয়ক মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার ইসরাইল মাত্র ৩৬টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয়, অথচ প্রায় ২২ হাজার ট্রাক সীমান্তে অপেক্ষমাণ।
জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয় রোববার সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজায় এখন ১০ লাখ নারী ও কন্যাশিশু অনাহারে ভুগছে।
এক্স-এ দেওয়া পোস্টে তারা বলেছে, ‘গাজায় এক মিলিয়ন নারী ও মেয়েশিশু অনাহারে – এই ভয়াবহ বাস্তবতা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জরুরি মানবিক সহায়তা, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও সব বন্দির মুক্তি দাবি করছি।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যাভাবে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৯৩ জন শিশু। সর্বশেষ ১৭ বছর বয়সী আতেইফ আবু খাতের শনিবার মৃত্যুবরণ করে, মৃত্যুর সময় তার ওজন ছিল মাত্র ২৫ কেজি।