Image description
 

সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশীদের লাশ সোমবার সকালে চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কেলেঙ্কারির একটি মামলায় হাজিরা দিতে তিনি রোববার বিকালে চট্টগ্রামে যান। ক্লাবের ৩০৮ নম্বর কক্ষে তিনি উঠেছিলেন।

 

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, রোববার বিকাল ৫টার দিকে হারুন-অর-রশীদ চট্টগ্রাম ক্লাবে উঠেন। সোমবার সকালে ক্লাব কর্তৃপক্ষ তার সাড়া না পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করে। তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম কেন গিয়েছিলেন তিনি?

ডেসটিনি সংক্রান্ত ২০২৩ সালের একটি মামলায় হাজিরা দিতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন হারুন। কিন্তু সেই হাজিরা আর দেওয়া হলো না তার। ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন বলেন, হারুন চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিতে যান। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে হলেও থাকতেন ঢাকায়।

চট্টগ্রাম ক্লাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশীদ ক্লাবের গেস্টহাউসের একটি কক্ষে একা ছিলেন। অনেক বেলা পর্যন্ত তিনি কক্ষ থেকে বের না হওয়ায় ক্লাবের লোকজন বিচলিত হন। দুপুর ১২টার পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কক্ষের তালা খুলে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের ধারণা কক্ষের মধ্যে রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের একটি দল চট্টগ্রাম ক্লাবে এসে সাবেক সেনাপ্রধানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। পরে তারা সাবেক সেনাপ্রধানকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু বলে তারা জানিয়েছেন।

হারুনের কর্মজীবন

হারুন ১৯৪৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০০ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২০০২ সালের ১৬ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়।

জুনে অবসরে যাওয়ার পর সরকার তাকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজির রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বও দিয়েছিল।

২০০৬ সালে হারুন ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দেন। পরের কয়েক বছরে আরও বহু ক্ষেত্রে ডেসটিনির ব্যবসা বিস্তৃত হতে দেখা যায়।

কিন্তু জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠলে ২০১২ সালে হারুনকে কারাগারে যেতে হয়। পরে ‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক অবস্থা’ বিবেচনায় তিনি জামিনে মুক্তি পান।

ডেসটিনির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত ও দায়ে দুদকের এক মামলায় ২০২২ সালের ১২ মে হারুনকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন  আদালত।