Image description
গ্রাহকরা প্রতারিত

দেশের অন্যতম শীর্ষ অনলাইন টিকিট ও হোটেল বুকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট এক্সপার্ট হঠাৎ করেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট ও অ্যাপ সচল থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির কোনো কার্যক্রম নেই। এরই মধ্যে ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাটেরও হদিস নেই। তিনি মক্কা গ্রুপেরও চেয়ারম্যান এবং সাইমের বাবা।

ফ্লাইট এক্সপার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে গতকাল বিকেল থেকে মতিঝিলে প্রতিষ্ঠানটির অফিসের সামনে বিভিন্ন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেল কোম্পানির কয়েশ গ্রাহক ভিড় করেন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সিইওর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ফ্লাইট এক্সপার্টের কর্মীদের পক্ষ থেকে গতকাল মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাহকের অন্তত ৩০০ কোটি টাকার সেবা না দিয়ে বা সেই টাকা আত্মসাৎ করে সিইও সালমান সপরিবারে বিদেশে পালিয়েছেন। পরে তিনি কোম্পানির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিজের বিদেশ চলে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেন।

ফ্লাইট এক্সপার্ট এক সময় বাংলাদেশের ডিজিটাল ভ্রমণ খাতের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হতো। দেশ-বিদেশের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশনসহ নানা ধরনের ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় থেকে তাদের সেবার মান নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দেয়। অগ্রিম টিকিট বুকিং ও হোটেল বুকিং করলে তা বাতিল করার বার্তা দিলেও টাকা ফেরত দিচ্ছিল না প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেবা না দিয়ে অগ্রিম নেওয়া টাকা আত্মসাৎ করছিলেন। এতে প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সংকটে পড়ে। একপর্যায়ে কর্মীদের বিপদে ফেলে পালিয়ে যান সিইও ও চেয়ারম্যান।

মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের অফিসের সামনে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির অন্তত সাতজন গ্রাহকের সঙ্গে। তাদের একজন ‘অবকাশ অপারেশন্স’ নামের ট্রাভেল প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বদরুল হক বলেন, ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে তারা অন্তত ৫০ লাখ টাকার টিকিট বুকিং দিয়েছেন। কিন্তু কোনো সেবা না পেলেও এখন শোনেন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে!

প্যান প্যাসিফিক ট্রাভেলসের কর্মী ফাইয়াজ মাহমুদ জানান, তারা প্রতিষ্ঠানটির কাছে ১৬ লাখ টাকার টিকিট বুকিং দিয়েছিলেন।

এদিকে গতকাল ফ্লাইট এক্সপার্টের কর্মী সাঈদ আহমেদ, চিফ অপারেশন অফিসার এস এম সাদাত হোসেন, চিফ মার্কেটিং অফিসার আব্দুল গনি মেহেদী, হেড অব ফিন্যান্স মো. সাকিব হোসাইন, হেড অব ভিসা জুবায়ের হাসান মতিঝিল থানায় ফ্লাইট এক্সপার্টের সিইও এবং এমডি সালমান বিন রশিদ শাহ সাইমের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডিতে তারা উল্লেখ করেন যে, সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম গত শুক্রবার রাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে স্বপরিবারে আত্মগোপনে চলে যান এবং পরে বিদেশে পলায়ন করেন। বিষয়টি তিনি প্রতিষ্ঠানের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেন।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এমডির পলায়নের সংবাদ জানতে পেরে তারা শনিবার অফিসে এসে বিষয়টি নিশ্চিত হন। এমডি পালিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সাপ্লায়ার ও কাস্টমারদের বিপুল অঙ্কের আর্থিক লেনদেন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এজন্য তারা (গ্রাহকরা) ফ্লাইট এক্সপার্টের কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন।