Image description
 

মানুষের নৈতিকতা ও আত্মিক স্থিতি নষ্ট করার অন্যতম ভয়ংকর উপাদান হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞরা এখন যাকে চিহ্নিত করছেন, তা হলো—অশ্লীলতা বা পর্নোগ্রাফি। এটি শুধু ব্যক্তিগত পাপ নয়, বরং একটি বৈশ্বিক সামাজিক ব্যাধি, যা প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষকে মানসিক, সামাজিক ও আত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ: নেশার মতো কাজ করে অশ্লীলতা
আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে, পর্নোগ্রাফি মানুষের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রাসায়নিক পদার্থের অস্বাভাবিক ক্ষরণ ঘটায়, যা মূলত আনন্দ ও পুরস্কারের অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। এই অতিরিক্ত উত্তেজনা প্রথমে অল্প আনন্দ দিলেও পরবর্তীতে একধরনের আসক্তি তৈরি করে—যা একপর্যায়ে মাদকাসক্তির মতোই ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক "National Center on Sexual Exploitation" এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, দীর্ঘদিন ধরে পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কের ‘প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স’ দুর্বল হয়ে পড়ে—এই অংশটি নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ব্যবহারকারীর আচরণে অস্থিরতা, যৌন সক্ষমতা হ্রাস, আত্মবিশ্বাসের অভাব, বিষণ্নতা এবং বাস্তব জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

 

অশ্লীলতার কারণে বাস্তব সম্পর্কেও টানাপোড়েন দেখা দেয়। বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, স্ত্রীর প্রতি আগ্রহ হ্রাস, সম্পর্কহীন যৌনতা কিংবা একাকীত্ব বেড়ে যাওয়ার মতো প্রবণতা ব্যাপকভাবে দেখা যায়।

 

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ: অশ্লীলতা ঈমান ধ্বংসকারী পাপ
ইসলামে অশ্লীলতা একটি মারাত্মক গোনাহ হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তায়ালা সূরা আন-নূরের ৩০ নম্বর আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন—
“বলুন, মুমিন পুরুষদের উচিত তাদের দৃষ্টি সংযত রাখা এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করা; এটিই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।”

নবী করিম (সা.) বলেন, “আমি তোমাদের মধ্যে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বড় কোনো ফিতনা ভয় করি না।” (সহীহ মুসলিম)

পর্নো বা অশ্লীলতার প্রতি আসক্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে নামাজে খুশু হারায়, কোরআনের প্রতি অনাগ্রহ জন্মায়, গুনাহকে স্বাভাবিক মনে করতে থাকে। ইসলামী পণ্ডিতগণ বলেন, এটি অন্তর থেকে নূর দূর করে দেয় এবং আল্লাহর রহমত থেকেও মানুষ বঞ্চিত হয়ে পড়ে।

সমাজে প্রতিফলন: নৈতিকতা ও পরিবারব্যবস্থার ওপর আঘাত
অশ্লীলতার ছড়িয়ে পড়া শুধু ব্যক্তির সমস্যা নয়—সমাজে এর গভীর প্রভাব পড়ে। তরুণ প্রজন্ম মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ছে, বিয়ের আগ্রহ কমে যাচ্ছে, বাস্তব সম্পর্কের প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছে। অনেক সময় এই আসক্তি যৌন নির্যাতন, পারিবারিক কলহ ও আত্মহত্যার দিকেও মানুষকে ঠেলে দেয়।

প্রতিরোধের উপায়: আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ঈমানি চর্চা
এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন আত্মনিয়ন্ত্রণ, সচেতনতা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি অনুরাগ। মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা, পর্ন-ব্লকিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার, এবং নিয়মিত নামাজ-কোরআনের চর্চা এ ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

শুধু আইন নয়, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই অশ্লীলতার বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে—নইলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক অন্ধকারময় ও অনৈতিক সমাজে ঠেলে দিচ্ছি।