
আগুন নিভেছে প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেল। কিন্তু পোড়া গন্ধ যেন এখনো রয়ে গেছে বাতাসে। ৩৩ প্রাণ হারানোর শোকে ৩ দফায় ১২ দিন বন্ধ ছিল মাইলস্টোন কলেজের উত্তরা ক্যাম্পাস। অবশেষে রোববার (৩ আগস্ট) সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে ক্লাসের কার্যক্রম। তবে পাঠদান হয়নি। আর ক্যাম্পাসের ভেতরে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে ভবনটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি ঘিরে রাখা হয়েছে নীল রঙের টিন দিয়ে। কলেজে আসা শিক্ষার্থীরা সেই টিনে ঘেরা ভবনের সামনেই নির্বাক শোকাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছেন।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই শিক্ষার্থী ঢুকছে—নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির। কিন্তু নেই সেই চিরচেনা কোলাহল-হৈ-হুল্লোড। কারও মুখে কোনো কথা নেই, কেউ কেউ সোজা চলে যাচ্ছে সেই টিনঘেরা অংশের কাছে। দাঁড়িয়ে থেকেছে কিছুক্ষণ, কেউ একজন হয়তো চুপচাপ চোখ মুছেছে, তারপর সরে যাচ্ছে সেখান থেকে। আর ভবনের সামনের অংশ টিন দিয়ে আড়াল করে দেওয়া হয়েছে। আশপাশে টহল দিচ্ছেন কয়েকজন কলেজকর্মী ও নিরাপত্তারক্ষী।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিন আল রাব্বি বলেন, এই ভবনেই বাচ্চাদের ক্লাস হতো। এখনও বিশ্বাস হয় না, যেখানে তারা ক্লাস করতো সেটা এখন একটা বিধ্বস্ত কাঠামো। আমরা প্রতিদিন যেটাকে ভবিষ্যতের সিঁড়ি ভাবতাম, সেটা এখন স্মৃতির ভার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আরেক শিক্ষার্থী রাইশা তাবাসসুম বলেন, কোনো সময়ই দুর্ঘটনার কথা ভুলতে পারছি না। আমরা অনেক বেশি শোকাহত। দীর্ঘদিন মনের মধ্যে এই দুর্ঘটনার কথা মনে গেঁথে থাকবে।
অন্যদিকে, আগামী ৬ জুলাই (বুধবার) থেকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম।
তিনি বলেন, পরবর্তী তিন মাস শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার উন্নয়নে কাউন্সেলিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ওই দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর পরবর্তী অবস্থা বিবেচনায় বাকি ক্লাসগুলো চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঘটনার ভয়াবহতা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে আমরা ধাপে ধাপে কাজ করছি। এখনো আমরা নিয়মিত ক্লাস শুরুর অবস্থায় যাইনি। আগামীকাল (৪ আগস্ট) ক্লাস থাকলেও তা হবে মূলত কাউন্সেলিংভিত্তিক। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন, তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করবেন।
তিনি বলেন, কেউ যদি এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে বা আতঙ্কে থাকে, তাহলে আমরা তাকে ব্যক্তিগত কাউন্সেলিংয়ে নিয়ে যাব।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ছুটি ঘোষণা করে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজটি ২ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এর মধ্যেই চালু ছিল প্রশাসনিক কার্যক্রম, আহতদের সহায়তায় গঠন করা হয় একটি কন্ট্রোল রুম।