
দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। কে হবেন ভিপি, কে হবেন জিএস এই প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র কৌতূহল ও আলোচনা। সম্প্রতি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুপ্রতীক্ষিত ভোট গ্রহণ।
ঘোষণার পরপরই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে কানাচে। ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জোর আলোচনা। ভোটের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে স্বতন্ত্র মুখরাও।
ভিপি ও জিএস পদের জন্য অন্তত ১৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। এদের অনেকেই অতীতে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিতি লাভ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আবু বাকের মজুমদার ও আব্দুল্লাহ কাদের, ছাত্রশিবিরের আবু সাদিক কায়েম, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, এবং ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু নির্বাচনী দৌড়ে রয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেও চমক দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয় মুখ ওমামা ফাতিমা ভিপি পদে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নেতৃত্ব হিসেবে তিনি ইতোমধ্যে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তার প্যানেল থেকেই জিএস পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি।
‘স্পিরিট অফ জুলাই’ প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে থাকা মাহি ঢাবি শিক্ষার্থীদের কাছে আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন গত বছর আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত ‘ইকোস অফ রেভলিউশন’ কনসার্টের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে। যেখানে পারফর্ম করেছিলেন পাকিস্তানি কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান।
ওমামার প্যানেল থেকে আরও একজন আলোচনায় আছেন স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালউদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ।
বাম সংগঠনগুলোর প্রার্থীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উঠে আসছেন মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, যিনি ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে সবসময়ই সক্রিয় থেকেছেন।
তফসিল অনুযায়ী আগামী ১১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর ১২ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ চলবে। চার হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এখন নির্বাচনী উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
উপস্থিত প্রজন্মের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার এই ডাকসু নির্বাচন নতুন নেতৃত্ব, নতুন ভাবনা এবং ছাত্র রাজনীতির একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছে। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।