Image description

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। বরাবরই প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য বহুল আলোচিত। আওয়ামী লীগ আমলে এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ আমলের সেইসব দুর্নীতিকেও হার মানিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল বাসিরের সময়টা। তিনি এ প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র এক বছরের কম সময় হলো।

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন। সেই হিসেবে মাত্র দশ মাস প্রায়। তবে এই দশ মাস সময়ে তিনি এতটা বেপরোয়া ছিলেন যে অতীতের সকল রেকর্ডকে হার মানিয়েছেন। অবশেষে পার পেলেন না, ওএসডি হলেন। বুধবার, ৩০ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ রফিকুল হকের স্বাক্ষরে উক্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে সৈয়দ নুরুল বাসিরের বেপরোয়া দুর্নীতি ও ত্রাসের রাজত্বের অবসান হলো, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পদে থেকে এই দশ মাস সময়ে হেন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত নীতিমালা সরাসরি লঙ্ঘন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক পাওনায়ও ছাড় দিয়েছেন বিভিন্ন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। দেখা গেছে, জাগৃক’র বোর্ড মিটিংয়ে কোনো অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো সদস্য ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলে সেটিও তিনি গ্রাহ্য করেননি। এমনকি বোর্ড মিটিংয়ের রেজুলেশনেও তা উল্লেখ করতে দেননি।

ওই সদস্য সভায় উপস্থিত থাকার পরও তাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে সভার কার্যবিবরণী নিজেরা অনুমোদন করে নিয়েছেন। ভুয়া কাগজপত্রে দখলদারদের নামে জমির বরাদ্দ অনুমোদন করেছেন ব্যাপকভাবে। জাল-জালিয়াতির এসব কাগজপত্র জায়েজ করার ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষে। এ রকমের প্রতিটি কেস-এ বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী বাণিজ্যিক প্লট নিলামে দেয়ার কথা। তা না করে নুরুল বাসির মোটা অংকের টাকা নিয়ে কনভারশনের ব্যবস্থা করেছেন।

এছাড়া আরো অনেক অনিয়ম-অপকর্ম করেছেন তিনি। তারমধ্যে বদলি বাণিজ্য বহুল আলোচিত। এই দশ মাসে তিনি এতটা বদলি বাণিজ্য করেছেন যে, অতীতের দীর্ঘকালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। যেসব বদলি-পদায়নে অতীতে সর্বোচ্চ ২/৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হতো, নুরুল বাসির সেগুলোর প্রত্যেকটি থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। বলা যায়, এই দশ মাসে তিনি সংস্থাটিতে অনেকটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। আর এর মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন নিজে বিপুল অংকের অর্থ।
 
সূত্রমতে, সৈয়দ নুরুল বাসিরের এসব বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকেও ইতিপূর্বে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি মন্ত্রণালয়ের সতর্কতাকেও মোটেই পাত্তা দেননি। আর অবশেষে এখন তাকে ওএসডি হতে হলো।

শীর্ষনিউজ