
রাজশাহীতে ‘ চাঁদাবাজদের ' কথিত একটি তালিকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে । এ তালিকায় নাম এসেছে আওয়ামী লীগ , বিএনপি , জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের । এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের নাম রয়েছে তালিকায় । বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে , এটি পুলিশের ষড়যন্ত্র । আর জামায়াত বলছে , কোনো চাঁদাবাজের জায়গা এ দলে নেই । যদিও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ তালিকা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি ।
দুই সপ্তাহ ধরে ১২৩ জন চাঁদাবাজের তালিকাটি হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরছে । তালিকায় বিএনপি , ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা- কর্মী , ক্যাডার , সমর্থক থেকে শুরু করে ৪৪ জনের নাম - পরিচয় আছে । এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ২৫ ও জামায়াতের ৬ জনের নাম আছে ।
বাকিদেরও নাম- ঠিকানা দেওয়া আছে, তবে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই । তালিকাটিতে দেখা গেছে , যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদের থানাভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচিতি উল্লেখ রয়েছে । কিছু ব্যক্তির মোবাইল নম্বরও আছে । এ ছাড়া কোন খাত থেকে চাঁদা তোলেন এবং বর্তমানে সক্রিয় কি না , সে তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে ।
তালিকায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ( আরএমপি ) ১২ টি থানার মধ্যে ১০ থানা এলাকার তথ্য রয়েছে । এই তালিকার ১ নম্বরে রয়েছেন পটু বাবু । তিনি ৭ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছেন । ২ নম্বরে আছেন ককটেল মুরাদ । তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১ জুলাই । পটু বাবুর ব্যাপারে লেখা রয়েছে , ‘ তিনি গাঁজা - ফেন্সি বিক্রেতা ও ছিনতাই - চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত । জিরো পয়েন্ট বড় মসজিদের দক্ষিণ পাশে মসজিদ মিশন স্কুলের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে পণ্য সরবরাহকারী কাভার্ড ভ্যান গাড়ি থেকে তিনি চাঁদাবাজি করেন । তিনি ভুয়া সাংবাদিকের কার্ড করে নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন । বর্তমানে সক্রিয় ।
”গ্রেপ্তার ককটেল মুরাদের ব্যাপারে লেখা হয় , ‘তিনি গাঁজা বিক্রেতা ও ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত । জিরো পয়েন্ট বড় মসজিদ এলাকায় চাঁদাবাজি করেন । তাঁর বিভিন্ন অপকর্মে ও অত্যাচারে এলাকার মানুষ অষ্ঠিত বলে জানা যায় । ’যেভাবে তালিকা আলোচনায় : গত বুধবার মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ডেভেলপার ব্যবসায়ী ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন । এ মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে । এর মধ্যে ১৮ জনের নামই রয়েছে ছড়িয়ে পড়া ‘চাঁদাবাজদের’ কথিত ওই তালিকায় । এই ১৮ জন বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা - কর্মী বলে জানা গেছে । এই মামলার জেরে গত শনিবার রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয় ।
সেখানে এ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে চাঁদাবাজির মামলার আসামি নগরের বোয়ালিয়া ( পশ্চিম ) থানা বিএনপির সভাপতি শামছুল হোসেন মিলু বলেন , “ দেখলাম সেটাতে ওসি সাহেবের স্বাক্ষর আছে । আমার কাছে প্রমাণ আছে । বোয়ালিয়ার ওসির স্বাক্ষর আছে । ওসি সাহেব ষড়যন্ত্র করে করেছে । ’ ‘ প্রশাসনের প্রেসক্রিপশনে ’ মামলাটি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন । এদিকে তালিকায় জামায়াতের কর্মীদের নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের রাজশাহী মহানগরের সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন , “চাঁদাবাজের তালিকায় রমজান নামের একজনের নাম আছে । এ ধরনের কার্যক্রমের কারণে অনেক আগেই তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে । চান সওদাগর নামের আরেকজনের কথা শুনছি । ৫ আগস্টের পর সে আমাদের দলে ভেড়ার চেষ্টা করেছিল । তাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি । কোনো চাঁদাবাজের জায়গা আমাদের দলে নেই । '
এই তালিকা কার , এমন প্রশ্নে আরএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ( মিডিয়া ) গাজীউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন , “ যে তালিকার কথা বলছেন , সেটা আমি জানি না । তবে বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকা করা হয় । এটা শুধু পুলিশ করে না , বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আছে । তারা এই তালিকা করে পুলিশকে দেয় । পুলিশ ভেরিফাই করে । বিভিন্ন হাত ঘুরেই তালিকাগুলো করা হয় । যারা চিহ্নিত চাঁদাবাজ , তারা ছাড় পাবে না । ”