
শুধু গুলশান নয়, রাজধানীর অন্যতম আরেক অভিজাত এলাকা বনানীসহ মিরপুর এলাকায়ও চাঁদাবাজিসহ নানা দেনদরবারে লিপ্ত ছিলেন রিয়াদসহ তার পুরো গ্রুপ। গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাবেক নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের বাড়িতে চাঁদা দাবি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রিয়াদসহ তার পুরো গ্রুপের প্রতি এসব অভিযোগ উঠেছে। গুলশান থানা পুলিশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিও দেখে এসব জানা গেছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘তাদের ব্যাপারে আমরা গুলশান ছাড়াও বনানীসহ আশপাশের অনেক এলাকায় গিয়ে চাঁদাবাজির মৌখিক অভিযোগ পাচ্ছি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেটিতে দেখা গেছে, একটি থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে কোনো একটি বিষয় নিয়ে দেনদরবার করছেন গুলশানের ঘটনায় গ্রেপ্তারদের একজন আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা পরিচয় দিয়ে সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) কোনো একটি বিষয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। সে সময় সঙ্গে থাকা ১০ থেকে ১২ জন ছেলেমেয়ে তার কথায় সায় দিয়ে নানা কথা বলছিলেন। ঘটনাটি কী, সেই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে সেটি রাজধানীর মহানগর পুলিশের শাহ আলী থানা বলে নিশ্চিত করেছেন ওই থানার কর্তব্যরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে গুলশানের ঘটনার দিন পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান কাজী গৌরব ওরফে অপু। তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া কতদূর? এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে আইনের আওতায় আনতে পারব।’
দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা হুট করে বিলাসী জীবনযাপনে: গ্রেপ্তারদের মধ্যে সব থেকে বেশি আলোচনায় এসেছেন রিয়াদ। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ এলাকায়। ৫ আগস্টের আগেও তার বাবা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একটি ভাঙা ঘর নিয়েই ছিল তাদের বাড়ি। তবে এক বছরের ব্যবধানেই পাল্টে যায় দৃশ্য। ভাঙা ঘরের জায়গায় উঠতে থাকে পাকা বাড়ি। যেই পরিবার গত ৫০ বছরে কোনো দিন কোরবানি দিতে পারেনি, সেই পরিবার দেড় লাখ টাকার গরু দিয়ে কোরবানি করে। হুট করে রিয়াদের পরিবারের এমন আর্থিক পরিবর্তন গ্রামের অন্য প্রতিবেশীদের বেশ অবাক করেছে। এদিকে সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব দুই সহোদর গুলশানের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এদের মধ্যে সিয়াম বড়, সাদাব ছোট। দুজনেই প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ছাত্র। সিয়াম সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রেসিস্ট্যান্স ডে’ উদযাপন কমিটির সদস্য বলে জানা গেছে। দুই ভাই-ই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বহিষ্কৃত সমন্বিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দুজনের ফেসবুক প্রোফাইলেই রিয়াদের সঙ্গে চলাফেরার ছবি রয়েছে। এ দুজনের বাবা রাজশাহীর একটি পেট্রোল পাম্পে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মাসিক বেতনের কর্মচারী। ৫ আগস্টের আগে দুই ভাই টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। ৫ আগস্টের পরে সেসব টিউশনি ছেড়ে দেন। তাদের বাবার নাম এস এম কবিরুজ্জামান। তাদের আদিবাড়ি নাটোরের গোপালপুরে। এক দশক আগে ব্যবসা করতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন কবিরুজ্জামান। এরপর নাটোরের বাড়িভিটা বিক্রি করে দেনা শোধ করেন। প্রায় আট বছর আগে পরিবার নিয়ে রাজশাহী আসেন। বর্তমানে তিনি রাজশাহীর কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনে চাকরি করেন। সিয়াম ও সাদাব রাজশাহীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনার পর ঢাকায় গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরিবার আগে খড়খড়ি এলাকায় হজরত আলী নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকত। দুই ছেলে ঢাকায় চলে যাওয়ার পর বাবা-মা ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। বাসাটির ভাড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকা।