Image description

শুধু পাঠদান নয় , সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি । ভোট গ্রহণ , ভোটার তালিকা , শুমারি , জরিপ , টিকাদান , কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো , টিসিবির চাল বিতরণ , বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের । সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস । শিক্ষকেরা বলছেন , অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে পাঠদানের বাইরে এসব কাজ তাঁরা করছেন । এসব কাজের চাপে সিলেবাস শেষ করা যায় না । এতে শিখন ঘাটতি থেকে যায় শিক্ষার্থীদের । এর প্রভাব পড়ছে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানবহির্ভূত এই ব্যস্ততার চিত্র উঠে এসেছে একটি জরিপে । ‘ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত সরকারি দায়িত্ব পালন ' শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করেছে আজকের পত্রিকা । এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন একটি দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদেরা । জরিপে বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষকের অসন্তুষ্টিও উঠে এসেছে । জরিপের ফলাফল দেখে শিক্ষাবিদেরা সরকারি এসব কাজ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর , চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অথবা বেসরকারি সংস্থাকে ( এনজিও ) দিয়ে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন ।

পাঠদানের বাইরে বারোয়ারি কাজ করানোর কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অপেশাদার আচরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড . মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ । জরিপের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন , বহুমুখী কাজ করানোর কারণে সার্বিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষায় সংকট তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শিখন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি , যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে । এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী । সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুগল ফরমে ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয় । এতে অংশ নেন দেশের আট বিভাগের ৪৭ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯৬ শিক্ষক । এর মধ্যে ৫৩৫ জন সহকারী শিক্ষক ও ১৬১ জন প্রধান শিক্ষক । তাঁদের মধ্যে ৩৪ শতাংশের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১ থেকে ৫ বছর , ২৪ শতাংশের ৫ থেকে ১০ বছর , ১৬ শতাংশের ১০ থেকে ১৫ বছর , ১৫ শতাংশের ১৫ থেকে ২০ বছর এবং ১১ শতাংশের অভিজ্ঞতা ২০ বছরের বেশি । জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ও এনভিভো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে । প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক ( ২০২২-২৩ ) প্রতিবেদন অনুযায়ী , সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন । শিক্ষক আছেন লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন । এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ও মহিলা শিক্ষক ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন ।

শিক্ষকেরা ব্যস্ত বারোয়ারি সরকারি কাজে

সময়ে জারি করা অফিস আদেশ ঘেঁটে সরকারি কাজে নির্বাচিত শিক্ষকদের ৬০ দিন পাঠদানবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত থাকার তথ্যের সত্যতা মিলেছে । একাধিক অফিস আদেশের তথ্য বলছে , প্রাথমিকের শিক্ষকদের নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে ১৫ থেকে ৩০ দিন , স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে ১৮ দিন , টিসিবির চাল বিতরণ কার্যক্রমে দিন , মৌসুমি প্রতিযোগিতায় ২ দিন , অন্যান্য কার্যক্রমে অন্তত ৩ দিন সময় দিতে হয় । ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট কর্মদিবস ছিল ১৮৬ দিন । চলতি শিক্ষাবর্ষেও কর্মদিবসের সংখ্যা প্রায় একই । প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটিও প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাজের চাপ কমানোর সুপারিশ করেছে । ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড . মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে , শিক্ষকদের শিক্ষণ - শিখনবহির্ভূত কাজের চাপ যুক্তিসংগতভাবে কমিয়ে আনতে হবে ।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মানী নেই , ইচ্ছার বাইরে বাড়তি কাজ

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান , পাঠদানবহির্ভূত সরকারি বিভিন্ন কাজ করলেও বেশির ভাগ শিক্ষক এ জন্য কোনো সম্মানী পান না । জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক পাঠদানবহির্ভূত সরকারি কাজের জন্য সম্মানী না পাওয়ার কথা জানান । ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান , কিছু কাজের জন্য সম্মানী দেওয়া হলেও তা পরিশ্রমের তুলনায় অপ্রতুল । বাকি ৮ শতাংশ সম্মানী পান বলে জানিয়েছেন । জরিপের তথ্য বলছে , বেশির ভাগ শিক্ষক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কাজে অংশ নেন । জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিক্ষক জানান , তাঁরা ইচ্ছার বাইরে বাধ্য হয়ে এসব কাজে অংশ নেন । বাকি ১৬ শতাংশ জানান , কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব দায়িত্ব পালন করেন । শিক্ষকেরা জানান , এসব দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় ভোগেন তাঁরা ।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকেরা অন্তত ২০ ধরনের সরকারি কাজে অংশ নেন । এগুলোর মধ্যে রয়েছে - নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও ভোট গ্রহণ , ভোটার তালিকা হালনাগাদ , ভোটারের ছবি তোলার কাজে সহযোগিতা , কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো , ভিটামিন এ গ্লাস ক্যাম্পেইন , শিক্ষার্থীদের ওজন ও চোখ পরীক্ষা , শিক্ষার্থীদের এইচপিভি শিক্ষকেরা মনে করেন , পাঠের ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁদের মানসিক রেজিস্ট্রেশন , শিক্ষার্থীদের জরায়ু ও পেশাগত স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলছে । ক্যানসারের ভ্যাকসিন , ফাইলেরিয়া এ থেকে পরিত্রাণের পদক্ষেপ নিয়ে নির্মূল ও খুদে ডাক্তার কার্যক্রম , ডেঙ্গু তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বানও সচেতনতা কার্যক্রম , টিসিবির চাল জানিয়েছেন । বিতরণ , আদমশুমারি , ভূমি জরিপ , খানা জরিপ , ক্যাচমেন্ট ম্যাপ তৈরি , স্যানিটেশন জরিপ ও মৌসুমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন , বিদ্যালয় পরিষ্কার - পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি ।

এগুলোর বাইরে শিক্ষকদের নিজ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয় । প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উপবৃত্তি , বিভিন্ন সমাবেশ আয়োজন ( মা সমাবেশ , অভিভাবক সমাবেশ ) , রেজিস্ট্রার হালনাগাদ , উপবৃত্তি রেজিস্ট্রেশন , উপজেলা - জেলা অফিসে বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ । এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা । তাঁরা বলেছেন , দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে । বাধ্য হয়ে এসব পদের কাজও শিক্ষকদের করতে হয় । তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে অফিস সহায়ক ও দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান । প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানায় , ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর এলাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম কম্পিউটার অপারেটর , নিরাপত্তা প্রহরী এবং অফিস সহায়ক পদে কোনো জনবল নেই । তাই বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বও শিক্ষকদেরই পালন করতে হয় ।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ( প্রশাসন ) মো . সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন , মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে । এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । পাঠদানের বাইরের কাজে যায় ৬০ কর্মদিবস জরিপের তথ্য বলছে , পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনে শিক্ষকেরা বছরে অন্তত ৬০ দিন ব্যয় করেন । অর্থাৎ ওসব কাজের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকেরা এসব দিনে পাঠদান করাতে পারেন না । বদলি শিক্ষকের ব্যবস্থা করা না গেলে ওই শিক্ষকের ক্লাসগুলো হয় না । এতে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ( ডিপিই ) বিভিন্ন নথিপত্র ও বিভিন্ন কারা দেন অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ জরিপের ফলাফলে দেখা যায় , পাঠদানবহির্ভূত কার্যক্রমের বেশির ভাগই শিক্ষকেরা করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায় । শিক্ষকেরা জানান , ৫৩ শতাংশ সরকারি কাজ করার সরাসরি নির্দেশ আসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে । ২৫ শতাংশ কাজের নির্দেশনা দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা । বাকি কাজগুলো বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা , জেলা প্রশাসন , উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকেরা করেন । যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ জুলাইয়ের একটি অফিস আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের কৃমি সংক্রমণের মাত্রা নির্ণয়ের লক্ষ্যে ১৬ জেলার শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করতে শিক্ষকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে । এতে বলা হয় , স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তত্ত্বাবধানে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বছরে দুবার কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করানো হয় । কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানার প্রয়োজন রয়েছে । এ জন্য নির্ধারিত জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হবে ।

এসব কাজ করানোর পরামর্শ ১৯ শতাংশ শিক্ষকদের । বাকি ২০ শতাংশ শিক্ষক জানান , এনজিও , চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ , কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়ে এসব কাজ করানো উচিত । জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন , প্রাথমিকের শিক্ষকেরা পাঠদানবহির্ভূত বহু কাজের সঙ্গে জড়িত । এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা - ই বাস্তব চিত্র । এসব কাজের জন্য পঠন - পাঠনে তাঁদের মন দেওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সারাক্ষণই শিক্ষা প্রশাসনেই ব্যস্ত সময় পার করেন । ' ভূমি জরিপ কি শিক্ষার কাজ ? — এমন প্রশ্ন করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন , এটা তো ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ । টিকার কাজ কি শিক্ষার কাজ ? দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে বণ্টন করা প্রয়োজন । মাঠপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের প্রচুর জনবল আছে । তাদের নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো যায় । শিক্ষকদের কোনোভাবেই শ্রেণিকক্ষের বাইরে অতি জরুরি প্রয়োজন বা জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগের সময় ছাড়া আর কোনো কাজে যুক্ত করা যাবে না । পঠন - পাঠনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না ।

বাইরের অতিরিক্ত কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষায় জরিপে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন , পাঠদানবহির্ভূত অতিরিক্ত কাজের ফলে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে । বিশেষ করে বিকল্প শিক্ষকের অভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলে । এতে শিখন ঘাটতি হয় , যা শিক্ষার্থীদের ফলাফলসহ সার্বিক পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে । জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ শিক্ষক জানান , বাইরের কাজের চাপে ওই সময় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না । ৩৪ শতাংশ শিক্ষক জানান , মাঝে মাঝে অন্য শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয় । ১৫ শতাংশ শিক্ষক জানান , অন্য শিক্ষক ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের শিখনে কাজে লাগে না । প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান , পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষকেরা প্রায়ই ক্লাস নিতে পারেন না । এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা । এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন , প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অনেক সরকারি কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয় , যা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে । একজন শিক্ষক অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে মুক্ত থাকলে পাঠদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন । এতে শিশুরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে । বেতনভাতা , মর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট অধিকাংশ শিক্ষক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে , বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষক অসন্তুষ্ট । ৮৭ শতাংশ শিক্ষক জানান , শিক্ষার মান উন্নয়নে বেতনভাতা বৃদ্ধি করতে হবে । এর বাইরে তাঁরা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা , মিড ডে মিল চালু , মনিটরিং কার্যক্রম চালু , বিদ্যালয় সময়সূচি পুনর্বিবেচনা , শিক্ষাক্রম উন্নয়ন , পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান । বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ১২ তম গ্রেডে বেতন পান । দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বেতন গ্রেড উন্নতির দাবিতে আন্দোলন এই করছেন । তাঁরা বলছেন , এই গ্রেড তাঁদের পেশার মর্যাদার সংগতিপূর্ণ নয় ।

আদেশে আরও বলা হয় , সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরিপ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে । দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো . আবদুল আজিজ বলেন , মূলত অন্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে শিক্ষক কর্মকর্তারা এসব কাজে ( পাঠদানবহির্ভূত ) অংশ নেন ।

কারা করতে পারেন এসব কাজ

জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান , ঢালাওভাবে শিক্ষকদের দিয়ে সব কাজ না করিয়ে যে মন্ত্রণালয়ের কাজ সেই মন্ত্রণালয়ের জনবল দিয়েই করানো উচিত । বেকার তরুণ- তরুণীদের দিয়ে এসব কাজ করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ১৫ শতাংশ শিক্ষক । 

যা বললেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

জরিপের সার্বিক ফলাফলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা . বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ১৩ জুলাই আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ এসব বিষয়ে আমরা অবগত । কীভাবে শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ কমিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি । আমরাও মনে করি , শিক্ষকদের শিক্ষকতার কাজেই থাকা দরকার । আমাদের দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্যই এটি ( পাঠদানবহির্ভূত কাজ ) থেকে সরে আসা প্রয়োজন । ’ বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিধান রঞ্জন বলেন , বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত । এ বিষয়ে পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে । বিষয়টির বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায় , তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে ।