
বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশের দুই দিনব্যাপী চূড়ান্ত বৈঠক শুরু হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদার বাংলাদেশের মধ্যে মাসব্যাপী চলা অচলাবস্থার অবসান হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার সন্ধ্যায় বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। আজ বৈঠকটি ওয়াশিংটন ডিসির ইউএসটিআর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ট্রাম্প প্রশাসনের পালটা ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়ে বাংলাদেশ দ্বিমত পোষণ করে আসছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাড়তি শুল্ক রপ্তানিকারকদের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন রপ্তানিকারক, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। তবে এখন দেখার বিষয় ইউএসটিআর-এর সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠকে পালটা শুল্ক কতটা কমানোর সম্মতি মেলে। আর সেটি না হলে দুদিন পরই অর্থাৎ ১ আগস্ট থেকে পালটা শুল্ক কার্যকর হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পালটা শুল্ক কার্যকরের আগে আশা করছি একটি ভালো আউটকাম আসবে।’
দেশের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ইউএসটিআর-এর সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠকে পালটা শুল্কের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে দুই সহযোগীর মধ্যে স্থিতিশীলতা আনবে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং বিশ্ব অর্থনীতি পুনর্গঠনে দেশটির প্রধান অংশীদারদের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতা চুক্তি না হলেও ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।
এদিকে পালটা শুল্ক কমানোর উদ্যোগ হিসাবে ২৩ জুলাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবস্থানপত্র ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূরীকরণসহ নানা ইস্যুতে ঐকমত্য হওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এখন চূড়ান্ত বৈঠকে ইউএসটিআর-এর সঙ্গে সরাসরি তা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে। সেখানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান উপস্থিত থাকবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি। এ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে এই বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পালটা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া পেতে বাংলাদেশ বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ ক্রয় ও ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় শতভাগ প্রত্যাহারের পক্ষেও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সয়াবিন, তেলবীজ, ডাল, চিনি, বার্লি, এলএনজি ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এর আগে চলতি বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।