Image description

নীলফামারী জেলার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভূসংস্থান বেশ সমৃদ্ধ, যা অন্য জেলা থেকে এ জেলাকে কিছুটা হলেও আলাদা করেছে। কৃষিনির্ভর এ জেলার মানুষজন বরাবরই সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির নানান হিসাবনিকাশে নাকাল জেলাবাসী। জেলাটি মূলত আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। তবে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হওয়ার পর জেলায় ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর।

জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি জামায়াত অধ্যুষিত। বাকি আসনগুলোতেও রয়েছে বড় সমর্থন। সে সুবিধা কাজে লাগিয়ে সব আসনেই জয় পেতে মরিয়া জামায়াত। সে লক্ষ্যেই দলীয় প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।

তবে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন কোণঠাসা। সে কারণে দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গেই লড়াইয়ের জোর প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছেন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। একটি আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভালো ভোট থাকলেও তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও জামায়াত। এ কারণে লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেনÑসেটা এখনই বলা কঠিন।

দুটি আসনে জুলাই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রতিনিয়ত প্রচারের ব্যাপ্তি ছাড়াচ্ছেন। এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদসহ অন্য ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটি থাকলেও নির্বাচনমুখী তৎপরতায় দেখা যাচ্ছে না।

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা)

জেলার উত্তরের দুটি উপজেলা ডোমার ও ডিমলা নিয়ে নীলফামারী-১ আসন। আসনটি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির আসন বলে পরিচিত। এবার এ আসনটি নিজ দখলে নিতে লড়ছে বিএনপি ও জামায়াত। এ আসনে উভয় দলের ভোটার প্রায় সমান হওয়ায় উভয় দলেই নিজ নিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন।

এখানে হেভিওয়েট প্রার্থী আছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। গত ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলের সব আন্দোলন-সংগ্রামে সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিল মাওলানা আফেন্দীর। বারবার জেলজুলুমের শিকার এ নেতা ফ্যাসিস্ট সরকারের কারাগারে আটক ছিলেন মাসের পর মাস। সরব ছিলেন জুলাই বিপ্লবসহ সরকারবিরোধী সব লড়াইয়ে।

সাধারণ ভোটারদের মতে, মাওলানা আফেন্দী ২০০১ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে মাঠে আছেন এবং নিজের সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে গণমানুষের সেবার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে নির্বাচনি মাঠে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা, ভাবনা আর সাহসিকতায় তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস।

মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জানান, চলমান পরিস্থিতিতে সময় এসেছে তার হাতকে শক্তিশালী করার এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ আসনে তাকে বেছে নিয়ে নিষ্কলুষ সমাজ গঠনে সহযোগিতা করার।

এ আসনে এক সময় বিএনপির প্রার্থী সংকট ছিল ও দলটি ছিল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। এ অবস্থা থেকে বের হতে ১৯৯৬-এর নির্বাচনে আসনটিতে প্রার্থী হন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগনে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন। সেবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হলেও পরবর্তী সময়ে হেরে যান তিনি।

তুহিন এলাকায় আসার পর সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে থাকে বিএনপি। ১/১১-এর সরকার ক্ষমতায় এলে একাধিক মামলায় জড়ানো হয় তুহিনকে এবং একপর্যায়ে দেশ ছাড়েন তিনি। তার অনুপস্থিতিতে বাবা রফিকুল ইসলাম দলীয়ভাবে এ আসন থেকে নির্বাচন করে হারলেও এবার আসন পুনরুদ্ধারে নির্বাচনে তিনিই লড়বেন দলের কান্ডারি হতে।

এটিকে খালেদা জিয়ার নিজস্ব আসন বলে মনে করেন বিএনপি। তবে সাংগঠনিক নানা অসংগতির বেড়াজালে বন্দি স্থানীয় বিএনপি, যার খেসারত দিতে হয় জিয়া পরিবারকে। এ ছাড়া ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই উপজেলায় বিএনপি প্রার্থীর ভরাডুবি তাদের ফেলেছে নুতন সমস্যায়। সে হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে সচেতনমহল।

জানতে চাইলে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন জানান, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মডেল জেলা হিসেবে নীলফামারীকে গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য।

এদিকে আসনে জামায়াতে ইসলামী সার্বিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে তারা মনে করছে। গত ২০১৪-এর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এ আসনের ডোমার ও ডিমলা এ দুই উপজেলায় সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তারা, যা তাদের নতুন আশা দেখানোর পাশাপাশি দিয়েছে উদ্যম। তাদের রয়েছে শক্তিশালী সংগঠন, নিবেদিতপ্রাণ তৃণমূল কর্মী বাহিনী ও ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী সময়ে জনগণের মধ্যে তাদের মোহহীন রাজনীতি। দলের এ ইমেজ ভোটের ময়দানে তাদের বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

আসনটিতে জামায়াতপ্রার্থী হলেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার। তিনি জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, সরকারি অর্থ ও উন্নয়নের সুষম বণ্টন, জেলার সব চিহ্নিত সমস্যা দূরীকরণে ইনসাফ কায়েম এবং দুর্নীতিমুক্তভাবে সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখবে জামায়াতে ইসলামী।

তবে বর্তমানে বিগত দিনের ২০ দলীয় জোট ও জোটগত নির্বাচনের বাইরে কঠিন পরীক্ষায় উপনীত বিএনপি ও জামায়াত। নিজ নিজ সম্মানের লড়াই হিসেবে দেখছে তারা এ নির্বাচনকে।

নীলফামারী ২ (সদর)

জেলার সদর উপজেলা নিয়ে নীলফামারী-২ আসন। আসনটি আওয়ামী অধ্যুষিত বলে পরিচিত। বিগত সময়ে জোটগত নির্বাচনে জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় বিএনপিতে প্রার্থী সংকট। তবে আসনটিতে জামায়াতের শক্ত অবস্থান থাকলেও জামায়াতকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই আসতে হবে বিএনপির সঙ্গে। কারণ বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সাবেক ছাত্রনেতা ও বয়সে তুলনামূলকভাবে তরুণ হওয়ায় ভোটারদের দৃষ্টিতে পড়তে পারেন তারা। তবে সেক্ষেত্রে দলের সার্বিক ইমেজ একটি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যার সুবিধা পেতে পারেন জামায়াতের প্রার্থীরা।

আসনটি বিএনপির দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা রেদওয়ানুল হক বাবু।

কাজী আখতারুজ্জামান জুয়েল জানান, তিনি বিজয়ী হলে নীলফামারীকে একটি সার্বিকভাবে উন্নত জেলায় পরিণত করা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগÑসব দিক থেকে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা রেদওয়ানুল হক বাবু ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন গংদের নীলনকশার নির্বাচনের প্রতিবাদ করায় হাইকোর্টের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন। সে সময় জেলে বসে মাস্টার্স পরীক্ষা দেন তিনি।

বাবু জানান, তিনি নির্বাচিত হলে পরিবেশবান্ধব শিল্পোন্নত আধুনিক পরিকল্পিত নীলফামারী, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মেডিকেল হাব গঠন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা, স্থানীয় কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, শিল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, গ্যাস পাইপলাইন নীলফামারীর শিল্পকারখানা পর্যন্ত বিস্তৃত করা, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উত্তরণ ঘটানো, জেলার ফরেন রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য ভাষা ও টেকনিক্যাল এডুকেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গঠন করা হবে।

এ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হলেন, জেলা বারের সভাপতি আইনজীবী আল ফারুক আব্দুল লতিফ। জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার সন্তান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত এ আসনে নির্বাচন করায় এলাকার সবকিছু তার নখদর্পণে। তা ছাড়া বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে সিদ্ধান্তহীনতা ও প্রার্থী সংকটের কারণে জামায়াতে ইসলামী সার্বিক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফারুক আব্দুল লতিফ জানান, যদিও সংসদ সদস্যের প্রধান কাজ উন্নয়ন নয়, তবুও এলাকার উন্নয়নে সরকারের সব সেক্টরকে যুক্ত করে কাজে লাগিয়ে এলাকাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জের একাংশ)

নীলফামারী-৩ আসনটি জলঢাকা উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি জোটসঙ্গীকে বারবার ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এবারের নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সহসভাপতি সৈয়দ আলী। তিনি তার নির্বাচনি এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি। জামায়াত-দুর্গে আশা জাগিয়েছেন বিএনপির বিজয়ের।

তা ছাড়া জামায়াতের দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে রেখেছে দলটির স্থানীয় কতিপয় নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সৈয়দ আলী দলের সাংগঠনিক অবস্থা আগের তুলনায় ভালো করেছেন। তার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জামায়াত-দুর্গে। দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে কখনো দলের সামনে থেকে, আবার কখনোবা পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সৈয়দ আলী। মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের একমাত্র সারথি ছিলেন তিনি।

সৈয়দ আলী জানান, জলঢাকাকে মডেলে পরিণত ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সমৃদ্ধশালী কর্মমুখর উপজেলা হিসেবে গঠন করা হবে ।

অন্যদিকে জামায়াত এ আসনে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার কারণে তারা রয়েছে খোশ মেজাজে। কিন্তু বর্তমানে তারা সংগঠন শক্তিশালী করার পরিবর্তে তারা এখন আখের গোছাতে ব্যস্ত। এ আসনে তাদের প্রার্থী রংপুর মহানগরী সেক্রেটারি ওবায়দুল্লাহ সালাফী। তিনিও এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। এলাকায় অপরিচিত ও নতন হওয়ায় শুধু সাংগঠনিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে ভোটের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে সাধারণ ভোটারদের অভিমত।

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ সালাফী জানান, তিনি বিজয়ী হলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, হাট-বাজারের অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন ও রিমোট এলাকাগুলোকে উন্নয়নে প্রধান্য দেওয়া হবে।

এ আসনে এনসিপি প্রার্থী হলেন, দলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিয়ন। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে এ বীরসেনানি এলাকার সাধারণ ভোটারের কতটুকু আনুকূল্য পাবেন তা সময়ের সঙ্গে এখনো অজানা। তবে জুলাই বিপ্লব জনগণের মধ্যে যে আশা নিয়ে এসেছিল, তা শুধু এ নেতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব বলে সাধারণের অভিমত, যা তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে।

আবু সাঈদ লিয়ন বলেন, বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষ ও তরুণরা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। চাঁদাবাজি, দখলদারি, খুন, রাহাজানি দলীয় প্রভাবে হয়রানি মানুষকে ব্যাপকভাবে আঘাত করেছে, যার ফলাফল ভোটের মাঠে এনসিপিকে এগিয়ে রাখবে।

আবু সাঈদ লিয়ন জানান, তিনি নির্বাচিত হলে মাদক ও জুয়া বন্ধ, তরুণদের খেলাধুলা ও তাদের নিজস্ব ইনোভেটিভ চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক প্রকল্প বাস্তবায়ন; তরুণদের মধ্যে নৈতিকতা, ধর্মীয় অনুশাসন ও দেশপ্রেম জাগ্রত ও সামাজিক সম্পর্কগুলো সুদৃঢ় করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নীলফামারী ৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ)

সৈয়দপুর উপজেলা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নীলফামারী-৪ আসন। এখানে অবাঙালিদের একটি বিরাট ভোটব্যাংক রয়েছে। নির্বাচনে এ অবাঙালি ভোটাররাই মূল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। তাই সব প্রার্থী নানাভাবে তাদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেনÑদলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, জেলা বিএনপির সদস্য শওকত চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী বিলকিস ইসলাম।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতে, শওকত চৌধুরী দলীয় লোকদের পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। জনমানুষের সঙ্গে তার রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। তাছাড়া ভোটের রাজনীতিতে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ। এ ছাড়া সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তবে ধর্মভীরু ভোটারের এ আসনে নির্বাচনে তিনি এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।

বেবী নাজনীন জানান, তিনি বিজয়ী হলে সৈয়দপুর, কিশোরগঞ্জকে একটি আদর্শ উপজেলায় পরিণত করা হবে। যেখানে থাকবে কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনা ও পরিচ্ছন্ন একটি শহর।

বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে শওকত চৌধুরী পেছন থেকে দলকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সাধারণের মধ্যে তার বিগত দিনের সংসদ সদস্যের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনি দৌড়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আপামর জনসাধারণের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন।

শওকত চৌধুরী জানান, এ আসনে তিনি এমপি ছিলেন। সে কারণে তার জানা রয়েছে সমস্যা ও সম্ভাবনা। তিনি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণের সার্বিক কল্যাণে কাজ করবেন।

আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী হলেনÑসৈয়দপুর উপজেলা আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। অবাঙালি ভোটারদের মধ্যে তিনি ব্যাপক পরিচিত থাকায় ভোটের ময়দানে তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে। সৈয়দপুরে জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থাও ভালো। তবে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সাংগঠনিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল।

নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি জানিয়ে মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম জানান, সুষম উন্নয়ন ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন, সৈয়দপুর রেল কারখানা আধুনিককরণের পাশাপাশি কারখানার কর্মসংস্থান সৃষ্টির খাতগুলো চালুকরণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কার্গো বিমান চালু, কিশোরগঞ্জে কৃষিবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ ও শিল্প স্থাপন করা হবে।

অন্যদিকে আসনটিতে এনসিপির প্রার্থী হলেন দলটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিয়ন। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের এ বীর সেনানি এলাকার সাধারণ ভোটারের আনুকূল্য পেতে এবং নিজের বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি জানান, নির্বাচিত হলে সৈয়দপুরকে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়িক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে জেলার যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরি, সৈয়দপুরে ক্যাম্পবাসীর জীবনমান বা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।