Image description

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ প্রথমবারের মতো বার্ষিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর ঋণ পরিপক্ব হওয়া এবং বাজেট সহায়তা ঋণের গ্রেস পিরিয়ড কমে আসায় ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানিয়েছে, বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলে মোট ৪.০৮৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় এক বছরে পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২১.২ শতাংশ। ইআরডির হিসাব অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৮.৮ শতাংশ। এই সময়ে আসল পরিশোধ হয়েছে ২.৫৯৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের বছর তা ছিল ২.০২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, সুদ পরিশোধে এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যয় করেছে ১.৪৯১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের ১.৩৪৯ বিলিয়নের তুলনায় ১০.৫ শতাংশ বেশি।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিগত সময়ে নেওয়া অনেক মেগা প্রকল্প ও বাজেট সহায়তা ঋণের অনুকূল সময়সীমা (গ্রেস পিরিয়ড) শেষ হওয়ায় মূল ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। তারা জানান, আগামী এক-দুই বছরের মধ্যেই রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরও কিছু বড় প্রকল্পের ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হবে। ফলে, পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে।

এদিকে, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে দেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা চাপের মুখে পড়ে। এ সময় থেকে যত্রতত্র অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে কিছু ছিল অপ্রয়োজনীয়, কিছু প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছিল। অনেক প্রকল্পেরই অর্থনৈতিক রিটার্ন নেই। যথাযথ সমীক্ষা বা মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের রাজস্ব আহরণ সব সময়ই চাপের মধ্যে থাকে। ফলে, এসব প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।

এর ফলে, গত সাত বছরে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ঋণ বৃদ্ধির গতি এবং ঋণ গ্রহণের পদ্ধতি উভয়ই উদ্বেগজনক। ড. রিয়াজ আরও বলেন, হার্ড টার্ম ঋণের পরিমাণও বেড়েছে, যার সুদ হার বেশি, গ্রেস পিরিয়ড কম এবং পরিশেধের সময় সীমিত। কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত মোকাবিলায় ব্যালান্স অব পেমেন্ট স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কয়েকটি বাজেট সহায়তা ঋণ নিয়েছে। এসব ঋণের অনেকটারই স্বল্প গ্রেস পিরিয়ড ও দ্রুত পরিশোধের শর্ত ছিল, ইতোমধ্যেই এগুলোর পরিশোধ শুরু হয়েছে।

এই পরিস্থিতি আমাদের রাজস্ব ব্যয় ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক শৃঙ্খলকে বড় চাপে ফেলেছে। এখন সময় এসেছে ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা, ভবিষ্যৎ ঋণচাহিদা এবং সামগ্রিক রাজস্ব কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করার। এদিকে ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়লেও আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতি দুটোই কমেছে।

ইআরডির হিসাব অনুযায়ী, সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট ৮.৩২৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে কিংবা এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আগের অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ১০.৭৩৯ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, এই সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ছাড় হয়েছে ৮.৫৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ১০.২৮৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় কম।