
শুরুতেই হোঁচট খেলো জাপা’র জিএম কাদেরবিরোধী জোট। জাতীয় পার্টির পাঁচ অংশের নেতাদের নিয়ে এ জোট হওয়ার কথা ছিল। এ প্রক্রিয়ায় এক মঞ্চে উঠেছিলেন পাঁচ অংশের নেতারা। জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও জাতীয় পার্টি (মতিন)-এর নেতারা। এছাড়া যোগ দিয়েছিলেন পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে থাকা কিছু নেতাকর্মী। এই সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন সদ্য বহিষ্কার হওয়া সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে ছাড়াই মঞ্চে উঠেন তারা। এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও নেতাদের জোট বা ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ার এই প্রক্রিয়ায় থাকছেন না জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ঐক্যপ্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা নেতারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এতে সায় দেননি। নিজের পার্টির অবস্থান ধরে রেখেই তিনি রাজনীতি করতে চান। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু না থাকলেও বাকি চার গ্রুপের নেতারা একসঙ্গে ফ্রন্ট করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তারা জাতীয় পার্টির নতুন কোনো অংশ করতে চান না। তারা চাইছেন জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ জিএম কাদেরের কাছ থেকে নিজেদের হাতে নিতে। এজন্য তারা নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে আইনি লড়াইয়ের কথাও ভাবছেন। সামনে সম্মেলন ডেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে বলেও নেতারা জানিয়েছেন।
জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে বহিষ্কৃত নেতাদের বিস্তর অভিযোগ।
তারা বলছেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে একের পর এক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছেন তিনি। গঠনতন্ত্রের ২০ এর ১ (ক)’র ক্ষমতাবলে তিনি কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই ৩০০’র অধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছেন। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করায় বহিষ্কার করা হয়েছে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ-এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। ২০ এর ১ (ক) ধারা- ডেলিগেটদের মাধ্যমে বাতিলের প্রস্তাব দেয়ায় দীর্ঘদিনের সঙ্গী মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকেও বহিষ্কার করা হয়। কাউন্সিল ছাড়াই মহাসচিবের দায়িত্ব পান ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। যদিও তিনি এই অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, তাদের বহিষ্কার ও মহাসচিব নিয়োগ নিয়ম মেনেই হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, ’২৪-এর নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ থেকে পাওয়া টাকা গ্রহণ করেছেন জিএম কাদের। আসন সমঝোতায় নিজের স্ত্রীর আসন রাখার জন্য সিনিয়র নেতাদের নাম বাদ দেন। সবথেকে বড় অভিযোগ তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে তিনি ’২৪-এর ডামি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
রওশন এরশাদ অনুসারীদের অংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, জিএম কাদেরের সঙ্গে কেউ নাই। তিনি একা হয়ে পড়েছেন। যারা জাতীয় পার্টি বানালো তাদেরকেই তিনি দল থেকে ঝেরে ফেলেছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। নির্বাচন কমিশন, আদালতে মামলা করেছি। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাকে সরিয়ে দেবো। ঐক্যর বিষয়ে তিনি বলেন, পূর্বের ইতিহাস সকলের জানা। কিন্তু জিএম কাদের দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর জাতীয় পার্টিকে নষ্ট করেছেন। তার শুধু স্ত্রীর আসন চাই। ’২৪-এর নির্বাচনে রওশন এরশাদকেও নির্বাচন করতে দেয়া হয় নাই। রংপুর ৩ আসনটাও কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা সকলকে নিয়ে একটি নতুন জাতীয় পার্টি গড়ে তুলতে চাই। যেখানে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা ও স্বপ্নের বাস্তবায়ন থাকবে। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকবো। তিনি আরও বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরাই জাতীয় পার্টি। তিনি (জিএম কাদের) কোনো আন্দোলন সংগ্রামে না থেকে শুধু ভাই হওয়ার কারণে পার্টির নিয়ে খেলতে পারেন না।
সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমরা যারা এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছি, আমাদের উচিত হবে সবাই মিলে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে জাতীয় পার্টি হবে জাতীয় রাজনীতির বিকল্প শক্তি। তিনি বলেন, আমরা আর পার্টির বিভাজন চাই না। আমরা নিয়মমাফিক কাউন্সিলের মাধ্যমে দল পরিচালনা করবো।