Image description

ভ্রমণ বিষয়ক জনপ্রিয় বাংলাদেশি ব্লগার নাদির নিবরাস (নাদির অন দ্য গো) গত এক বছরে বিশ্বের ১৭টি দেশে ভ্রমণের জন্য ভিসার আবেদন করেছেন। কিন্তু সেগুলোর মধ্যকার ৭টি দেশ তার ভিসার আবেদন বাতিল করেছে। কর্তৃপক্ষের এ আবেদন বাতিলের কারণ হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের কিছু ভুলকে চিহ্নিত করার দাবি করেন তিনি। এছাড়া, দিন দিন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পাসপোর্টের মানের অবনতি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

রবিবার (২৭ জুলাই) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, অনেকে মনে করে আমি যেকোনো দেশে যেতে পারি, কারণ আমি অনেক দেশ ঘুরেছি আর আমার পাসপোর্টে কিছুটা সুবিধা আছে। এটা কিছুটা সত্য হলেও, আমার এখনো একটা বাংলাদেশি পাসপোর্ট আছে—আর এই পাসপোর্টে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। গত এক বছরে আমি ১৭টা দেশে যেতে চেয়েছিলাম বা তাদের ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। তার মধ্যে ৭টা দেশ আমার ভিসা রিজেক্ট করেছে।

ভিডিওতে নাদির জানান, তিনি বাহরাইনের ভিসা পাননি। কারণ, ই ভিসা আবেদনে সমস্যার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। ইটালিতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে যান এবং কম্বোডিয়াতে পর্যটক ভিসায় ‍গিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাংলাদেশিরা। যার কারণে আবেদন বাতিল হয়েছে।

তিনি বলেন, ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষের রিজেকশন লেটার দেখে বাতিলের কারণ হিসেবে মনে হয়েছে, তারা হয়তো মনে করেছে, বাংলাদেশি একজনের ৪০ দিন ভিয়েতনামে গিয়ে ঘোরার টাকা নেই। পরে শুনি বাংলাদেশ থেকে কোনো লোকই নিচ্ছে না, কারণ সেদেশে লোক ঢুকে আর বের হচ্ছে না। সিঙ্গাপুরেও অবৈধভাবে লোক গিয়ে অনেকে বের হচ্ছে না। তাজিকিস্তানে গিয়ে সেখান থেকে বাংলাদেশিরা রাশিয়ায় যাচ্ছে। এসব কারণে এসমস্ত দেশে ভিসা আবেদন বাতিল করছে। তাছাড়া নেদারল্যান্ডসে মিউজিক ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে আবেদন করার পর তারাও রিজেক্ট করেছে।

বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান হ্রাস পাওয়ার কারণ হিসেবে নাদির নিরবাস বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট শেষ হওয়ার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের নাগরিকরা বিদেশে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে যাচ্ছে, বের হচ্ছে না। বাংলাদেশিদের টেন্ডেন্সি বেশি এই ভাবা যে, অন্য দেশে গেলেই জীবন সেট, যেটা সঠিক নয়। পড়াশোনা করতে গেলে ভিন্ন বিষয়। কিন্তু যাদের পড়াশোনা করার সুযোগ নেই তারা যদি বলে অবৈধ পথ ছাড়া সুযোগ নেই। তখন আমি বলব যে, আরেক বার চিন্তা করে দেখেন। অবৈধভাবে গেলেই যে ভাল লাইফ, সেটা নয়। উল্টা বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ লাইফে পৌঁছাতে পারেন। বাংলাদেশকে কেউ ভিসা দিতে চাচ্ছে না। কারণ, এ দেশ থেকে ইউরোপে যারাই যাচ্ছে তারা অবৈধভাবে থেকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থা মোটেও ভাল নয়। আমি ৫ বছর আগে একটি ভিডিও বানিয়েছিলাম, বাংলাদেশ পাসপোর্ট নিয়ে কোন ৪৮ দেশে যাওয়া যায়। আর সত্যি বলতে ঐ ভিডিওটা বানানোর সাথে সাথেই প্রায় তা আউট অব ডেট হয়ে গিয়েছিল। কারণ, এটা খুবই ফাস্ট চেঞ্জিং একটা টপিক। তবে আমি আপনাদের একটি কথা বলব যে, দিন দিন বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, ভাল হচ্ছে না।

নাদির আরও বলেন, আমি একজন ট্যুরিস্ট। আমার ধারণা নেই, কোন দিকে মানুষ কীভাবে গিয়ে কাজ করবে বা কিছু একটা করে। ওরকম কোনো উদ্দেশ্যে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে কোথাও জীবনে যাইনি। গতবার ভিডিওটা আমি করেছিলাম, বাজে একটা রেসপন্স এসেছিল। মানে মেসেজগুলো দেখে মনে হয়েছিল যে, আমি আদম ব্যবসার সাথে জড়িত। মানুষ বলছে আমাকে মেসেজ দিতে কত টাকা লাগবে, কী লাগবে বা আমাকে নিয়ে যান। আমাকে মানুষ পাসপোর্টের ছবি পাঠানো শুরু করেছে ইনবক্সে। বাজে অভিজ্ঞতার কারণে সেটাই আমার প্রথম এবং শেষ ভিডিও ছিল এই টপিকের উপর।

প্রসঙ্গত, নাদিরের জন্ম দিনাজপুরে। তবে এখন মা, বাবা ও বোন থাকেন ঢাকায়। ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল করে ২০১০ সালে নাদির চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে যন্ত্রকৌশলে স্নাতক ও ডেটা সায়েন্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। তবে ভ্রমণেই তার সব ধ্যান–জ্ঞান। ছোটবেলা থেকে মা–বাবার সঙ্গে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করেছেন, এখন ঘুরছেন একা।