
Faham Abdus Salam ( ফাহাম আবদুস সালাম)
- ফাহাম ভাই আপনি বিএনপির ভবিষ্যতে স্বৈরাচার হয়ে উঠা কিংবা আওয়ামী লীগের ফিরে আসা - এই দুইটা সম্ভাবনার গুরুত্ব দেন না কেন?
- কোনো সরকার চাইলেই কোনোদিন স্বৈরাচার হয়ে উঠতে পারে না। এর জন্য স্ট্রাকচার লাগে, বিশেষ সুবিধা লাগে। আওয়ামী লীগ যে মনস্টার হৈছিলো - এর তিনটা কারণ ছিলো। কোনো ৪ নম্বর কারণ নাই। জাস্ট ৩ টা কারণ।
১. আওয়ামী লীগের একটা এলাই ছিলো: ইন্ডিয়া। যে একটা রিজিওনাল মিডল পাওয়ার কিন্তু আওয়ামী লীগের হয়ে সারা দুনিয়ায় ব্যাটিং করতো।
২. আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করতে হোতো না এবং এই যে দেশে নির্বাচন না হওয়া, সেটা তারা হজম করতে পারতো - কারণ, সারা দুনিয়ায় সেটা হালাল করতো ইন্ডিয়া।
৩. ডোমেস্টিক সার্কিটে আওয়ামী লীগের জন্য বৈধতা উৎপাদন করতো শিক্ষিত শ্রেণী (সাংবাদিক-সাহিত্যিক থেকে নিয়ে মিলিট্ৰি-ব্যবসায়ী ক্লাস )
আপনি যদি অনেস্টলি চিন্তা করেন - বিএনপির পক্ষে এই তিনটার একটা শর্তও পূরণ করা সম্ভব না।
বিএনপির কোনো আন্তর্জাতিক এলাই নাই। বড়জোর ফ্রেন্ড আছে - কিন্তু আকাম-কুকামে সাপোর্ট করার জন্য যে বন্ধুতা ও গোলামি লাগে - তার ধারে-কাছেও বিএনপি নাই। সাধারণত কোনোদেশেই একটা "দলের" সাথে আরেকটা দেশের সরকারের এই ধরনের ঘন প্রেম হয় না। ইন্ডিয়া যেভাবে একটা দলকে সাপোর্ট করেছে - এই ঘটনাটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিরল এবং মোস্ট সার্টেনলি - চায়না, এমেরিকা, রাশা কোনোদিনও এইরকম ন্যাংটা হয়ে একটা রাজনৈতিক "দল"কে এই সাপোর্ট দিবে না। আর ইন্ডিয়ার সাথে বিজনেস ইনট্রেস্ট বাংলাদেশের মানুষ মানবে। কিন্তু অন্য কোনো কিছু নিয়ে লটকালটকি করতে গেলে বিএনপির নিজের সাপোর্ট বেজই বিএনপিকে ছেড়ে যাবে। এটাই বাংলাদেশের নিউ রিয়ালিটি।
ল্যাংটা ভারতীয় আধিপত্যবাদ - বাংলাদেশে আর সম্ভব না। হয় ইন্ডিয়াকে ফিজিকালি দখল/যুদ্ধ এসব করতে হবে না - না হয় বাংলাদেশের নিউ রিয়ালিটি মেনে নিতে হবে।
................................
নির্বাচন ছাড়া বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকার কোনো উপায় নাই। বাংলাদেশে কিছু জিনিস আর সম্ভব হবে না '২৪ এর কারণে। এই দেশে গুম করা যাবে না, মেগা স্কেলে দুর্নীতি করলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করলে আপনি সরকার ফর্ম করতে পারবেন না (তার মানে আমি এটা বলছি না একটা কেন্দ্রে বা একটা আসনেও কোনো গ্যাঞ্জাম হবে না)। নর্মালাইজ করার জন্য না মোটেও - কিন্তু ২০০ বাঙালি এক জায়গায় আসলে সেখানে মারপিট হবেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হয়তো ৫ জন জড়ো হলেই মারপিট হবে। কোনো না কোনো কেন্দ্রে গ্যাঞ্জাম হতেই পারে কিন্তু বাংলাদেশে বড় স্কেলে প্ল্যানড ভোট-রিগিং করা নিকট ভবিষ্যতে অসম্ভব। ঐ ক্যাপাসিটি ও এপেটাইট আর নাই।
................................
বাংলাদেশের শিক্ষিত শ্রেণী বিএনপিকে ভোট দেবে কিন্তু কোনোদিনও ব্লাইন্ড সাপোর্ট দিবে না। ইন ফ্যাক্ট - বিএনপি যদি সরকার গঠন করে - তার আসল বিরোধী দল পার্লামেন্টে হবে না, হবে ফেইসবুক ক্লাস। এই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আমি যতোটুকু বুঝেছি - বিএনপি যদি আওয়ামী লীগের রাস্তায় উঠে - নিজ দলের সমর্থকরাই সবার আগে হিজরত করবে। আওয়ামী লীগের মতোন আনকন্ডিশনাল সাপোর্ট দেওয়ার মানুষ বিএনপিতে খুব কম - এবং এই বন্দোবস্ত বাংলাদেশের জন্য একটা ভালো জিনিস বলেই আমি মনে করি।
বিএনপির নেতাকর্মীরা অবশ্যই ফেরেশতা না। তারা অবশ্যই দুর্নীতি করবে। বাংলাদেশে দুর্নীতি থাকবে এবং অবশ্যই সেটা গর্হিত অপরাধ। কিন্তু দুর্নীতি করা আর পুরা সিস্টেমকে ধ্বংস করে "একনায়কতন্ত্র" এস্ট্যাবলিশ করা - একই লেভেলের অপরাধ না। আমার পর্যবেক্ষণ হোলো বিএনপির যতো অপরাধই থাকুক - এখন পর্যন্ত অন্তত তারা গণতান্ত্রিক সিস্টেমকে ধ্বংস করতে চায় না। এমন কি চাইলেও তারা আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাশিস্ট স্ট্রাকচার তৈরী করতে পারবে না। ঐ সক্ষমতাটাই তাদের নাই।
...................................
বিএনপি ও বাংলাদেশের আসল রিস্ক "একনায়কতন্ত্র"/"স্বৈরাচার" না। কিংবা এনসিপির কথিত "পুরোনো বন্দোবস্ত" না। বাংলাদেশ তথা বিএনপির আসল রিস্ক একনায়কতন্ত্রের চাইতেও ১০ গুন্ বিপজ্জনক। এই দেশের এখন যে বেকারত্ব - এবং ল এন্ড অর্ডারের যে মাজুল অবস্থা - এখানে আসল বিপদ হোলো কমপ্লিট এনার্কি। জ্যোতি রহমানের দেওয়া একটা তুলনা এক্ষেত্রে রেলেভেন্ট। অস্ট্রেলিয়াতে একবারই রেইস রায়ট হয়েছিলো ২০০৫ সালে (ক্রোনুলা রায়ট)। দাঙ্গা হয়েছিলো মাত্র দুই দিন। শনিবার ও রবিবার। সোমবারেও কিছু ঝামেলা হয়েছিলো। কিন্তু মঙ্গলবারে পুরা ঠাণ্ডা। কয়েক মাস পর ২০০৬ সালে ফ্রান্সেও ভয়াবহ রায়ট হয়েছিলো। কিন্তু সেটা চলেছিলো প্রায় ১৯ দিন এবং মাত্রা ছিলো ভয়ঙ্কর। দাঙ্গার সময় অস্ট্রেলিয়ায় বেকারত্ব ছিলো ৫% আর ফ্রান্সে তরুণদের (২৫ এর নীচে) বেকারত্ব ছিলো ২২-২৩% এবং কোনো কোনো দাঙ্গা এলাকায় সংখ্যাটা ৪০-৫০%। প্লেটে যদি আপনার খাবার না থাকে, আপনার মন, ছুরি দিয়ে কিছু কাটতে চাইবে - কোনো কারণ ছাড়াই। আর যদি সোমবার সকালে আপনাকে কাজে যেতে হয় - আপনি দাঙ্গা করতে পারবেন না।
বিএনপি যদি নির্বাচন জেতে এবং দ্রুত একেনমিক রিভাইভাল ও ল এন্ড অর্ডার ঠিক করতে না পারে - এই দেশের সর্বনাশ হবে। কোনো দেশে যদি বাংলাদেশের লেভেলের তরুণ বেকারত্ব থাকে - আপনি কোনো ভাবেই গভর্ন করতে পারবেন না। আমি আওয়ামী লীগের ফিরে আসা কিংবা বিএনপির স্বৈরাচার হয়ে ওঠা নিয়ে চিন্তিত না। এর চেয়ে অনেক ভয়াবহ বিপদ নিয়ে চিন্তিত। কমপ্লিট এনার্কি যার মূল কারণ বেকারত্ব। অনেকেই এর গুরুত্ব অনুধাবন করেন না কিন্তু আজকের বাংলাদেশে বেকারত্ব একটা জেনুয়িন সিকিউরিটি থ্রেট!
.......................
আওয়ামী লীগের ফিরে আসতে হলে একটা শর্ত পূরণ করতেই হবে। মাস্ট! আওয়ামী লীগের যারা প্রতিষ্ঠিত লোকাল নেতা, তাদের ফিরে এসে নির্বাচিত জনপ্ৰতিনিধি হতে হবে। তাদের মাধ্যমে কর্মীরা একত্রিত হবে ও দল রিভাইভ করবে। বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই টপ-ডাউন। উপরের লোকটা কার্যকর না হলে বাংলাদেশে নীচের থেকে আপনি রাজনীতিতে সংগঠিত হতে পারবেন না। অসম্ভব। নীচের থেকে সংগঠিত হয়ে আপনি সন্ত্রাস করতে পারবেন - রাজনীতি করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা প্রায় সবাই দেশের বাইরে। দেশে ফিরে আসলেই জেল ভরা অথবা দোয়ানো হবে (যেমনটা আপনারা দেখেছেন এনসিপির ৫ নেতা দ্বারা)। আপনি একজন আওয়ামী নেতার পার্স্পেক্টিভ থেকে বোঝার চেষ্টা করেন। দ্যা রিস্ক ইজ ওয়ে টু হাই। তারা ফেইসবুক-য়ুটিউবে তিসমার খান হবেন - একে ওকে দূরের দেশ থেকে জয়বাংলা বা জুলাইবাংলা করে দেবেন কিন্তু ফিজিকালি দেশে ফিরে এসে রাজনীতি করলে বিএনপি, জামাত, এনসিপি - প্রত্যেকেই য়ে করবে। অনেক ব্যথা হবে।
তবে! যদি দেশ কমপ্লিট এনার্কিতে চলে যায় - অল বেটস আর অফ। সেক্ষেত্রে কী হবে কেউ জানে না, আমারও ধারণা নাই। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ফিরতে পারে। আমরা যদি ১০ বছর একটা সিস্টেমে কমিট করি - এবং সেই সিস্টেমটা যদি ডিপলি ফ্লডও হয় - আওয়ামী লীগের ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নাই।
সোহেল তাজ যদি শুদ্ধ আওয়ামী লীগ শুরু করে। সে কি বডি বিল্ডিং বাদ দিয়ে আওয়ামী রাজনীতি করবে?
দেখেন যেকোনো ছেলে যে আজকের দিনে তিনচারবার বিয়ে করে - সে স্বভাবতই দুঃসাহসী ও মৃত্যুঞ্জয়ী। সে শাকিরার মতো পাছা দিয়ে কিং কোবরাকে আলতো বাড়ি মারার ভিডিয়ো টিকটক করতে চায়। পিছে থাকবে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লার কবিতা: বেদনার পায়ে ছোবল দিয়ে বলি - এই তো শালা জীবন। এই টাইপ মানুষ জীবনে অনেক ফলস স্টার্ট দিবে। জানা কথা। কিন্তু উনি যদি আওয়ামী লীগের নামে রাজনীতি করার চেষ্টা করেন - পরের দিন এনসিপির ৫ শ ছেলে তার জিমে গিয়ে জাঙ্গিয়া পরে ব্যায়াম করা শুরু করবে। ফলে তার জিমে আর কেউ ঢোকার সাহস করবে না। ফলে সোহেল তাজের ভাত কমে যাবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য বাংলাদেশে টিকে থাকা সম্ভব কিন্তু আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করা সম্ভব না যদি এই তিন পার্টির মধ্যে সামান্যতম ঐক্যও থাকে। আওয়ামী লীগকে য়ে করার ব্যাপারে তিনজনেরই সেলফ ইনট্রেস্ট আসলে এক: যদিও ভিন্ন ভিন্ন কারণে।
বাংলাদেশের মূল বিপদ য়ুথ আনএমপ্লয়মেন্ট। যারা মনে করছেন যে বিএনপির স্বৈরাচার হয়ে ওঠা কিংবা আওয়ামী লীগের ফিরে আসা হোলো আসল বিপদ তারা একই স্পটে দুইবার বজ্রপাতের আশংকা করছেন।