Image description

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে হেরোইনসহ এক যুবককে আটকের পর তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা করে পুলিশ। তবে পরে সেই মামলা ‘গায়েব’ করে একই নম্বরে ছিনতাই মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসানসহ কয়েকজন পুলিশের বিরুদ্ধে।

মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দেখা যায়, জেনিভা ক্যাম্প থেকে আনুমানিক ১০ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক সাদ্দাম নামে এক ব্যক্তিকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর পরিবর্তে পুরনো এক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আদালতে পাঠানো হয়। এরপর মাদক মামলাটি বাতিল করে একই নম্বরে দায়ের করা হয় ছিনতাই মামলা। নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় অন্য এক ব্যক্তিকে।

ঘটনার পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার এজাহারে ১০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের কথা থাকলেও পরে পুরো ১০০ গ্রাম হেরোইন ‘গায়েব’ হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

এই ঘটনায় তদন্তে নেমেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানিয়েছেন, একজন অতিরিক্ত উপকমিশনারকে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, মোহাম্মদপুর থানার আরও কারা এতে জড়িত, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ডিএমপির মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সদর দপ্তর থেকেও একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটিতে কারা আছেন বা সদস্য সংখ্যা কত—তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

হেরোইন উদ্ধারের ঘটনার এজাহার অনুযায়ী, গত ৬ মে রাতে মোহাম্মদপুরের জেনিভা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই রাতে এসআই শাখাওয়াত হোসেন তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা (নম্বর-২৪) করেন।

কিন্তু পরে সাদ্দামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার না দেখিয়ে ২০২৪ সালের একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আদালতে পাঠানো হয় এবং হেরোইন উদ্ধারের বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। এরপর একই নম্বর ব্যবহার করে এসআই ফেরদৌস জামান একটি ছিনতাই মামলা দায়ের করেন। এতে গ্রেপ্তার দেখানো হয় মামুন হোসেন নামে অপর এক ব্যক্তিকে।

পুরোনো মামলার বাদী হিসেবে যাঁর নাম রয়েছে, সেই এসআই শাখাওয়াত বর্তমানে বরিশালে কর্মরত। তিনি বলেন, ঘটনার দিন তিনি এসআই আলতাফ ও এএসআই সাত্তারের সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকায় টহলে ছিলেন। জেনিভা ক্যাম্পে মারামারির খবর পেয়ে তারা সেখানে যান এবং ২০–৩০ জনের গণপিটুনির কবলে পড়া সাদ্দামকে উদ্ধার করেন। পরে যাচাই করে দেখা যায়, সাদ্দামের বিরুদ্ধে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।

শাখাওয়াত জানান, পরে ওয়ারেন্ট দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। তবে তিনি দাবি করেন, কোনো মাদক উদ্ধার করেননি এবং তিনি নিজেও জানেন না কীভাবে তার নাম মাদক মামলার বাদী হিসেবে যুক্ত হলো। তার ভাষ্য, ‘আমি কোনো এজাহার দিইনি, জব্দ তালিকাও তৈরি করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন আমরা কাউকে তল্লাশি করে মাদক পাইনি। সিনিয়র অফিসাররা ফোন করে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে আমি বলেছি, দোষী যার, তার শাস্তি হোক। সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আমার গতিবিধি বোঝা যাবে।’

অন্যদিকে, একই নম্বরে দায়ের করা ছিনতাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাজু আহমেদ বলেন, ‘এই মামলার বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, থানার ওসিই তদন্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন এবং পরে তাকেই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

ওসি আলী ইফতেখার হাসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে পুরো ঘটনার বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ‘বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইত্তেফাক