
এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদে! দেশের বিদ্যমান আইন দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যাবে না। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ৪-৫ বছর লেগে যাবে। এক বছর লেগে যাবে বিদেশে থাকা অর্থ-সম্পদ জব্দ করতে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে এমন বক্তব্য রাখছেন পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সংক্রান্ত বিশেষ টাক্সফোর্সের প্রধান ড. আহসান এইচ. মনসুর। অথচ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর হাসিনা রেজিমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে এনে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট নিরসনের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিলো দেশবাসীকে। সেই বিপ্লবী অবস্থান থেকে সরকারের ক্রমঃপশ্চাদপসারণ ঘটছে। এখন বলা হচ্ছে পাচারকারীদের সঙ্গে ‘অ্যামিকেবল সেটেলমেন্ট’র কথা। অর্থাৎ অর্থপাচারকারীদের কোনো শাস্তি নয়। আপস-রফার মাধ্যমে তাকে দিয়েই অর্থ ফেরত এনে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া। এ লক্ষ্যে বিধান করার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে পাচার করা অর্থ দ্রুত ফেরত এনে দেশের কাজে লাগানো আজগুবি, মিথ্যা বয়ান কেন সরকার ছড়ালো ?
হাসিনা রেজিমে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এ অর্থ পাচার হয়েছে ব্যবসার নামে, আমদানি-রফতানির আড়ালে। বেশির ভাগ অর্থ পাচার করা হয়েছে স্বাগতিক দেশগুলোর (হোস্ট কান্ট্রি) সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায়। এ কারণে অধিকাংশ বিশ্লেষক শুরু থেকেই বলে আসছেন, বিদ্যমান স্থানীয় আইন, জটিল বিচার ব্যবস্থা এবং স্বাগতিক দেশগুলোর আইনি সুরক্ষা কাঠামো ভেদ করে পাচার হওয়া অর্থ কখনোই ফেরানো সম্ভব নয়। এটি একমুখি প্রবাহ। অর্থ শুধুই যাবে, ফেরত আসবে না। কোনো দিন আসেও নি। ফেরত আনার আইনি নজিরও নেই। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা শুধুই কথার ফুলঝুরি, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। পাচার হওয়া অর্থ ‘সনাক্তকরণ’, ‘জব্দকরণ’র নামে নতুন প্রকল্প গ্রহণ, পরামর্শক নিয়োগ আরো কিছু অর্থ অপচয়। কিন্তু বিশ্লেষকদের এই কথাগুলোকে পাত্তা দেয় নি। ফলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের নামে গঠিত স্পেশাল টাক্সফোর্স দৈত্যাকার মূষিক প্রসব করতে চলেছে-এ কথা এখনো বলছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে গতবছর ৫ আগস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশ-বিদেশে হাসিনা পরিবারের বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলেছে। শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব ববি, টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকেরও বিপুল সম্পদের তথ্য প্রকাশিত হয়। হাসিনাঘনিষ্ট আরামিট গ্রুপের মালিক (সাবেক ভূমিমন্ত্রী) সাইূজ্জামান চৌধুরী, ঘনিষ্ঠ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন দেশে মিলেছে সম্পদ।
গত ১০ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিএফআইইউ ও যৌথ তদন্ত দলের অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং পশ্চিম ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপ কেম্যান আইল্যান্ডসে শেখ হাসিনার সম্পদের তথ্য জানান। এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকে রাশিয়ান ‘স্ল্যাশ ফান্ড’ পাওয়া গেছে। পরদিন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছিলেন, এ বছরের মধ্যেই (২০২৫) বিদেশে পাচার হওয়া প্রায় কয়েকশ’ কোটি ডলার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। এজন্য একটি বিশেষ আইন করার উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। পাচার হওয়া অর্থের একটি বড় অঙ্ক ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এমওইউসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এসব আশাব্যঞ্জক বক্তব্য মানুষকে পুলকিত করে। কিন্তু বাস্তবতা কী ? ক’দিন পরই পূর্তি হচ্ছে সরকারের এক বছর। আনা গেছে পাচার হওয়া একটি ফুটো পয়সাও? পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সফল কোনো ইতিহাস বাংলাদেশের আছে কি? ইতিপূর্বেও যেসব ‘চেষ্টা’ হয়েছে’ সেগুলোর অভিজ্ঞতাই বা কী? কী ফলাফলই বা কী এসেছিলো? সরকারের কাছে এর জবাব নেই। কারণ এগুলো হচ্ছে সুগন্ধী ছড়ানো শ্রুতিমধুর কথামালা।
৫৪ বছর ধরেই মানুষ দেখে আসছে, গল্প শোনা যাচ্ছে অর্থ পাচারের। ‘আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েস’ হচ্ছে অর্থ পাচারের প্রধান পদ্ধতি। কিন্তু কারা এটি করছে, বেরিয়ে আসছে না সেটি। সম্পৃক্তদের নামধাম জানা যাচ্ছে না। মামলা হচ্ছে, বিচার হচ্ছে। অথচ শাস্তি হচ্ছে না। টাকাও ফেরত আসছে না। গলদটা কোথায়?
‘অর্থপাচার’ কথাটির ঠিকুজি খুঁজলে দেখা যায়, ‘মানি লন্ডারিং’ শব্দটির বেশি প্রচলন ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর থেকে। কথিত ‘জঙ্গি অর্থায়ন’ ঠেকাতে শব্দটির বহুল প্রচার। এর আগে মানি লন্ডারিংয়ের আইডিয়াটা ছিল ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ এর মধ্যে। এটিকে লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য বিদ্যমান আইনগুলো ছিল কম্পিটিটিভ অ্যাক্ট। এনবিআর, ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক, ফরে এক্সচেঞ্জ ডিভিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি এগুলো সম্প্রতিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে দেখভাল করার জন্য সৃষ্টি করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে পরিচালিত বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সততা, দৃঢ়তায় অযোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে। যতটুকুন সক্রিয়তা দৃশ্যমান, সেটি ম্যালাফাইডি। অর্থ পাচার আইন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই সংশ্লিষ্টদের। অর্থ পাচারে প্রধান খেলোয়াড় হচ্ছে মেটারিয়াল উইটনেস, বাংলাদেশ ব্যাংক কন্ট্রোল অব ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট, কন্ট্রোল এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরা (ইপিবি) কম্পিটিটিভ প্রাইস কমিশন, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন।
কথিত ব্যবসায়ীদের আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েসের যে গল্পটি প্রচারিত হয় সেটি ‘জাস্টিফায়েড’ করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ‘ভাইটাল উইটনেসের মেটারিয়াল এভিডেন্স’। অথচ মানি লন্ডারিং মামলায় তাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কোনো মামলায় এনবিআরকে সাক্ষী রাখা হয় না। প্রাইস কম্পিটিটিভ অথরিটিকে সাক্ষী রাখা হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক সাক্ষী নেই। বিএফআইউকেও করা হয় না সাক্ষী। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন সাক্ষী নেই। ইপিবি সাক্ষী নেই। বেশ কয়েকবার অর্থ পাচার আইন সংশোধন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও পাচার রোধ করা যায় নি। পাচাকারীদের অভিযুক্ত এবং বিচার করা যাচ্ছে না। এতে সুফল যা পেয়েছে অর্থ পাচারকারীরা। এখন আবার নতুন করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিশেষ বিধান করার কথা হচ্ছে।
আইনজ্ঞদের মতে, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে হলে আগে এই দেশে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। ১৯৪৭ সালের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্টে যা ছিল এটিতে সাজার পরিমাণ বাড়ানো যায়। বিশেষ আদালত তো রয়েছেই। সেগুলোর সংখ্যা বাড়ালে হয়তো অর্থ পাচার মামলার নিষ্পত্তি বাড়বে। এ ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের প্রয়োজন নেই। পদাধিকারবলে সেশন জজ, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে কাজ করতে পারে।
অর্থ পাচার প্রমাণে কম্প্রিহেনসিভ অ্যাফোর্টের সাংঘাতিক ঘাটতি রয়েছে। দক্ষ জনশক্তি নেই। যারা ভাইটাল মেটেরিয়াল ইউটনেস ডকুমেন্ট, তাদেরকে ‘ব্ল্যাকআউট’ রাখা হয়। অধিকাংশ মানি লন্ডারিং মামলায় শুধু মোরাল কনভিকশন দেয়া হচ্ছে। মূল অপরাধের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যমান আইন পাচারকৃত অর্থ-সম্পদ কি ফেরত আনা সম্ভব? এটি যে সম্ভব নয়- সেটি অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, পাচার রোধে বিশেষ আইন করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু এ আইন ভবিষ্যতের জন্য। অতীতের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। অপরাধকালীন সময়ে যে আইন বিদ্যমান থাকে বিচার হতে হয় সেই আইনে। নতুন বিশেষ আইন করে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দিয়ে বিচার করলে সেটি টেকে না। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সরকার আমলে সেটি প্রমাণিত।
বিদ্যমান আইনে বিচার করা সম্ভব নয় এ কারণে যে, ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন কিংবা কনভেনশন যেগুলো রয়েছে সেগুলো কোনো ‘বাইন্ডিং ফোর্স’ নয়। বাইন্ডিং অ্যাফেক্টও নেই। বিভিন্ন দেশে হাসিনা রেজিমের দুর্নীতিবাজদের অর্থ রক্ষিত আছে। সে সব দেশের সহযোগিতা ব্যতীত ‘মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)’ দ্বারা অর্থ ফেরত আনা সম্ভব নয়। কো-অপারেশন ও কনভেনশনভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের অর্থ পাচারের বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলছে। কিন্তু এ সহযোগিতা কেবল লজিস্টিক এবং প্রশিক্ষণগত সহযোগিতা। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছে না। বাংলাদেশ থেকে এমএলএআর পাঠালে হাজারটা ‘কয়েরিজ’ দিচ্ছে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া দেশগুলোই। এসব ‘কয়েরিজ’ মেটাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হিমশিম খাচ্ছে। যদিও বা ‘কয়েরিজ’ মেটানো হয়- তখন দেখা যায় সংশ্লিষ্ট দেশটি এমএলএআরের জবাব দেয়াই বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে এমএলএআর পাঠিয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা কার্যত অসম্ভব। প্রত্যেকটি দেশ পারমানেন্ট রেসিডেন্স (পিআর) এবং সিটিজেনশিপ দেয়ার ‘গোল্ডেন স্কিম’ চালু রেখেছে। এগুলো মূলত অর্থপাচারকে প্রলুব্ধ করা। যেসব দেশ পাচারে প্রলুব্ধ করছে সেসব দেশ যত কথাই বলুক, অন্ততঃ অর্থ ফেরত দানে সহায়তা করবে না। কনভেনশনভুক্ত দেশগুলো যদি আন্তর্জাতিক পরিষদে কম্বিনেশন কিংবা যুগোপযোগী না করে তাহলে পাচারের টাকা ফেরত আনা সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে সরকার অনুমোদিত প্রকল্পে পাচারের অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে। সেগুলো সেদেশের সরকার ফেরত না দিলে অর্থ-সম্পদ ফেরত আনা সম্ভব নয়। দৃষ্টান্ত হতে পারে মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’। এটি সরকার অনুমোদিত প্রকল্প। মালয় সরকার নিজেই এটি পরিচালনা করছে। স্থায়ী নাগরিকত্ব দেয়া সে দেশের সরকার অনুমোদিত একটি প্রকল্প। ওই দেশের সরকার কেন তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ ফেরত দেবে? যদি স্থায়ী নাগরিকত্বের বিষয়ে, প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্টের (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) বিষয়ে ওই দেশের সঙ্গে বোঝাপড়া না করা যায় তাহলে পাচারকৃত অর্থ কোনো দিন ফেরত আনা যাবে না।
‘আমরা কি শুধু শুধু অর্থ-শক্তি খরচ করছি? শুধু শুধুই কি বলছি, যে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনব? ফেরত আনা টাকা দিয়ে দেশ চালাবো। এটি কি তাহলে নিছক রেটরিক?’ এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীকে। জবাবে তিনি বলেন, আমি সন্দিহান। এসবই কথার ফুলঝুরি। অবাস্তব। আমি তিনটি ক্ষেত্রে বললাম। এই তিনটি খাতে বিনিয়োগকৃত টাকা যে দেশগুলোতে টাকা আছে সেসব দেশ কখনো টাকা ফেরত দেবে না। বাংলাদেশ যতই দাবি করুক, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনের কথা বলুক, এন্টিকরাপশন কনভেনশনের কথা বলুক, এমএলএআরের কথা বলুকÑ টাকা ফেরত আসবে না।
কারণ, আমরা যেটিকে অপরাধ হিসেবে দেখছি, সেসব দেশ সেই পাচারকে লেজিটেমিসি দিয়েছে। এখন শুধু আমাদের এখান থেকে অর্থ পাচার হয়েছে, আমরা এটিকে ‘লন্ডারিং’ বলছি। ওদের দেশের জন্যতো এটি ‘ইনভেস্টমেন্ট।’ এ প্রসঙ্গের সঙ্গে সহমত জানিয়ে এই আইনজ্ঞ বলেন, আমি সেটাই তো বললাম। ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্প হচ্ছে মালয়েশিয়ার ‘ট্যুরিজম এবং সিভিল এভিয়েশন’ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত স্কিম। তাহলে টাকা কেন ফেরত দেবে? এক লাখ ডলার দেয়া হলো মালয়েশিয়ায় পিআর পাওয়ার জন্য, তাহলে টাকাটা কেন ফেরত দেবে? তিন খাতে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত আসার কোনো সুযোগ নেই। অন্যান্য খাতে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে রেগুলেটরি বডি, তাদের সিদ্ধান্তহীনতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণ টাকা পাচার হচ্ছে। তিনটি খাতের বাইরে মালয়েশিয়ায় যে টাকা পাচার হচ্ছে সেটি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে। এ জন্য দায়ী নীতি নির্ধারকরাই।
পিকে হালদারের কথাই ধরা যাক। সেখানে সে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তি। তার ওই দেশে শাস্তি হয়েছে। অবশিষ্ট সাজা তিনি যে বাংলাদেশে এসে ভোগ করবেন, টাকাটা ফেরত দেবেন, সেটির কোনো বিধান বাংলাদেশের আইনে নেই। তাহলে কেন করা হলো না? ভারতের আছে। পাকিস্তানের আছে। বাংলাদেশ কেন করল না? যতক্ষণ পর্যন্ত না মিনিস্ট্রি অব হোমের এক্সট্রাডিশন, যেমনÑ দুদকের ক্ষেত্রে, মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনে অ্যামবার্গো, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাসপোর্ট জব্দ বা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষমতা কিন্তু পুলিশ হিসেবে দুদককে দেয়ার কথা। কিন্তু দুদক সেই ক্ষমতা আইনত আদায় করতে পারেনি।
আটকের ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ডিজির। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের সেটি করার ক্ষমতা রয়েছে। অথচ করছে না। আদালতের অনুমোদনক্রমে পাসপোর্ট জব্দ করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু দুদক সেটি এক্সারসাইজ করে না। দুদক দু-তিন দিনের জন্য একটি আদেশ দেয় পাসপোর্ট কিংবা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার। এটির কি দুই পয়সার মূল্য নেই। পাসপোর্ট অর্ডারেই বলা আছে, পুলিশ অফিসার (দুদক) দুদিন-তিন দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষমতা রাখে। যুক্ত করেন অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন।