Image description

চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং দর্শন বিভাগের শিক্ষকদের। বিষয়ভিত্তিক যোগ্য শিক্ষক থাকার পরও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্তে প্রকৃত মূল্যায়ন ব্যাহত হবে এবং ফলাফল বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সময় যেখানে ফলাফলই মুখ্য ভূমিকা রাখে, সেখানে এমন অনিয়ম শিক্ষার্থীদের হতাশ করে তুলতে পারে। যদিও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড বলছে, শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইসিটি বিষয়ে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, কেবল তাদেরই পরীক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যারা ভিন্ন বিষয়ে ক্লাস নিলেও আইসিটি বিষয়ে দারুণ অভিজ্ঞ। তাদেরই খাতা মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে শিক্ষকরা পরীক্ষক হতে বোর্ডে আবেদন করেন। ফলে অধ্যক্ষরা সব যাচাই করেই আবেদন ফরোয়ার্ড করে থাকেন। ফলে খাতা মূল্যায়নে সমস্যা হবে না।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডে আইসিটি বিষয়ের খাতা মূল্যায়নের কাজ করবেন ২৫৩ জন। এর মধ্যে প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন ২৬ জন। আর পরীক্ষকের ভূমিকায় থাকবেন ২২৭ জন। প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে ১৯ জন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক। বাকি আটজন অন্যান্য বিষয়ের। অর্থাৎ প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব-ও আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকরা পাননি।

এছাড়া পরীক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া ২২৭ জনের মধ্যে ১৮০ জন আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক। অবশিষ্ট ৪৭ জন, ইসলামের ইতিহাস, প্রাণীবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক। যদিও এ বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি বিষয়ে ২৪১ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষক থাকার পরও অন্য বিষয়ের শিক্ষকদের দিয়ে আইসিটি বিষয়ের খাতা মূল্যায়ন করার অভিযোগ উঠেছে বোর্ডের  বিরুদ্ধে। 

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইসিটি বিষয়ের পাঠ্যবিষয়, প্রোগ্রামিং, হার্ডওয়্যার কিংবা সফটওয়্যার সম্পর্কিত কারিগরি অনেক জটিল বিষয়ে পড়ানো হয়। আইসিটি বিষয়ের প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়া এ বিষয়গুলো অন্য বিষয়ের শিক্ষকদের বোধগম্য হবে না। ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে মূল্যায়িত না-ও হতে পারেন। সামগ্রিক ফলাফলে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে কুমিল্লার একটি প্রতিষ্ঠানের আইসিটি বিষয়ের এক শিক্ষক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘পরীক্ষক হওয়ার জন্য অনেকে তথ্য গোপন করে আবেদন করেন। বোর্ডের একটি চক্র টাকার বিনিময়ে এসব শিক্ষককে পরীক্ষক হওয়ার সুযোগ করে দেন। বোর্ডের পরীক্ষক হতে পারলে প্রাইভেটে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। এজন্য ভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক হলেও তাদের পরীক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। উচ্চমাধ্যমিকের আইসিটিতে এইচটিএমএল, সি প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল ডিভাইসের মতো বিষয় রয়েছে। এগুলো ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস কিংবা প্রাণীবিদ্যার শিক্ষকরা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?’

আব্দুল জলীল নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার সন্তান পুরো বছরের পরিশ্রম দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। এখন যদি আইসিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের খাতা বিষয়বস্তু না বোঝা কোনো শিক্ষক মূল্যায়ন করেন, তাহলে তার ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় আইসিটি বিষয়ের শিক্ষকদের দিয়েই আইসিটির খাতা মূল্যায়নের দাবি’ জানান তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: শামছুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।