Image description
আগামী সংসদ নির্বাচন » আইনশৃঙ্খলা - সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত । সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে । » দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন ১৫ লাখের বেশি ব্যক্তি । » সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে ইসি , জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় , সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও পুলিশ অধিদপ্তর ।

ছাত্র - জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ ( দশম , একাদশ ও দ্বাদশ ) নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের আগামী সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়া হবে না । আইনশৃঙ্খলা - সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এ সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন ( ইসি ) , জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় , সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও পুলিশ অধিদপ্তরকে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে । সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে ।

সূত্র বলেছে , অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ( অব . ) মো . জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা - সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় । বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালে দশম , ২০১৮ সালে একাদশ ও ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এই তিনটি নির্বাচনই বিতর্কিত । সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫ লাখের বেশি ব্যক্তি ভোট গ্রহণের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন ।

তাঁদের মধ্যে জেলা প্রশাসক ( ডিসি ), বিভাগীয় কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ), স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা - কর্মচারী , সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য , পুলিশ , ব্যাটালিয়ন আনসার , বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি ), র‍্যাব, কোস্ট গার্ড , নির্বাহী হাকিম, বিচারিক হাকিম রয়েছেন । 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় , উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ওই বৈঠকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা উল্লেখ করা হয় । বৈঠকে নেওয়া অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা ; মাঠপর্যায়ে ডিসি, পুলিশ সুপার ( এসপি ), ইউএনও এবং ওসিদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুটি পৃথক প্রস্তুতিমূলক মহড়া পরিচালনা ; নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা নেওয়া; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য নজরদারি জোরদার করা; নির্বাচনের আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচার থেকে সতর্ক থাকা; নির্বাচন - পূর্ব এবং নির্বাচনকালীন সব সংস্থাকে নিরপেক্ষভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা ।

সূত্র আরও জানায়, কমিটির এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইসিসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে । ইসিতে পাঠানো চিঠিতে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে বলা হয়েছে । এই চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন,  চিঠি এখনো দেখিনি । দেখে বলতে পারব । ’এদিকে বিতর্কিত ওই তিনটি নির্বাচন নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ( পিবিআই ) ।

সূত্র জানায় , ৩ জুলাই পিবিআই ওই তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়েছে ইসির কাছে । এর ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও সব ডিসিকে চিঠি দিয়েছে ইসি । চিঠিতে সংশ্লিষ্ট ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের নাম- ঠিকানা , জাতীয় পরিচয়পত্র , পাসপোর্ট নম্বর ও মোবাইল নম্বরসহ আরও কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে । দশম , একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গত ২২ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছে বিএনপি ।

মামলায় সাবেক তিন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ , কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং তাঁদের নেতৃত্বাধীন তিন কমিশনের সব নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে । মামলার পর সাবেক দুই সিইসি নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । তাঁরা বর্তমানে কারাগারে । ওই তিন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা ২২ জন সাবেক ডিসিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার ।