
গেল বোরো মৌসুমে সারাদেশে বাম্পার ফলন হয়েছে। বোরো মৌসুমের চাল এখনো বাজারে আসছে। সরকারের গুদামেও পর্যাপ্ত চাল মজুত রয়েছে। খাদ্য অধিদফতরের সর্বশেষ (২৪ জুন) তথ্যমতে, সরকারের গুদামে চাল মজুত আছে ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ টন। তারপরও বাড়ছে চালের দাম। বগুড়া, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ উত্তরের চাল উৎপাদনকেন্দ্রিক জেলাগুলো এবং রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে চালের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ঈদুল আজহার পর থেকে চালের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। এটি এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে খুচরা ও পাইকারিÑ উভয় বাজারে চালের দাম কেজি প্রতি দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন মোটা চালের দাম ৫০ টাকা কেজির নিচে নেই। ভালো মানের চিকন চালের দাম ৯৪ থেকে ৯৬ টাকা কেজি। যেভাবে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আর দু’-এক সপ্তাহ পরে চালের কেজি সেঞ্চুরি পার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চালের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের সংসার চালাতে এখন নাভিশ্বাস অবস্থা।
বাজারে অস্বাভাবিকভাবে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, অসাধু সিন্ডিকেটের কবলে এখনো চালের বাজার। বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অনুগত ব্যবসায়ীরাই এখনো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এ জন্য তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চালের দাম ইচ্ছেমতো বৃদ্ধি করছে। বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানিগুলো সরকারের নিয়ম-কানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো ধান কিনে মজুত করছে এবং তারাই ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়াচ্ছে। এই করপোরেট কোম্পানি ও অসাধু মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটকে সরকার এখনো ভাঙতে পারেনি।
ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে সরকারের একটি মহলের সাথে আঁতাত করে সিটি গ্রুপ, স্কয়ার, প্রাণ আরএফএল, মেঘনা গ্রুপ, এসিআই ও আকিজ অ্যাসেনশিয়াল এই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করত। ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। শুধু করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়, এর সাথে বড় বড় মিলাররাও জড়িত। এ বিষয়টি তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। তিনি বলেন, ধান-চাল মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করছে ছয় করপোরেট গ্রুপ। গ্রুপগুলো ধান-চালের ব্যবসায়ী না। ফায়দা লুটতে হঠাৎ মজুতের ব্যবসায় নেমেছে। এসব সিন্ডিকেটের সাথে খাদ্য মন্ত্রণালয় লড়াই করছে। অনেকের অভিযোগ তখনকার মন্ত্রী নিজেই ওই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত ছিলেন। এ জন্য চালের দাম বৃদ্ধি পেলেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যেত না। এখন তো সেই ফ্যাসিস্ট সরকার নেই। তাহলে কাদের সাথে আঁতাত করে এই সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে, সে প্রশ্ন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে কি এ সরকারের মধ্যে ফ্যাসিস্টের দোসররা এখনো সক্রিয় রয়েছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় সরকারের প্রতি মানুষের মনে এমন ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, বোরো মৌসুম শেষ হলেও সরকারিভাবে ক্রয় মৌসুম শেষ হবে আগামী মধ্য আগস্টে। চালের পাইকারি ও খুচরা বাজারে নেই সরবরাহে ঘাটতি। তারপরও রহস্যজনকভাবে বেড়ে চলছে চালের দাম। যার কোনোই যৌক্তিক কারণ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার মালতীনগর বকশিবাজার, কালিতরা, খান্দার ও গোদারপাড়ার চালের পাইকারি ও খুচরা দোকানে বেড়েছে চালের দাম। এসব বাজারে পাইকারি আড়তে কাটারি জাতের চিকন চাল ৭৬ এবং গুটি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই চাল খুচরা পর্যায়ে কাটারি ৭৮ থেকে ৮০ এবং মোটা জাতের গুটি স্বর্ণা চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের দৈনন্দিন বাজেটে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বর্ষার কারণে সবজির বাজারেও প্রত্যেকটি আইটেমের দাম বেড়েছে। সরবরাহ সংকটের ধুয়া তুলে বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম। সীমিত আয়ের মানুষের হয়েছে মরণদশা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। খাদ্য বিভাগের হিসেবে বগুড়ায় মিলার ও চাষি পর্যায়ে মজুতের কোনো কমতি নেই। তারপরও বাজারে চালের দাম কেন বেশি তা বোধগম্য নয়। বগুড়া সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হারুনুর রশীদ ইনকিলাবকে বলেন, জেলা প্রশাসনের মনিটরিং টিম বসে নেই। বগুড়ায় ইতোমধ্যেই নামুজা, চারমাথা, দুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রামে নিরাপদ খাদ্য বিভাগ, ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন মজুতদারকে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে। তার মতে, সিন্ডিকেট করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে রাজনীতি থাকতে পারে। তবে মজুতদার বিরোধী চলমান অভিযান জোরদার হলে কমে আসবে চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি।
দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় চালের বাজার বাহাদুর বাজারে চাল বিক্রেতাদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, আমরা মিলারদের কাছে যে দামে চাল কিনে থাকি তার উপর সামান্য লাভ রেখে চাল বিক্রি করে থাকি। নাম না প্রকাশের শর্তে এক বিক্রেতা জানালেন, মাঝে মধ্যে ভোক্তা অধিকার ও খাদ্য বিভাগ বাজারে আসে সাথে থাকে মিডিয়ার ক্যামেরা। দাম না টানানোর মতো ছোটখাটো কিছু বিষয় নিয়ে জরিমানা করে চলে যায়। চটের বস্তার জায়গায় মিলারদের মার্কা ও নামসহ প্লাস্টিকের বস্তায় চাল মজুত উৎপাদনের তারিখ কোনোটিই লেখা থাকে না। তার মতে, বাজার উন্মুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে চাল বিক্রি করে দিনান্তের আয় নিয়ে ঘরে ফিরে যায়। চাল বিক্রি করলেই পরদিন মিল থেকে চাল ক্রয় করে আনতে পারব। বাজারে খুচরা বা পাইকারি বিক্রেতাদের কথা মিলগেট থেকে বাজার অনুযায়ী মূল্যে চাল বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে তারপর খুচরা বাজার তদারকি করুন। আমাদের আপত্তি নেই। তার মতে বস্তায় উৎপাদনের তারিখ লেখা থাকলে খুচরা বিক্রেতাদের তা লুকানোর ক্ষমতা নেই যেমন, তেমনি হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও মিলারদের কিছুটা বেগ পেতে হবে বৈকি। চাল কলমালিক সমিতির কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নারাজ। তাদের মতে এক কথা বারবার। যত দোষ মিলারদের। মিলাররা ধান-চাল মজুত করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছে। দাম বাড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দিয়ে চাল কলমালিক সমিতির প্রবীণ এক নেতা বললেন, হাতেগোনা কয়েকটি মিলার ছাড়া দিনাজপুর অঞ্চলে অধিকাংশ মিলারের নুন আনতে পান্থা ফুরানোর অবস্থা। হাজার হাজার টন ধান চাল মজুতের ক্ষমতাই তাদের নেই। ব্যাংক ঋণ ও কৃষকের কাছ থেকে বাকিতে নেয়া ধানের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেক মিলার পালিয়ে থাকে। এছাড়া দিনাজপুর অঞ্চলের ৪০ শতাংশ অটো-মিল তাদের ড্রায়ার ভাড়া দিয়ে চলছে। এসব ড্রায়ারে ফড়িয়ারা চাল তৈরি করে বাজারজাত করছে। তার মতে, হাতেগোনা দিনাজপুর সদর, বোচাগঞ্জ, বিরল, চিরিরবন্দর ও পার্বতীপুরের কিছু মিলার রয়েছে যারা হাজার নয়, লাখ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল মজুত করার ক্ষমতা রাখে। এসব মিলে ভোক্তা অধিকার বা খাদ্য কর্মকর্তারা যায় না এবং যাবেও না।
তাদের সাথে সম্পর্ক ভালো। বিভিন্ন অটো-মিলে ড্রায়ার ভাড়া করে চাল উৎপাদনকারী একজন ফড়িয়া বললেন, এবার কোনো মতেই চালের দাম বাড়ার কথা নয়। তাহলে বাড়ল কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে সাফ কথা, দিনাজপুর নয়, নজর দিন টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জের বড় বড় ব্যবসায়ীদের দিকে। কৃষি বিভাগের মতে, এবার দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় এক লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ মেট্রিক টনের বেশি। মৌসুমের শুরুতে দিনাজপুরের বাজারে মান ও শুকনার প্রকারভেদে প্রতি বস্তা ধান বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা। স্বাভাবিকভাবে চালও বিক্রি হয়েছে সহনীয় পর্যায়ে। হঠাৎ করেই এই দাম দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকায় বৃদ্ধি পায়। পরে আবার এই দাম প্রায় পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। হঠাৎ দাম বৃদ্ধির ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীরা চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
জয়পুরহাট থেকে মো. মশিউর রহমান খান জানান, ভরা মৌসুমেও জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাট-বাজারে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। গত দুই থেকে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ব্যাপক হারে। কেজি প্রতি সাত থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। হিমশিম খেতে হচ্ছে দৈনন্দিন এই প্রধান খাদ্য কিনতে। বর্তমানে এখানকার চালের বাজার যেন লাগামহীন ঘোড়া। বাজারে জিরাশাল প্রতি কেজি ছয় টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কাটারি প্রকারভেদে কেজি প্রতি সাত-আট টাকা বেড়ে ৭০-৭৫ টাকা, বিআর ২৯ চাল কেজিতে সাত টাকা বেড়ে ৭০ টাকা এবং স্বর্ণা পাঁচ জাতের চাল কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে , মিনিকেট ৭৫ টাকা। দৈনিক ইনকিলাবের সরেজমিন বিভিন্ন বাজার ঘুরে খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় চালের দাম বাড়ার বহুমুখী কারণ। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও চালের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আরেকজন জয়পুরহাট পূর্ব বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সুলতান বলেন, আমাদের করার কিছু নেইÑ কিনতেই দাম বেশি, যারা মজুতদার তারাই এর জন্য দায়ী। খুচরা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, চালের মিলমালিক ও মজুতদারদের কারণেই ভরা মৌসুমে স্থানীয় বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন জানান, জেলায় মোকামে হু হু করে বাড়ছে চালের দর। সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভরা মৌসুমে দর বৃদ্ধিকে অশনি সঙ্কেত বলছেন ব্যবসায়ীরা। মিলগেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও প্রভাব পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে সুযোগ বুঝে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিছু অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ও মিলার ধান মজুত করে ইচ্ছেমতো চালের দর বাড়াচ্ছেন। এ জন্য প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো তাগিদ দিয়েছেন তারা। নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বড় চালের আড়ত শহরের পার নওগাঁ। গতকাল সেখানে সপ্তাহের ব্যবধানে চার টাকা থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে জিরাশাইল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, স্বর্ণলতা তিন টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬২ টাকা, কাটারি তিন থেকে চার টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৭২, বিআর আটাশ, ঊনত্রিশ, স্বর্ণা পাঁচ জাতের চালে দুই থেকে তিন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়।
স্থানীয় পৌর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, বড় ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ধান কিনছে। ছোট ব্যবসায়ীরা বড় মিলারদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। বড় মিলারদের একটি সিন্ডিকেট আছে। তাদের হাতেই মূলত ধান-চালের দর নিয়ন্ত্রণ হয়। ধানের বিশাল মজুত গড়ে তুলে তারা সুযোগ বুঝে এখন দর বাড়াচ্ছে। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, নওগাঁর পাইকারি মোকামে চালের দর এক থেকে দুই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু করপোরেট হাউসগুলো বাড়িয়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। অবৈধ মজুতবিরোধী শক্ত অভিযান, চাল আমদানি, রাজধানী ও চট্টগ্রামের আড়ত এবং খুচরা বাজারে তদারকি বাড়ানো হলে চালের দর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন ফরহাদ হোসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো রাইস-মিলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বাবু অনেকটা ফরহাদ হোসেনের সুরেই কথা বলেন। তিনি বলেন, বিগত ২০ বছরের মধ্যে দেশের ধান-চালের ব্যবসায় করপোরেট ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। এখন সাধারণ ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মিলাররা বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। চলতি বছর দেশে উৎপাদিত ফলনের প্রায় অর্ধেক ধানই করপোরেট ব্যবসায়ীদের কাছে মজুত হয়েছে। তারা মূলত ছোট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধানের হাট থেকে অধিক দরে ধান সংগ্রহ করে মজুত করে। এ বছর সাত থেকে আটটি করপোরেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান প্রায় এক কোটি মেট্রিক টন ধান মজুত করেছে। বাজার দরে স্থিতিশিলতা আনতে তিনি সরকারকে আমদানির পরামর্শ দেন।
এদিকে চালের বাজার দর বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মিলাররা যে, কারণ দেখাচ্ছেন সেগুলোর সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার বলেন, বাজারে চালের দর নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই মিলার ও ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করা হযেছে। জেলার সব মিল থেকে মজুতের হিসাব নেয়া হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ মজুতের বিষয়ে গোপন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অবৈধ মজুত খুঁজে বের করতে জেলার বিভিন্ন মিল পরিদর্শন করা হচ্ছে। কোথাও অবৈধ মজুত পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, চালের দাম কি কারণে বেড়েছেÑ এই জন্য খাদ্য বিভাগকে লিখিতভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দর বৃদ্ধির জন্য কেউ দায়ী থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।