Image description
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন » আইন সংশোধনের উদ্যোগ , খসড়া তৈরি । » অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ জরিমানা । » উপাচার্য ও উপ - উপাচার্যের যোগ্যতার শর্ত বাড়বে । » ভবনের আয়তন ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ বর্গফুট । » খণ্ডকালীন শিক্ষকের পরিমাণ সীমিত করা হবে ।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন , ২০১০ যুগোপযোগী করতে নতুন করে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ( ইউজিসি ) । সংশোধিত আইনের খসড়ায় আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ানো , উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা নির্ধারণ , ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তন আনাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে । ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন , ২০১০ এবং সংশোধিত আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে । সংশোধিত আইনের খসড়ায় আইন লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে । বিদ্যমান আইনে এই জরিমানার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা । ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী , বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৬। এর মধ্যে ১০৭ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে । বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নানা কারণে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে । এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন ৩,৪১,০৯৮ জন শিক্ষার্থী।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড . মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন , “ আইনটি সংশোধনের কাজ চলছে । আশা করছি , তা শিগগির চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হবে । ” সংশোধিত আইনের খসড়ায় দেখা যায় , প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এবার ১ লাখ বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া বাড়ির কথা বলা হয়েছে । আগের আইনে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভবনের প্রয়োজনীয় আয়তন ২৫ হাজার বর্গফুট করা হয়েছিল । এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ১ একর জমি থাকার বাধ্যবাধকতা বাড়িয়ে ৫ একর করা হয়েছে ।

তবে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪ সালের আগে অনুমোদন পেয়েছে , তাদের জন্য জমির পরিমাণের বাধ্যবাধকতা শিথিল থাকবে । নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংরক্ষিত তহবিল বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে । ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী , ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ন্যূনতম ৫ কোটি টাকা , অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য ন্যূনতম ৩ কোটি টাকা এবং বাকি এলাকাগুলোর জন্য দেড় কোটি টাকা তফসিলি ব্যাংকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত রাখতে হতো ।

সংশোধিত আইনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ৮ কোটি , অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫ কোটি আর এর বাইরের এলাকার জন্য ৩ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে । স্থায়ী সনদহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগাম টানারও উদ্যোগ নেওয়া রয়েছে সংশোধিত আইনে । বলা হয়েছে , আইনের অধীনে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সাময়িক অনুমতির ( সাত বছর ) মেয়াদের মধ্যেই স্থায়ী সনদ গ্রহণ করতে হবে । এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করতে ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে । সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী স্থায়ী সনদ না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে । প্রথম সাত বছর এবং নবায়নের পাঁচ বছর মোট ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ নিতে হবে ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধিত আইনে । বলা হয়েছে , ২১ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করতে হবে । বোর্ডের ন্যূনতম এক- তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ / শিক্ষানুরাগী হতে হবে । সরকারের অনুমোদন ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করা যাবে না । প্রয়োজনে ট্রাস্টি বোর্ডে সরকার একজন আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ছে পর্যবেক্ষক মনোনয়ন করতে পারবে । ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক পদে যুক্ত হতে পারবেন না । এমনকি কোনো সভা বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন না ।

পুরোনো আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটিতে সরকার ও ইউজিসি দুজন সদস্যের নাম প্রস্তাব করতে পারত । প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে , সরকার একজন ও ইউজিসি দুজন সদস্য দিতে পারবে । সংশোধিত আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ - উপাচার্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত বাড়ানো হয়েছে । এতে বলা হয়েছে , পিএইচডি ডিগ্রি অথবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যেকোনো একটিতে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ -৪ স্কেলে ৩.৫ এবং কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতাসহ অন্তত ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা লাগবে ।

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোনোটিতে তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে না । উপাচার্য দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না । সংশোধিত আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে । কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সংশ্লিষ্ট কোর্সের পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যার এক - তৃতীয়াংশের বেশি হবে না । শিক্ষক , কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য ইউজিসির কাছ থেকে অনুমোদন করা উপযুক্ত বেতনকাঠামো থাকতে হবে ।

সরকারের অনুমোদন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার ও শাখা ক্যাম্পাস করা যাবে না বলেও সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে । এই আইনের অধীনে অনুমোদনপ্রাপ্ত নয় এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা ক্যাম্পাস , স্টাডি সেন্টার বা টিউটোরিয়াল সেন্টার ইত্যাদিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কোনো ধরনের প্রচার করা যাবে না । এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে ‘ জাতীয় ’ , ‘ আন্তর্জাতিক ’ শব্দ ব্যবহার না করা , প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৩ টি অনুষদ থাকা , প্রতি তিন মাসে একটি সিন্ডিকেটের সভা আহ্বানসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তনের কথা রয়েছে সংশোধিত আইনে । সার্বিক বিষয়ে অভিমত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ( আইইআর ) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড . আব্দুল হালিম বলেন , “ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাই । তবে শাস্তির জন্য সাজা বৃদ্ধিই সমাধান নয় । আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করায় জোর দিতে হবে । '