Image description

রাজধানীর উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের অধিকাংশকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। সেখানে পোড়া দেহ নিয়ে ভর্তি থাকা ছোট্ট সোনামণিদের কান্না ও তাদের স্বজনদের আহাজারিতে পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে আছে।

তাদের সেবা দিতে ছুটে এসেছেন সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ইতোমধ্যে তারা কাজও শুরু করেছেন। তবে কোনো রোগীকে বিদেশে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই বলে গতকাল বুধবার বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তা করতে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. চোং সি জ্যাকের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল ঢাকায় এসেছে। গত মঙ্গলবার রাতে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। ডা. চোং সি জ্যাকের সঙ্গে রয়েছেন সিঙ্গাপুর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সিংহেলথের সিনিয়র ডিরেক্টর বিজয়া রাও এবং পুন লাই কুয়ান ও লিম ইউ হান জোভান।

সিঙ্গাপুরের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের উন্নত চিকিৎসায় নতুন পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা ও ওষুধের ধরনও পরিবর্তন হতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। গতকাল তারা বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে তারা দগ্ধ রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা করেন।

তাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং চিকিৎসার ওপর নির্ভর করে অতিরিক্ত চিকিৎসক দলও ঢাকায় আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, দগ্ধ রোগীদের এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে চিকিৎসার সুবিধায় রোগীদের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল ৮, সিভিআর ১৩ এবং ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরিতে আছে ২৩ জন। এখন পর্যন্ত বার্ন ইনস্টিটিউটে আসা ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তৎপরতার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডা. নাসির বলেন, বোর্ড মিটিং করে বৈঠকের মাধ্যমে আহতদের নতুন করে ক্যাটাগরি করা হয়েছে। দগ্ধদের এই মুহূর্তে বিদেশে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

পরিচালক আরো বলেন, বর্তমানে দগ্ধ ৪৪ জনের মধ্যে সংকটাপন্ন ৮ জন, গুরুতর অবস্থা ১৩ ও ২৩ জন মধ্যবর্তী পর্যায়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও প্রয়োজনে তারা সরাসরি চিকিৎসা কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারেন। আমাদের চিকিৎসার সঙ্গে তারা একমত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পরামর্শ দেবেন। তারা কতদিন থাকবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা যতদিন চান যুক্ত থাকতে পারেন।

তিনি জানান, ভালো-খারাপ সংবাদ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরির রোগীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। আমেরিকা, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে চাচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব পরামর্শ নেওয়া হবে।

এদিকে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দগ্ধদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সদের দল শিগগির ঢাকায় পৌঁছবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ৪৪ জন দগ্ধ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। সিএমএইচে ভর্তি আছে ২১ জন। সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে দগ্ধ ৬৮ জন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে ভর্তি আছে।