
বিদ্যুৎ বিভাগের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা মামলার প্রধান আসামি মো. সাজুকে আটকের পাঁচ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খুলশী থানার পোড়া কলোনির একটি পাহাড় থেকে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। পরে ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক ও সিটিজেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক বিএনপির কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাজুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলার বাদী বিদ্যুৎ কর্মকর্তা কুন্তল সরকার এ বিষয়ে জানেন না বলে দাবি করেছেন। খুলশী থানার ওসি মো. আফতাব হোসেন আসামিকে ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছেন ওসি আফতাব হোসেন।
ওসি বলেন, একজনকে থানায় আনা হয়েছিল একটি অভিযোগের ভিত্তিতে। পরে ভুক্তভোগীপক্ষ কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নগরের লালখান বাজার এলাকায় চুরির অভিযোগ তুলে স্থানীয় সিকিউরিটি গার্ড সাজ্জাদকে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যান মো. সাজু। খবর পেয়ে পুলিশ সাজ্জাদকে উদ্ধারের পাশাপাশি সাজুকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে মো. সাজুকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, সামান্য সমস্যা হয়েছিল। থানায় সেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মে দুপুরে লালখান বাজার পোড়া কলোনি এলাকায় অভিযান চালায় স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই দিন বিদ্যুৎ বিভাগের দক্ষিণ জোনের দায়িত্বরত যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আলী আক্কাসের নেতৃত্বে অটোরিকশার গ্যারেজসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে হামলা চালায় একদল লোক। এতে পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যান আমিন উদ্দিন, সিদ্দিকুর রহমান ও শফিকুর রহমান নামের তিনজন আহত হন। এই ঘটনায় সরকারি কর্তব্যরত কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুলশীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কুন্তল সরকার বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় মো. সাজুসহ সাতজনকে। তাঁদের মধ্যে ঘটনার দিন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মো. খোকন (২০), লাকী বেগম (৩৮), ফাতেমা বেগম (৫০) ও রোজিনা বেগম (৩৭) নামের চার আসামিকে। তবে প্রধান আসামি সাজু, মো. শুক্কুর ও মো. সাজ্জাদ পলাতক ছিলেন।
খুলশী থানায় ছুটে যাওয়া লালখান বাজার ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক ও সিটিজেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক বলেন, ‘মো. সাজু আমাদের লোক। যাকে অপহরণ করা হয়েছিল, তিনিও আমাদের লোক। এ কারণে থানায় গিয়ে মীমাংসা করে সাজুকে নিয়ে এসেছি।’ সাজুর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলার মামলা থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য কোনো মামলা থাকার বিষয়ে আমি জানি না।’
ওসি আফতাব হোসেনও ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা মামলায় সাজুর আসামি থাকার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন। অথচ সাজুর বিরুদ্ধে থাকা মামলাটি খুলশী থানায় করা। আসামি সাজুর বিরুদ্ধে মামলাটি মো. আফতাব হোসেনের নিজ স্বাক্ষরে রেকর্ড হওয়ার তথ্য রয়েছে মামলার এজাহারে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খুলশীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কুন্তল সরকার বলেন, ‘আমাদের মামলার ১ নম্বর আসামি মো. সাজু। তাঁকে গ্রেপ্তার বা ছেড়ে দেওয়া কোনো বিষয় সম্পর্কেই আমাদের জানানো হয়নি।’