Image description

রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে স্বামী মনছুর হেলালকে ডান হাতটা শক্ত করে ধরতে বলেছিলেন মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষিকা মাহরীন চৌধুরী। শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন মনছুর। শক্ত করে ধরবেন কী? আগুনে পুড়ে হাতের অবস্থা এতটাই করুণ যে, ধরার মতো অবস্থায় নেই।

গতকাল সোমবার রাতের সেই ঘটনা স্মরণ করে মনছুর আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভাই, ওর হাত ধরা যায় না, সব পুড়ে শেষ। ও বলল, তোমার সাথে আর দেখা হবে না।’

আজ নীলফামারীর জলঢাকা পৌরসভার বগুলাগাড়িতে দাফন করা হয় মাহরীনকে। তাঁর জানাজার আগে এসব কথা বলছিলেন মনছুর।

গতকাল উত্তরায় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় অক্ষত ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক মাহরীন। চাইলেই ঘটনাস্থল থেকে দূরে গিয়ে নিজেকে বিপদমুক্ত রাখতে পারতেন তিনি। তা করেননি। যখন দেখলেন, বিস্ফোরণে তাঁর ছোটছোট ছাত্রছাত্রী আগুনে পুড়ে কাতরাচ্ছে, তখন এক এক করে তাদের কোলে তুলে বাইরে নিয়ে আসেন তিনি। এভাবে কখন যে নিজের দেহই দগ্ধ হয়, তা তিনি খেয়াল করেননি। বলা ভালো, খেয়াল করতে চানওনি।

একপর্যায়ে মাহরীনের গোটা দেহ আত্মসমর্পণ করে। পড়ে যান তিনি। উদ্ধারকর্মীরা তাঁকে ধরে হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসকেরা জানান, ৪২ বছর বয়সী মাহরীনের দেহের শতভাগই দগ্ধ। রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।

বগুলাগাড়িতে জানাজা শুরুর আগে মনছুর বলেন, ‘আমার সাথে তার আইসিইউতে যে কথা হইছে, আমি তাকে বললাম, “তুমি কেন এ কাজ করতে গেলা?” বলে, “আমার বাচ্চারা আমার সামনে সব পুইড়া মারা যাচ্ছে, আমি এটা কীভাবে সহ্য করি”। ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, কিছু বাচ্চা বের করেছে, আরও কিছু বাচ্চা বের করার চেষ্টায় ছিল।’

তিনি বলেন, ‘পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পুড়ে শেষ। শুধু বেঁচে ছিল, একটু কথা বলতে পারছে। আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে বলল, আমার ডান হাতটা শক্ত করে ধরো। ভাই, হাত ধরা যায় না, সব পুড়ে শেষ। ও বলল, তোমার সাথে আর দেখা হবে না।’

স্বামীর হাত ধরে মাহরীন তখন বলছিলেন, ‘আমার বাচ্চাদের দেখো।’ জবাবে মনছুর হেলাল বলেন, ‘তোমার বাচ্চাদের এতিম করে গেলা!’