
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে মুসলমনাদের সব কাজ ও সমস্যার সমাধান ইসলামে প্রদত্ত হয়েছে।
কোথাও আগুন লাগলে হতাশ না হয়ে আগুন নিভানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি কিছু দোয়া ও আমলে নির্দেশনাও প্রদান করেছে ইসলাম।
একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন কোথাও আগুন (লাগতে) দেখো, তখন তোমরা তাকবির দাও। কারণ তাকবির আগুন নিভিয়ে দেবে। (তাবরানি, হাদিস নং: ১/৩০৭)
তাকবির হলো- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। এর অর্থ : আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান।
রাসুলুল্লাহ (স.) আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যা দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে— আবদুল্লাহ ইবনে জাবের (রা.) তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) জাবের (রা.)-কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তখন নারীরা কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, ‘আমরা মনে করেছিলাম, আপনি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবেন।’
নবীজি (স.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? তাহলে তো শহীদের সংখ্যা অতি অল্প হবে! আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন রোগে মৃত ব্যক্তি শহীদ এবং যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, সেও শহীদ।’ (আবু দাউদ: ৩১১১, ইবনে মাজাহ: ২৮০৩)
তবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের মতো এ রকম দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের গোসল ছাড়া সমাহিত করা হবে না। আগুনে পুড়ে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্বাভাবিক নিয়মে গোসল করানো হবে, তাদের কাফন, জানাজা ও দাফনও স্বাভাবিক নিয়মেই করতে হবে।
আগুনে পুড়ে এবং উল্লিখিত রোগ ও দুর্ঘটনাগুলোর কারণে মৃত্যু হলে শহীদের মর্যাদা লাভ করার কারণ হলো, এসব মৃত্যু অত্যন্ত কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক, এই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদেরকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
আগুন লাগলে করণীয়
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘আগুন যত প্রলয়ঙ্করী হোক; তাকবিরের মাধ্যমে তা নিভে যায়। আর আজানের মাধ্যমে শয়তান পলায়ন করে। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা: ৫/১৮৮)
পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত রয়েছে, যেটি পড়লে আগুন নেভাতে প্রভাব পড়বে এবং আগুনের ক্রিয়া নিস্তেজ হয়ে যাবে। আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিমকে (আ.) আগুন যেন স্পর্শ না করে, সে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ হয়েছে, ইয়া না-রু কু-নি বারদান ওয়া সালামান আলা ইবরাহিম। অর্থ : ‘হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৬৯)
এ ছাড়া আগুন লাগলে বিভিন্ন বর্ণনায় আজান দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।