
অন্তর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, লম্বা নয়, শহীদরা চেয়েছিলেন দামি জীবন। তারা চেয়েছিলেন একটি মর্যাদাপূর্ণ, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ। যারা শহীদ হয়েছেন, তারা এ দেশের সূর্যসন্তান। তারা ভাবেনি, একদিন কেউ মসনদ থেকে পালাবে- তবু তারা নিজেদের সীমিত শক্তিকে বিন্দু বিন্দু করে গড়ে তুলে রুখে দাঁড়িয়েছিল। আমি এই শহীদদের কাছে চিরঋণী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে 'জুলাই আন্দোলন স্মৃতি সংগ্রহশালা'র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, এই ছোট আয়োজন আমাদের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি ঋণ স্বীকারের সূচনা মাত্র। যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তকে আমরা কোনো দলীয় রাজনীতির হাতিয়ার হতে দেব না। তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ, আমাদের আত্মার অংশ। এই সংগ্রহশালাকে ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা জুলাই অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেন।
উপাচার্য আরও বলেন, "যত আন্দোলন হয়েছে- স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন- সবই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই ইতিহাসকে বিভাজিত করে ব্যাখ্যা করার যে কোনো প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া হবে।"
আলোচনা সভায় শহীদ পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন। শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা শফি আলম আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, "আমার সন্তান কোনো চাকরির জন্য জীবন দেয়নি। সে জীবন দিয়েছে যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি ভালো দেশ পায়। আমরা চাই, চব্বিশের গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক। শহীদ পরিবারের সদস্যদের সামনে রেখে যেন কেউ রাজনৈতিক ফায়দা না তোলে, সেটাও আমরা চাই না।"
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও ‘জুলাই আন্দোলন স্মৃতি সংগ্রহশালা’ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, এবং বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তারা সবাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বক্তব্য রাখেন এবং এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে শহীদ মো. আবু সাঈদ মিয়া, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, মো. ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফাইয়াজ), এবং মো. ওয়াসিম আকরামের স্বজনরা স্মৃতিচারণ করেন।
স্মৃতি সংগ্রহশালার উদ্দেশ্য- ডাকসু ভবনে স্থাপিত এই সংগ্রহশালায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট শহীদদের ব্যাজ, পরিচয়পত্র, পারিবারিক ছবি, ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, পত্রিকার কাটিং এবং আন্দোলনের সময়কার বিভিন্ন স্মারক সংরক্ষিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এর পরিধি আরও বাড়িয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই সংগ্রহশালা শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস জানাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।