Image description

আজকের সমাজে যত ধরনের পাপচর্চা রয়েছে তন্মধ্যে গীবত বা পরচর্চা অন্যতম। অন্যান্য গুনাহ থেকে আমরা বিবেকের তাড়নায় অনেক সময় বেঁচে থাকি, কিন্তু গীবত থেকে আমরা মোটেও সতর্কতা অবলম্বন করি না। আর এ সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণ দুটি–

 ১. গীবত কাকে বলে তা জানি না;

 

 ২. জানলেও ততটা গুরুত্ব দেই না ।

অথচ গীবত বা পরদোষ চর্চা এমন একটি জঘন্য অপরাধ, যাকে মহান আল্লাহ তায়ালা আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের একে অন্যের গীবত করবে না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? এটাকে তো তোমরা ঘৃণা করে থাক। তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১২)।

উল্লিখিত আয়াতে কারও গীবত করতে নিষেধ করা হয়েছে।

গীবতের পরিচয়:

হাদিস শরীফে গীবতের পরিচয় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি জানো গীবত কাকে বলে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, গীবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে তোমার এমন কোনো আলোচনা করা, যা সে শুনলে অপছন্দ করবে। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আমি আমার ভাই সম্পর্কে যা বলছি তা যদি তার মধ্যে থাকে তবুও কি আপনি গীবত মনে করেন? তিনি বলেন, তুমি যা বললে বাস্তবে তা যদি তার মধ্যে থেকেও থাকে, তাহলে অবশ্যই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তুমি যা বললে তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তুমি তাকে অপবাদ দিলে’। (মুসলিম, হাদিস : ৩২২)

এই হাদিস থেকে আমরা গীবতের পরিচয় জানতে পারলাম। অর্থাৎ গীবত বলা হয় কারও অগোচরে বা অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ আলোচনা করা, যা সে শুনলে অবশ্যই মনে কষ্ট পাবে। তার এই দোষ শরীর, মেধা, চরিত্র, আত্মা, অর্থ-সম্পদ, সন্তান, পিতা-মাতা, স্ত্রী-পরিজন, চাকর-বাকর, নড়াচড়া, ওঠা-বসা, চলাফেরা, কথা-বার্তা ইত্যাদি যে কোনো বিষয় হোক না কেন। তার সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কোনো দোষ বলাই গীবতের অন্তর্ভুক্ত। আর এর প্রকাশও হতে পারে বিভিন্নভাবে। যেমন- শব্দের সঙ্গে ইশারা-ইঙ্গিতে, চোখ দ্বারা, ভ্রু, মাথা, হাত ইত্যাদি দ্বারা।

মোটকথা, অসন্তুষ্টিমূলক কোনো বিষয়ে কারও অনুপস্থিতিতে মানুষের কাছে উল্লেখ করাই হলো গীবত। আর যদি কারও দোষের কথা অন্যের কাছে তার সামনেই আলোচনা করা হয়, তাহলে তা মানহানিকর বিবেচ্য হবে, যা আরও বড় গুনাহ।

আর কেউ কারও গীবত করলে তার কাফফারা তৎক্ষণাৎ দেওয়া উচিত ।

গীবতকারীর শাস্তি:

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস বিন মালেক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমার রব আমাকে ঊর্ধ্বাকাশে নিয়ে যান, তখন এক পর্যায়ে আমি এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ (শক্ত) তামার তৈরি। তারা তাদের চেহারা ও বক্ষ নিজেরাই খামচে আহত করছে। আমি জিবরাঈল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে সেই সব পাপিষ্ঠ যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করে এবং তাদের সম্মানহানি করে থাকে’।  (মুসনাদে আহমদ: ১১৫)

গীবতের কাফফরা:

গীবতের কাফফরা হলো যার দোষ বলা হয় তার কাছে ক্ষমা চাওয়া, যদি তার কানে গীবত করা সম্বন্ধে খবর পৌঁছে। আর যদি সে না জানে বা মারা গিয়ে থাকে, তবে তার জন্যে তওবা-ইসতিগফার করা। সুতরাং গীবত কোনো ছোট বিষয় নয়; বরং অত্যন্ত বড় গুনাহ। আর এটি বান্দার হকও বটে।

তাই বান্দা ক্ষমা না করলে ক্ষমা হবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গীবত থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন, আমীন।

 

লেখক: খতিব, কাঠগড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কাঠগড়া, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা।