
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে আরো কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আরেক দফা আলোচনা করবে বাংলাদেশ। ওই আলোচনার প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে বৈঠক হয়েছে দেশের অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সবার মতামত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। যদিও তৃতীয় দফা বৈঠকের দিনক্ষণ চ‚ড়ান্ত নয়। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনার সময় চাওয়া হয়েছে। পরবর্তী বৈঠকে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এখনো ওই বৈঠকের চ‚ড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক করে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি-ইউএসটিআর। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এখনো নির্দিষ্ট সময় দেয়নি। আমরা যোগাযোগ করছি। চলতি সপ্তাহে এ বৈঠক হতে পারে। অবশ্য পরবর্তী বৈঠক নিয়ে খুব একটা আগ্রহ পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যবসায়ীরা। কারণ তাদের মতে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আলোচনার মাধ্যমে কমানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই এই শুল্কারোপ থাকবে ধরেই বাংলাদেশের পরবর্তী পরিকল্পনা করা দরকার। এ জন্য বাংলাদেশকে বিকল্প রফতানি বাজার বা গার্মেন্টসের বিকল্প পণ্য রফতানিতে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রফতানির একক বৃহত্তম বাজার। তবে সেখানে এত অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় আমাদের বিকল্প খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী পাঁচ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা। নিজেদের যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আছে, তার মধ্যে থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বাজার বড় করার চেষ্টা করা উচিত। সেখানে আরো কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা আছে। সেই সাথে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এছাড়াও আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র হবে এশিয়া। সবকিছু মিলে ‘ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে এশিয়ার বাজারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ হুমকিকে বিশ্ব শেয়ারবাজারগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপেক্ষা করেছে। নিউইয়র্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি আগস্টের শুরুতে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, তার প্রভাবে শেয়ারবাজারে প্রাথমিকভাবে কিছুটা পতন দেখা যায়। তবে পরে বাজার ঘুরে দাঁড়ায় এবং প্রযুক্তিভিত্তিক নাসদাক সূচক একটি নতুন রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলে। স্পার্টান ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের পিটার কারডিলো বলেন, বাজার ধরে নিয়েছে, আগস্টের ১ তারিখের মধ্যে এসব শুল্ক কার্যকর হবে না। এ কারণে বাজারে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। ইউরোপীয় সূচকগুলো বেশির ভাগই নি¤œমুখী থাকলেও আতঙ্কজনিত বিক্রি দেখা যায়নি। লন্ডনের এফটিএসই সূচক বরং বৃদ্ধি পেয়েছে।
এশিয়ার বাজারগুলোর মধ্যে অনেকগুলো নি¤œমুখী থাকলেও, সাংহাই ও হংকং সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেন, বাজারে ধারণা, ট্রাম্পের ৩০ শতাংশ শুল্ক হুমকি কেবলমাত্র আলোচনার চাপ সৃষ্টির কৌশল, বাস্তবায়নের উদ্দেশে নয়। এক্সটিবির গবেষণা পরিচালক ক্যাথলিন ব্রæকস বলেন, বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, এটি ট্রাম্পের সাধারণ কৌশলগত নাটকীয়তা। তবে ক্যামারকোর সহযোগী পরামর্শক কিম হিউঅ্যাকার সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে শুল্ক আরোপ বাস্তবায়ন করতেও পারেন। একই সঙ্গে ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন, আলোচনায় অগ্রগতি না হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলারের (৭২ বিলিয়ন ইউরো) পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন।
এদিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা দেশটির ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকির কড়া সমালোচনা করে এটিকে প্রত্যাখান করেছেন। গত বৃহস্পতিবার জাতীয়ভাবে স¤প্রচারিত এক ভাষণে লুলা বলেন, এ হুমকি ‘অগ্রহণযোগ্য বø্যাকমেইল’। ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো চুক্তি বা সমঝোতা না হলে আগামী ১ আগস্ট থেকে দেশটির ওপর ওই বর্ধিত শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্পের হুমকি উপেক্ষা করায়, ব্যান্ডউইথ অন্যান্য খবরের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।
যদিও ট্রাম্পের দাবি ছিল, তার এ শুল্কনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিস’ এর পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের এপ্রিল-জুন উৎপাদিত সব দ্রব্য ও সেবার মোট বাজার মূল্য বা জিডিপি আরো সঙ্কুুচিত হয়েছে। কারণ এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি গ্রোথ মাত্র শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ হয়েছে। যা বছরের প্রথম প্রান্তি জানুয়ারি-মার্চেও আগের বছরের তুলনায় কমে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। গত বছর প্রথম তিন মাসে জিডিপি ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। জিডিপি একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। অথচ যাদের কারণে এই শুল্কারোপ সেই চীনের অবশ্য গত বছরের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়েছে।
আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া চীন-নির্ভরতা কমানো
যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশে ব্যবসা বাড়ানোর সঙ্গে চীনসহ অন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে ব্যবসায় নিরুৎসাহিত করতে চায়। রয়েছে বাংলাদেশের আরো কিছু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ করার মতো শর্তের আভাস। যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের। পাশাপাশি ভ‚-রাজনৈতিক কৌশলগত বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যার মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশ যাতে চীনের দিকে বেশি না ঝোঁকে। বাংলাদেশে তৈরি বেশির ভাগ পণ্যে চীনা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, এতে বাধা দিতে চায় আমেরিকা। কমাতে চায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের চীনের প্রতি ঝোঁক। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল্য সংযোজন শর্ত এতটাই কঠোর যে, বাংলাদেশের পক্ষে তা মানা প্রায় অসম্ভব।
সূত্র জানায়, কিছু শর্ত এমন রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বাংলাদেশকেও তা মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়া দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। তাছাড়া যেসব মার্কিন পণ্যকে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশকে একই সুবিধা না দেয়ার শর্ত রয়েছে। রয়েছে আরো অনেক জটিল শর্ত একদম সুনির্দিষ্ট না হওয়া গেলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, জ্বালানি, খাদ্যশস্য ও সামরিক পণ্য আমদানিতে নানা সুবিধা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশের বেশ কিছু শিল্প, বন্দর পরিচালনা ও প্রযুক্তি পণ্যে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোও রয়েছে শর্তে। বাংলাদেশের সঙ্গে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ, কৃষি, মোটরগাড়ি ও যন্ত্রাংশ ব্যবসায় নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার বা অশুল্ক বাধা দূর করতে শর্ত দিয়েছে। এছাড়া এ দেশে মেধাস্বত্ব আইন বাস্তবায়ন, সেবা খাতের কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক রি-ইন্স্যুরেন্সের বিধান, মার্কিন ফার্মগুলোর সব পাওনা পরিশোধ-মালিকানা সংক্রান্ত বাধা দূর করার শর্তও রয়েছে। যদিও বিষয়গুলো গোপন করছে সরকার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে শুল্ক ইস্যুতে সরকার চাপে পড়েছে। যে কারণে আমাদের কাছে অনেক কিছু হাইড (গোপন) করা হচ্ছে।
দেশটি চীনের ক্রমবর্ধমান রফতানি প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে আমদানিকারক দেশগুলোকে চাপে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও পড়েছে। তথ্য বলছে, বাংলাদেশের পণ্য রফতানির একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে, যা দেশের মোট রফতানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক।
অপরদিকে, বাংলাদেশ চীন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পণ্য আমদানি করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যেহেতু আমদানিই এই বাণিজ্যের বেশির ভাগ, বলা যায় এর একটি বড় অংশই আমদানি।
বাংলাদেশের মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩০ শতাংশ পর্যন্ত) চীন থেকে আসে। এই আমদানির ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালÑ যেমন কাপড়, রাসায়নিক ও আনুষঙ্গিক পণ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা পোশাক তৈরিতে ওইসব কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়, যা বন্ধ করতে চাইছেন ট্রাম্প। শুধু পোশাক নয়, বাংলাদেশের বহু অভ্যন্তরীণ ও রফতানি পণ্য চীনের কাঁচামাল-নির্ভর। প্রধানত শিল্প-কারখানার যন্ত্রপাতি, বস্ত্র খাতের কাঁচামাল (যেমনÑ তুলা), ইলেকট্রনিকস পণ্য, পোশাক, খেলনা, বিল্ডিং তৈরির উপকরণ ইত্যাদি চীন থেকে আমদানি করা হয়।
বিকল্প বাজারে গুরুত্বারোপ
বর্তমানে বাংলাদেশ মোট যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করে তার ৫০ শতাংশ যায় ইউরোপের বাজারে, ২০ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এবং ১০ শতাংশ যায় যুক্তরাজ্যের বাজারে। বাকি ২০ শতাংশ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে যায়। মার্কিন শুল্কের অভিঘাত মোকাবিলায় অন্য দেশগুলোতে রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এশিয়ার বাজারই সবচেয়ে বড় বাজার। এই বাজরের দিকেই নজর দেয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
বর্তমানে এশিয়ার ভোক্তাদের বাজার সবচেয়ে বড়। এখানে সাড়ে তিন বিলিয়ন ভোক্তার অবস্থান। সেই তুলনায় এখানে রফতানি কম। এমনকি চীন একটি বড় বাজার হওয়া সত্তে¡ও সেখানে আমাদের রফতানি এক বিলিয়ন ডলারের কম। এ ক্ষেত্রে এশিয়ার বাজার হতে পারে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময়।
প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক রফতানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, প্রথম দফা শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বিজিএমইএ সভাপতি জানান, শেষ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে রফতানি করে থাকে। কারণ, খুব শিগগিরই বিকল্প বাজার ধরা সম্ভব নয়।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার হলেও বর্তমানে এশিয়ার বাজার সবচেয়ে বড়। এখানে সাড়ে তিন বিলিয়ন মানুষের বাজার রয়েছে। এ বাজারের দিকে বাংলাদেশকে মনোনিবেশ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান দেনদরবারের পাশাপাশি নিজেদের যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আছে, তার মধ্য থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বাজার বড় করার চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন রেহমান সোবহান। সেখানে আরো কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজারের সুবিধা আছে। সেই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এশিয়ার বাজারও আছে; এই মহাদেশ আগামী দিনে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র হবে। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে এশিয়া হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় জায়গা। রেহমান সোবহান মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের উচিত জাতীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ক্রয়নীতির কাঠামোর অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লেনদেন করা। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-Ñ আলোচনায় শুধু মার্কিন বাজারে আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক স্বার্থ স্থান পাওয়া উচিত নয়; বরং চীন, ব্রাজিল, কানাডা, কাতার, জাপান, সউদী আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গেও একই আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক স্বার্থের কথা বিবেচনায় নেয়া। সরকারকে বিবেচনা করতে হবে, একক দেশকেন্দ্রিক বাণিজ্যচুক্তি স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বিভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে।