Image description
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল ► অব্যবহৃত অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রপাতি ► ঝুলে আছে জনবল নিয়োগের খসড়া

সুনসান নীরবতা, কালেভদ্রে দেখা মেলে রোগীর। উদ্বোধনের প্রায় তিন বছর হতে চললেও পুরোদমে চালু হয়নি দেড় হাজার কোটি টাকার বিশাল অবকাঠামোর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি মাত্র ৯০ জন। জনবল সংকটে চালু না হওয়ায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ২৮৩ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) অধীনে গড়ে তোলা হয়েছে এ হাসপাতাল। রোগীদের বিদেশমুখিতা কমাতে এবং উন্নত দেশের মতো সেন্টার বেইজড চিকিৎসাসেবা পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জনবল নিয়োগের খসড়া ঝুলে থাকায় খুঁড়িয়ে চলছে দেড় হাজার কোটি টাকার হাসপাতাল। চিকিৎসার জন্য রোগীদের হাহাকার থাকলেও কাজে আসছে না এ হাসপাতাল।

সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের কেবিনে ৪৫ জন আর ওয়ার্ডে মাত্র ৪৫ জন রোগী ভর্তি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিএমইউ সূত্র জানিয়েছে, ভুল ব্যবস্থাপনা, জনবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চাহিদার ৮৯ শতাংশ কম জনবল দিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে গড়ে ওঠা বিশেষায়িত এ হাসপাতাল। অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ খরচ হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০৩ রকমের ৬ হাজার ৬১২টি চিকিৎসাযন্ত্র কেনা হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকায়। এসব যন্ত্রপাতি ২০২২ সালের আগস্ট ও ডিসেম্বরে দুই ধাপে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করে দক্ষিণ কোরিয়ান বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। যন্ত্রগুলো সেবার উপযোগী থাকলেও জনবল না থাকায় ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি এক দিনও ব্যবহার হয়নি। এসব যন্ত্রের সর্বোচ্চ মেয়াদ রয়েছে তিন বছর। ফলে ব্যবহারের আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জনবল সংকটের সমাধান না হলে যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণে নতুন করে টাকা খরচ করতে হবে সরকারকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মে-জুনে নিয়োগে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতর্কের কারণে জটিলতা তৈরি হলে থেকে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। হাসপাতালে সেবা দিতে পাঁচ দফায় ১৬০ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে যুক্ত হয়েছেন মাত্র ৩২ জন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রশিক্ষণই বন্ধ করে দিয়েছে কোরিয়া। নিয়োগ থেকে শুরু করে হাসপাতালের ফার্মেসি দরপত্রে পর্যন্ত ঘটেছে দুর্নীতির ঘটনা। হাসপাতাল পুরোদমে চালু হতে জনবল সংকট মূল সমস্যা। ৭৫০ বেডের হাসপাতালে জনবল লাগে ২৭০০ এর বেশি। কিন্তু এ হাসপাতালে নিয়োগকৃত ২১১ জন ও বিএমইউ থেকে আসা কয়েকজনসহ ৩০০ জনের মতো জনবল আছে। আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ, হেপাটোবিলিয়ারি, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট, কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সব জায়গাতে জনবল সংকট। দীর্ঘ দিন ধরে জনবল সংকট নিয়ে আলোচনা হলেও মিলছে না সমাধান।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. মো. শহিদুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে জনবল আছে তা দিয়ে আমরা হাসপাতাল চালানোর চেষ্টা করছি। আগের চেয়ে সেবায় গতি এসেছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩০০ জনের মতো রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। ২০ শয্যার আইসিইউ, ১০টি অপারেশন থিয়েটার চালু করা হয়েছে। আগে হাসপাতালে রোগীদের সেবার মাধ্যমে মাসে দেড় কোটি টাকা আয় হতো এখন আয় বেড়ে আড়াই কোটি টাকায় পৌঁছেছে।’ কিডনি, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ বিশেষায়িত সেবা কবে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইনি জটিলতায় কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট আটকে আছে। অন্য সেবা চালু করতে জনবল প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় থেকে জনবল নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলে হাসপাতাল পুরোদমে চালু করা যাবে।’