
একদিকে এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে বদলি, বাধ্যতামূলক অবসর ও বরখাস্ত আতঙ্ক। অন্যদিকে বিশাল আকারের রাজস্ব টার্গেট। আবার সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের রেকর্ড পরিমাণ ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি সংস্থাটিকে এক বড় ধাক্কার মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ জন্য সৎ, দক্ষ কর্মীদের নির্ভয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত সপ্তাহে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। অর্থবিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, বড় ধাক্কা নিয়ে শুরু করা নতুন অর্থবছর ২০২৫-২৬ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জন্য (এনবিআর) মোটেও সুখকর হবে না আশঙ্কা করছে অর্থবিভাগ। একই সঙ্গে রাজস্বের বড় অঙ্ক তাড়া করতে নেওয়া হয়েছে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। এনবিআর বলছে, ১ কোটি মানুষকে করের আওতায় আনা হবে চলতি বছরই। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাসে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা, যা এযাবৎকালের রেকর্ড।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের দেওয়া শর্ত আবার মনে করিয়ে দিয়ে বলেছে, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ চালুর সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে যারা আন্দোলনে নেমেছিলেন তারা এখনো চরম আতঙ্কিত। এমনকি এনবিআরের সংস্কারবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা এখনো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে মনে করে অর্থবিভাগ। এ জন্য মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। যারা দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাবেন তাদেরই কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। ওই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে যে কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটি এ বিষয়টিও দেখভাল করবে বলে জানা গেছে।
বিদায়ি অর্থবছরের জুলাই গণ অভ্যুত্থানের কারণে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস ব্যবসাবাণিজ্য অচল ছিল। আবার বছরের শেষ মাস জুনে এনবিআরের আন্দোলনের কারণে বড় ধরনের ঘাটতির মুখে পড়েছে দেশের প্রধান রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটি। এ জন্য চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। অবশ্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১৫ দিন রাজস্ব আদায়ের অবস্থা মোটেও সুখকর নয় বলে জানিয়েছে এনবিআর। গত অর্থবছরে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ার প্রধান দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো জুলাই আন্দোলন এবং এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন। তবে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণেই মূলত বেশি ঘাটতি হয়েছে বলে মনে করে অর্থবিভাগ। কেননা অর্থবছরের শেষ দুই মাসে ১ লাখ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। কিন্তু আন্দোলনের কারণে এ বছর তা হয়নি। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা, যা ওই দুই মাসের লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। আবার আগের অর্থবছরের জুলাই-আগস্টের চেয়েও সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছিল। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষে বা পরের বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আন্দোলন সংগ্রাম কর্মসূচি আরও বাড়বে। যার একটা বড় ধরনের প্রভাব পড়বে ব্যবসাবাণিজ্যের ওপর। এতে করে রাজস্ব আদায় কম হতে পারে। সে কথাও মাথায় রাখছে সরকার। এজন্য চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর সংশ্লিষ্টদের সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন করদাতার অনুসন্ধান কার্যক্রম শক্তিশালী করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।