
সারা দেশের সড়ক ও মহাসড়ক থেকে ৭৫ হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ধাপে ধাপে সরকার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই সড়কে শৃঙ্খলা আনতে কাজ শুরু করে। গত বছরের অক্টোবরে বলা হয় মে থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। যদিও ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময়ের ২ মাস অতিবাহিত হয়েছে। নানামুখী সমালোচনা ও সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ২০ জুলাই থেকে রাত ও দিনে সমানতালে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তারা জানান, সরকার নির্ধারিত ইকোনমিক লাইফ মেয়াদ পার করে ফেলা বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের মোটরযান সড়কে চলাচল বন্ধে সারা দেশে একযোগে অভিযান চালাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এই অভিযান পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা দেবে-জেলা প্রশাসন, পুলিশ, মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনগুলো।
বিআরটিসংশ্লিষ্টরা জানায়, সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮-এর ধারা ৩৬ অনুযায়ী, বাস ও মিনিবাসের জন্য ইকোনমিক লাইফ ২০ বছর এবং ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ অন্যান্য মালবাহী মোটরযানের জন্য ২৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মেয়াদ অতিবাহিত হলে সংশ্লিষ্ট যানবাহন আর সড়কে চলাচল করতে পারবে না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ বাস, মিনিবাস, ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহন রয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২০ বছরের পুরোনো বাস ও মিনিবাস রয়েছে ১০ হাজার ৫৫৬টি। এর বাইরে সারা দেশে আরও ১৮ হাজার ২০৫টি বাস ও মিনিবাস রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় ২৫ বছরের পুরোনো পণ্যবাহী যানবাহন অর্থাৎ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংকলরির সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৮৩। এর বাইরে সারা দেশে আরও ৩১ হাজার ৭৯৮টি পণ্যবাহী মোটরযান রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হওয়া এসব মোটরযান সড়কে দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ। গত বছরের অক্টোবরে ৬ মাস সময় বেঁধে দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ এসব যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার। বাস্তবতা হলো, সরকারি ঘোষণা তোয়াক্কা না করেই সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসবিহীন গণপরিবহণ; পরিবহণ সেবার মানেও আসেনি কোনো পরিবর্তন। এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন সরকার। যদিও পরিবহণ মালিকদের চাপে ৩ মাস পর প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়। এবার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা দেখতে আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।
এ বিষয়ে বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট শাখার উপপরিচালক মো. হেমায়েত উদ্দিন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, পরিবহণ মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে সারা দেশে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমকে বিষয়টি গুরুত্বসহ প্রচার ও কাভারেজের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম যুগান্তরকে বলেন, সরকার পরিবেশ দূষণের নামে সড়ক থেকে একযোগে ৭৫ হাজার বাস, মিনিবাস, ট্রাক এবং ক্যাভার্ড ভ্যানসহ মোটরযান সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ সুখকর হবে না। এখানে অনেক গরিব মালিকও রয়েছেন, তারা খুবই সমস্যায় পড়বেন। এরচেয়ে বড় বিষয় হলো যানবাহণের সংকট তৈরি করবে।
তিনি জানান, সরকারের সঙ্গে তাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। পরিবহণের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল আরও ৫ বছর বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কোন কোন গাড়ি পরিবেশ দূষণ করছে, সেসব যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। আলোচনা চলছে, যদি সরকার তাদের দাবি না শোনে, তাহলে ২০ জুলাই সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির বৈঠকের পর তারা সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।
বিষয়টি সম্পর্কে সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ঈদুল আজহার আগে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ঈদের (আসন্ন ঈদুল আজহা) সময়টা একটু দেখতে চান। এখন তারা সীমিত পরিসরে পুরোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন। ঈদের পর বড় আকারে অভিযান শুরু হবে। ঈদের সময় মানুষের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের একটা বিষয় আছে।’
এর আগে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছিলেন-সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ এসব যান সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে উদ্যোগী হন। আর মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি সরিয়ে নিতে মালিকরা ৬ মাস সময় পাবেন। এ সময়ের পর সড়কে আর এসব গাড়ি চলতে পারবে না। মালিকদের দেওয়া ৬ মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে এপ্রিলে।
এ বিষয়ে গত বছরের ৬ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বায়ুদূষণ কমাতে ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস ও মিনিবাস এবং ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান রাস্তা থেকে প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) অনুরোধ জানানো হয়।