
বগুড়ায় আদালতে সঠিক সাক্ষ্য না দেওয়া , সাক্ষ্য দিতে হাজির না হওয়া এবং সরকারি আইন কর্মকর্তাদের দুর্বলতার কারণে গত এক বছরে ৬ শতাধিক মাদক মামলায় প্রায় ১ হাজার আসামি খালাস পেয়েছেন । এর মধ্যে ২২ টি মামলায় ৪৪ জন পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি । এ কারণে ৪৪ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলবের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি তদন্তকারী কর্মকর্তা ( আইও ) ও মামলার বাদীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
বগুড়ার আদালত সূত্র বলেছে , এই জেলায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪ টি মাদক মামলায় রায় ঘোষণা করা হয় । এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫১ জন । এর মধ্যে ৬৬৫ টি মামলায় পুলিশ সাক্ষী হাজির না হওয়া এবং হাজির হলেও সঠিক সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণে অভিযোগ খারিজ হয়ে যায় । ফলে এসব মামলায় ৯৩৬ আসামিকে আদালত খালাস দিয়েছেন । মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এই মামলাগুলোর এজাহারকারী বগুড়ার মাদক মামলা ও তদন্তকারী কর্মকর্তা ( আইও ) ছিলেন পুলিশ, র্যাব এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ।
আদালত পুলিশের পক্ষ থেকে বগুড়ার পুলিশ সুপারের ( এসপি ) কাছে পাঠানো মাদক মামলায় খালাস - সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে , ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানায় পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে করা ১ হাজার ৪ টি মামলার মধ্যে ২২ টির বাদী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ( আইও ) আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেননি । কিছু মামলায় জব্দ তালিকা তৈরি করে সাক্ষী হাজির হলেও তাঁরা সঠিক সাক্ষ্য দেননি ৷
প্রতিবেদনে আসামি খালাসের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে , মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেননি । জব্দ তালিকার সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি , আবার কেউ হাজির হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে এলোমেলো সাক্ষ্য দিয়েছেন । অনেকে এজাহারের সমর্থনে সাক্ষ্য দেননি । এসপির কাছে এই প্রতিবেদন দাখিলের পর ১ জুলাই পুলিশ ২২ টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ( আইও ) এবং জব্দ তালিকাকারীদের ( বাদী ) ব্যাখ্যা তলবের নির্দেশ দেওয়া হয় ।
এ বিষয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ আদালতের রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না । ’ পুলিশের গাফিলতির কারণে আসামি খালাস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে — এমন প্রশ্নে তিনি বলেন , ‘ এটি অভ্যন্তরীণ বিষয় ।
আমরা এসব নিয়ে পর্যালোচনা করছি । ' বগুড়া জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ( পিপি ) আব্দুল বাছেদ বলেন , মাদক মামলার প্রায় ১ হাজার আসামি খালাস পাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক । তবে এ মামলাগুলোর অধিকাংশের রায় হয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় । এখানে পুলিশ ছাড়াও মামলাকারী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাদের গাফিলতির পাশাপাশি সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইন কর্মকর্তার দুর্বলতা ছিল ।
তিনি আরও বলেন , ‘ গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও তাদের নিযুক্ত আইন কর্মকর্তারা ছিলেন ২২ অক্টোবর পর্যন্ত । আমরা ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব মামলায় আসামি খালাস হয়েছে , অনেক আগেই সেগুলোর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং শুনানি শেষ হয়েছে , যে কারণে আমাদের কিছু করার ছিল না । '