Image description
ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে তিন বিষয়ে ফেল ২৫ শিক্ষার্থী

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে উদ্ভূত ভুলের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিভ্রান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।  ঠাকুরগাঁওয়ে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে তিন বিষয়ে ফেল করেছেন ২৫ শিক্ষার্থী। নড়াইলে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে অন্য বিষয়ে ফেলের ঘটনা ঘটেছে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় ৫০ নম্বরের পরিবর্তে ২৫ নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করায়, বগুড়ায় ৮৮৩ শিক্ষার্থীর ফল সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর যোগ না হওয়ায় চাঁদপুরে এক মাদ্রাসার ২৫ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর না পাঠানোয় যশোরে এক কেন্দ্রের ৪৮ জন ফেল আসে, পরে সংশোধিত ফলাফলে সবাই পাশ করেছে। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ধর্ম বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে কৃষিতে ফেল করেছে এক শিক্ষার্থী।

গত ১০ জুলাই ফল প্রকাশের তিন দিন পর যশোর, বগুড়া, চাঁদপুর, ঠাকুরগাঁও এবং নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ফলাফল সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোকে। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এবার এসএসসি ও সমমানে ৬ লাখ ৬৬০ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। বিগত বছরের তুলনায় এটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। সাধারণত প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ লাখ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। তাহলে এ বছর এই বিশাল সংখ্যক ফেল কোথা থেকে এল? অনেক শিক্ষার্থীর রেজাল্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কেউ কেউ একটি বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে, অথচ অন্য একটি বিষয়ে হঠাত্ ফেল দেখানো হয়েছে। কারো কারো মার্কশিটে পুরো এ প্লাস, কিন্তু একটি সাবজেক্টে ফেল দেখা যাচ্ছে, যা স্পষ্টভাবে অস্বাভাবিক। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষার সংস্কার না করে রেজাল্টের সংস্কার করায় এ বছর ফেলের হার বেশি। তাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। এদিকে ফল প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন জেলার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের অনিয়ম, ভুল ও বিভ্রাটের ঘটনা সামনে এসেছে।

যশোরের পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবার ৩২৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায়, এই ৪৮ জন শিক্ষার্থীর সবাই রসায়ন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। পরে তদন্তে জানা যায়, কেন্দ্র থেকে রসায়ন বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর বোর্ডে পাঠানো হয়নি। ফলে তাদের ফলাফল অসম্পূর্ণ ছিল। কেন্দ্র সচিব মো. খানজাহান আলী যশোর শিক্ষা বোর্ডে লিখিতভাবে ফল সংশোধনের আবেদন করেন। রবিবার সংশোধিত ফল প্রকাশের পর ঐ ৪৮ জন সবাই কৃতকার্য হয়। বগুড়া জিলা স্কুল কেন্দ্রের ৮৮৩ শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ৫০ নম্বরের পরিবর্তে ২৫ নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে ফল পাঠানো হয়। এতে শিক্ষার্থীদের অনেকেই কম নম্বর পায় বা ফেল করে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বিক্ষোভের মুখে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ফল সংশোধনের নির্দেশ দেয়। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়, সংশোধিত নম্বর যুক্ত করে দ্রুত নতুন ফল প্রকাশ করা হবে। কেন্দ্র সচিব এ ঘটনায় ‘কারিগরি ত্রুটি’র কথা স্বীকার করেছেন।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মজিদিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ভোকেশনাল শাখার সব শিক্ষার্থী ফেল করেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট ট্রেইনিং’ বিষয়ের ব্যবহারিক নম্বর বোর্ডে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠানো হয়নি। ২৫ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল এই ভুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৫ জন শিক্ষার্থী এবার শুধু গণিত বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। তবে ফলাফলে দেখা যায়, তারা গণিতের সঙ্গে আরো দুটি বিষয়ে ফেল করেছে-যেগুলোতে তারা গত বছর পাশ করেছিল। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানানো হলেও কোনো সমাধান মেলেনি। জেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা বলেছেন।

নড়াইলের লোহাগড়ায় লক্ষ্মীপাশা আদর্শ বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রোমান মোল্যা এ বছর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বিষয়ে পাশ করলেও ফলাফলে দেখা যায়, সে ‘কৃষি শিক্ষায়’ ফেল করেছে- যে বিষয়ে সে এ বছর পরীক্ষা দেয়নি। তিন বছর আগে কৃষি শিক্ষায় পাশ করার রেকর্ড থাকার পরও ফলাফলে এই ভুল দেখা দিয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোর্ডে যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গোলাম নবী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ছাত্র শিশির চন্দ্র মনিদাস। তিনি গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ধর্ম বিষয়ে অকৃতকার্য হন। সেই ভুল শুধরাতে ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় শুধু ধর্ম বিষয়ে অংশ নেয় মনিদাস। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, ধর্মে তিনি উত্তীর্ণ হলেও কৃষি বিষয়ে ফেল। গত বছর শিশির কৃষি বিষয়ে পাশ করেছিল এবং এ বছর ঐ বিষয়ে পরীক্ষা দেয়নি।

বোর্ডগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন : উল্লিখিত এসব ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে এতগুলো অনিয়ম একই সময়ে এতগুলো বোর্ডে ঘটে গেল। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বোর্ডে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে অন্য বোর্ডগুলোর অনুরোধে টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলোকে আরো যত্নবান হতে হবে, যাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল ভবিষ্যতে না ঘটে।