
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্বৈরাচার সরকার গত বছরের জুলাইয়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার পর অনেকে ভেবেছিল আন্দোলন হয়তো থেমে গেছে। কিন্তু ঠিক তখনই রাস্তায় নেমে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। জুলাই অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবদান স্বীকার করে আজ ১৮ জুলাই ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধ দিবস’ পালন করছে সরকার। আজ সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরঝিল অ্যাম্পিথিয়েটারে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো প্রদর্শন করা হবে।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী শহীদ হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও কয়েক শতাধিক। ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পরে এসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই বলছেন, যে বৈষম্যবিরোধীর চেতনা থেকে তারা তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সেই বৈষম্য এখনো রয়েছে গেছে। তারা বলছেন, আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ত্যাগ, অবদান সবাই স্বীকার করে। কিন্তু এর ফল দেওয়ার সময় বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের। তাদের প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।
তথ্যমতে, ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের জুলাইয়ের শুরু থেকেই শিক্ষাঙ্গন উত্তাল হতে শুরু করলে কঠোর হতে শুরু করে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরতদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসের দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ১৬ জুলাই পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি শুরু করলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এরপর ছাত্ররা আরও ফুঁসে ওঠেন স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে। ছাত্র আন্দোলন দমাতে সেদিন রাতেই স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার সারা দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে বন্ধ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য কলেজ। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকার। আন্দোলন থামাতে শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয় আবাসিক হল ত্যাগেরও। তখন আন্দোলন মোড় নেয় ভিন্ন দিকে। জোরেশোরে মাঠের আন্দোলনে নামে সারা দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ, বাড্ডা, নতুন বাজার, বসুন্ধরা গেট, উত্তরা, আশুলিয়া, ধানমন্ডি, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হলে পুরো রাজধানী অচল হয়ে যায়। আন্দোলন হয় ঢাকার বাইরেও। এ আন্দোলনে যোগ দেয় শিশু, কিশোর, শ্রমজীবী, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। আন্দোলন দিন দিন গতি পেতে থাকলে ছড়িয়ে যায় সারা দেশে। দেশের সর্বত্র সাধারণ মানুষ স্বৈরাচার হাসিনার পতন আন্দোলনে রাস্তায় নামে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের মধ্য দিয়ে পতন হয় তার নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচার সরকারের।