Image description
 

রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে এখনো ফ্যাসিবাদীরা বসে আছে— এই অভিযোগ বিভিন্ন মহলের। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ রাষ্ট্রীয় সংস্থা আবহাওয়া দপ্তর। জুলাই বিপ্লবের এক বছর পরও সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বিগত স্বৈরাচার পলাতক শেখ হাসিনার দুটি ছবি ঝুলছে। ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে পলাতক শেখ হাসিনার নানা গুণগানের কথা। সেইসঙ্গে মুজিব বন্দনাও রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও রাষ্ট্রীয় সংস্থা আবহাওয়া দপ্তরে হাসিনার ছবি এবং মুজিব বন্দনা বহাল থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা।

 

বৃহস্পতিবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থা আবহাওয়া দপ্তরের ওয়েবসাইটের ঢুকে দেখা যায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুটি ছবি ঝুলছে। হাসিনার ছবির নিচে লেখা ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’।

 

ওয়েবসাইটের অধিপ্তরীয় অর্জন শিরোনামের এই আইকনে ঢুকলে ‘বিগত ১২ বছরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের অর্জন’ নিবন্ধের পঞ্চম পৃষ্ঠায় লিখা আছে— ‘মাননীয় প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডব্লিউএমও কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।’ লেখার নিচে হাসিনার ছবি ঝুলছে। ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে— চিত্র: ডব্লিউএমও কংগ্রেসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগদান।

এরপরের পৃষ্ঠায় জলবায়ু সংক্রান্ত একটি পোস্টারেও রয়েছে হাসিনার ছবি। সেখানে লেখা রয়েছে—মাননীয় প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১১ মে ২০১১ তারিখে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ১৬তম কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।

 

Hasina 1

 

এখানেই শেষ নয়, নিবন্ধের ১১তম পাতায় মুজিব বন্দনাও রয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে মুজিববর্ষ নিয়ে আয়োজিত নানা অনুষ্ঠানের কথা। তাতে লেখা আছে- মুজিববর্ষ ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়: ক) 'মুজিব জন্মশত বার্ষিকী' উপলক্ষ্যে গৃহীত। বিভিন্ন কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন। খ) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আওতাধীন অফিসসমূহে বৃক্ষ রোপন এবং বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ও পরিবেশ বান্ধব কর্মসচি পালন। গ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন এবং রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন। ঘ) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে মুজিব কর্নার স্থাপন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন।

অভিযোগ রয়েছে, রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করা যায় না। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকলেও এই দপ্তরের পরিচালকসহ কোনো কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর ওয়েবসাইটে নেই। ফলে অফিস সময়ে শুধু সরকারি ফোনে কথা ছাড়া দিনের অন্য সময়ে প্রয়োজনেও কেউ যোগাযোগ করতে পারেন না।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও রাষ্ট্রীয় সংস্থা আবহাওয়া দপ্তরের ওয়েবসাইটে বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ছবি এবং মুজিব বন্দনা বহাল থাকার বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দ্বায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত দুটি ফোন নম্বরের একটি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যস্ত পাওয়া যায় এবং অন্যটি রিসিভ হয়নি। পরে দৈনিক আমার দেশ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করার কথা একজন আবহাওয়াবিদের মাধ্যমে পরিচালককে জানানো হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে না পেরে বৃহস্পতিবার বিকালে কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হকের কাছে পরিচালকের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর চাওয়া হলে তিনি পরিচালকের মোবাইল নম্বর স্পর্শকাতর বলে উল্লেখ করে অপরাগতা এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি পরে অফিস সময়ে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

এর কয়েকদিন আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ফোন দিয়ে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলামের কাছে একজন সিনিয়র আবহাওয়াবিদের মোবাইল নম্বর জানতে চাইলে তিনি নম্বর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

প্রয়োজনে আবহাওয়া দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ দুঃসাধ্য, এ বিষয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিভিন্ন মহলের। এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনলাইন শাখায় কর্মরত সাংবাদিক কামাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হলেও দপ্তরটির পরিচালকসহ কোনো সিনিয়র কর্মকর্তাকে প্রয়োজনে পাওয়া যায় না। সরকারি অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকলেও এই দপ্তরের কারও মোবাইল নম্বর দেওয়া নেই। এমন কি বিশেষ প্রয়োজনেও যোগাযোগের জন্য কর্তব্যরতদের কাছে পরিচালকসহ সিনিয়র কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর চাওয়া হলেও স্পর্শকাতর বলে দেওয়া হয় না। একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব যখন সিটিজেন চার্টার বাস্তবায়নে তৎপর, সেইসময়ে আবহাওয়া দপ্তরের এমন আচারণ সত্যিই দুঃখজনক।

এছাড়া জুলাই বিপ্লবের এক বছর পরও রাষ্ট্রীয় সংস্থা আবহাওয়া দপ্তরের এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যেখানে বিভিন্ন দপ্তর ও ওয়েবসাইট থেকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও মুজিব বন্দনার সবকিছু সরিয়ে ফেলা হয়েছে সেখানে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ওয়েবসাইট এগুলো প্রদর্শন করা সরকারি আদেশের সরাসরি লঙ্ঘন। যারাই এর সঙ্গে জড়িত সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তার দপ্তরের ফোন রিসিভ করে বারবার জানানো হয় স্যার গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন।