Image description

খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের লতিবান এলাকায় রথযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় ঘুরতে গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া এক কিশোরী। বয়স ১৩ বছর। গত ২৭ জুন রাতে বাড়ি না ফিরে কাকাবাড়িতে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। সেই নিরাপদ আশ্রয়েই গভীর রাতে হানা দেয় ছয় যুবক।  কিশোরীর কাকাতো ভাইকে বেঁধে রেখে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়ও তারা।

ভয়ে ভীত মেয়েটি বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলেনি এতদিন।  পরে ১২ জুলাই সকালে কাউকে কিছু না বলে  বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান একটু সুস্থ হলে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন মা-বাবা কিশোরীকে বারবার জিজ্ঞেস করার কথা বলতে না পারায় বিষয়টি সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হতে পারে নি। দ্বিতীয়বারের মতো আবার অচেতন হয়ে যায়। অবস্থা অবনতি হলে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে বাসায় নিয়ে গিয়ে ১৬ জুলাই অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হয়। বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে আবার কিশোরীর অবস্থা অবনতি হলে তৃতীয়বারের মতো খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিশোরীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই খাগড়াছড়ি সদর, ভাইবোনছড়া ও আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেন অনেকে।

ভুক্তভোগীর বাবা বুধবার মধ্যরাতে ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বুধবার রাত আড়াইটার দিকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকি ২জন পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আরমান হোসেন (৩২), সদস্য ইমন হোসেন (২৫),এনায়েত হোসেন (৩৫),ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সাদ্দাম হোসেন (৩২)। পলাতকরা হলের ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদা মো. সোহেল ইসলাম।

সদর থানার ওসি মো. আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, “চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে গিয়ে কিশোরীর খোঁজখবর নেন এবং তার পরিবারের হাতে এক লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা তুলে দেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার বলেন, “এই ছয়জন আমাদের কেউ নয়। অপরাধী যেই হোক, তার বিচার হওয়া উচিত। আমরাও সুষ্ঠু বিচার চাই।”

সঙ্গে ছিলেন সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, অনিমেষ চাকমা রিংকু, হাসেম ভূঁইয়া, কমল বিকাশ ত্রিপুরা, আনিসুল আলম আনিক প্রমুখ।

জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মঞ্জিলা সুলতানা ঝুমা বলেন, “ভিকটিমের বয়স মাত্র ১৩ বছর। আমরা মর্মাহত। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

ডব্লিউআরএন প্রতিনিধি নমিতা চাকমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী নিপীড়নের পথ সুগম করছে। এই অবস্থার অবসান জরুরি।”

এটি শুধুমাত্র একটি মামলা নয়, এটা সমাজের জন্য একটি কঠিন বার্তা। প্রশ্ন উঠছে—রাষ্ট্র কোথায়? আইনের শাসন কোথায়? একটি কিশোরী যদি একটি মেলায় গিয়েই এমন ভয়াবহতার শিকার হয়, তবে নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ কী?