Image description

জাহিদুল হক খান ও রওনক জাহান দম্পতি পেশায় আইনজীবী। তাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যেতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁরা বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

আইনজীবী জাহিদুল বলেন, কানাডায় দুজনের শিক্ষার্থী ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তাঁরা প্রতিষ্ঠানটিকে ১৭ লাখ করে মোট ৩৪ লাখ টাকা দেন; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আর ভিসার ব্যবস্থা করে দেয়নি। ভিসা না পেয়ে তাঁরা টাকা ফেরত চান। তবে প্রতিষ্ঠানটি টাকা ফেরত দেয়নি।

প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জাহিদুল-রওনক দম্পতিসহ মোট ১৮ ব্যক্তির পক্ষে গত ৫ মে রাজধানীর গুলশান থানায় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির অন্য কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়।

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান বাশার গ্রেপ্তার

 

আইনজীবী জাহিদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মতো অনেকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের প্রতারণার শিকার। আমরা আমাদের কষ্টের টাকা ফেরত চাই।’

মামলাটি তদন্ত করছেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।’

বাশার গ্রেপ্তার

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গতকাল সোমবার বাশারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আবুল কালাম আজাদ এক বার্তায় জানান, মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে বাশারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৪১ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর কথা বলে ১৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত ৪ মে গুলশান থানায় বাশারের বিরুদ্ধে মামলাটি করে সিআইডি। মামলার বাদী সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

মামলায় অভিযোগ, বাশার, তাঁর স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তাঁরা ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিস্তর অভিযোগ

সিআইডি বলছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাশার তাঁর স্ত্রী রওশন ও ছেলে আরশকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্রতারণা চক্র গড়ে তোলেন। চক্রটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, স্কলারশিপ, ভিসা প্রক্রিয়াকরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা করেছেন।

রাজধানীর গুলশান থানা এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে বাশারের বিরুদ্ধে অন্তত ১০০ ব্যক্তির মামলার তথ্য জানা গেছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব মামলা হয়। এসব মামলায় বাশারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাশারের বিরুদ্ধে গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে একের পর এক মামলা হচ্ছে। অনেক মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।

‘টাকা ফেরত চাই’

শরীয়তপুরের আমির হোসেন ঢাকায় থাকেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ককে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। তাঁকে কানাডার ভিসার ব্যবস্থা করার কথা ছিল; কিন্তু ভিসার ব্যবস্থা করেনি প্রতিষ্ঠানটি। টাকাও ফেরত দেয়নি।

গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর আমির হোসেনসহ ২৩ জন বাশারের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে ভিসা হবে, আমি কানাডায় উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে পারব; কিন্তু বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক আমার ভিসার ব্যবস্থা করতে পারেনি। আমি বিদেশেও যেতে পারিনি। আমি জমি বিক্রি করে ১৩ লাখ দিয়েছি। আমার মতো আরও অনেকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। আমরা আমাদের কষ্টের টাকা ফেরত চাই। প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

জান্নাতুল ফেরদৌস নামের আরেক শিক্ষার্থী গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাশার ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। জান্নাতুলের অভিযোগ, শিক্ষার্থী ভিসায় তাঁকে কানাডায় পাঠানোর কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উল্লিখিত মামলায় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের মহাব্যবস্থাপক আবু জাহিদ গ্রেপ্তার হন গত বছরের ১১ ডিসেম্বর। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আদালত থেকে জামিন পান।

আবু জাহিদের আইনজীবী রুবায়েত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে। অনেক শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আর যাঁরা বিদেশে যেতে পারেননি, তাঁদের টাকা ফেরত দেবে তারা।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাশারকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে বলে জেনেছি। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে গুলশান থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কতগুলো মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, তা খোঁজ নিচ্ছি।’